মহাসড়ক ধসে রপ্তানি বন্ধ, দিশেহারা কাশ্মীরের আপেল চাষিরা

পুরো বছরের উপার্জন হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় দিশেহারা জাভিদ আহমাদ ভাট। প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলারের আপেলবোঝাই তার দুটি ট্রাক ভারতশাসিত কাশ্মীরের বারামুল্লাহ শহরের মহাসড়কে দিনকে দিন পচে যাচ্ছে।
এ সড়কই শহরের সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম। কয়েক কিলোমিটারজুড়ে সারি সারি ট্রাক আটকে আছে এখানে। ত্রিপলঢাকা ট্রাকের ভেতরের কাঠের ক্যারেটের আপেল ইতোমধ্যে কালচে হয়ে পচতে শুরু করেছে।
জম্মু–শ্রীনগর জাতীয় মহাসড়কটি ২৪ আগস্ট থেকে বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। টানা বর্ষণে ভূমিধসের কারণে এর একটি অংশ ধসে পড়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রবল বৃষ্টিতে অন্তত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে; ঘরবাড়ি, সড়ক ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।
কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো ফল ও ফসল। প্রতি বছর উপত্যকাটিতে ২ থেকে ২.৫ কোটি মেট্রিক টন আপেল উৎপাদিত হয়, যা ভারতের মোট আপেল উৎপাদনের প্রায় ৭৮ শতাংশ। স্থানীয় ভাষায় ফসল কাটার মৌসুমকে বলা হয় 'হারুদ'।
জাভিদ আহমাদ ভাট বলেন, 'এই বিপর্যয়ের কারণে পুরো কাশ্মীরের আপেলচাষিরা সংকটে পড়েছেন। আমাদের জীবিকা পুরোপুরি এই ফসলের ওপর নির্ভরশীল।'
তিনি আরও জানান, গত এপ্রিলে পাহালগামে হামলায় ২৮ জন নিহত হওয়ার পর পর্যটন খাত বিপর্যস্ত হয়েছিল। সেই ক্ষতির পর এবার আপেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়া অঞ্চলের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বড় আঘাত।
এই সংকট ঘিরে সোমবার ও মঙ্গলবার (১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর) কাশ্মীরজুড়ে ফলচাষিরা বাজার বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন। তারা সরকারের অক্ষমতার তীব্র সমালোচনা করেন।
শ্রীনগর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বারামুল্লাহ জেলার সোপোর এশিয়ার বৃহত্তম ফলবাজার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু মঙ্গলবার বাজারটির চিত্র ছিল হতাশাজনক। দিন যত গড়িয়েছে, আপেলের দাম ততই পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, একটি ক্যারেটের দাম ইতোমধ্যে ৭ ডলার থেকে নেমে ৫ ডলারে ঠেকেছে।
সংকট মোকাবিলায় কাশ্মীরের প্রশাসনিক প্রধান মনোজ সিনহা সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বুদগাম স্টেশন থেকে দিল্লিগামী একটি বিশেষ ট্রেন চালুর ঘোষণা দেন। তবে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এটি মূলত যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত একটি পার্সেল কোচ, পূর্ণাঙ্গ মালবাহী ট্রেন নয়। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২৩–২৪ টন পণ্য বহন করা সম্ভব এ কোচে।
চাষিদের অভিযোগ, এ ব্যবস্থা কিছুটা স্বস্তি দিলেও সংকট সমাধানে যথেষ্ট নয়। কারণ, কাশ্মীরে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ টন আপেল উৎপাদন হয়।
এদিকে আঞ্চলিক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, 'যদি কেন্দ্রীয় সরকার মহাসড়ক সচল রাখতে না পারে, তবে এর নিয়ন্ত্রণ আমাকে হস্তান্তর করা উচিত।' তবে ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়কবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ সমম্যার দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু এসব আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না ট্রাকচালক শাবির আহমদ। প্রতিদিন সকালে তিনি তার গাড়িতে উঠে পচতে থাকা আপেল ক্যারেট পরীক্ষা করেন।