শেক্সপিয়ারের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক মোটেই খুব খারাপ ছিল না, যাননি স্ত্রীকে ছেড়েও; জানা গেল চিঠিতে

নতুন এক গবেষণায় জানা যায়, আগে যেমনটি ভাবা হতো; উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ও তার স্ত্রী অ্যান হ্যাথওয়ের সম্পর্ক সম্ভবত তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো ছিল। খবর বিবিসি'র
১৫৮২ সালে শেক্সপিয়ার হ্যাথওয়েকে বিয়ে করেন এবং তাদের তিনটি সন্তান হয়। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মনে করা হতো, শেক্সপিয়ার লন্ডনে পাড়ি জমানের সময় তার স্ত্রীকে স্ট্রাটফোর্ড-আপন-এভনে রেখে গিয়েছিলেন।
এছাড়া, তার উইলে স্ত্রীকে প্রায় কিছুই না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকেও ধারণা করা হয়, তিনি হয়তো তার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করতেন।
তবে 'প্রিয় মিসেস শেক্সপিয়ার' সম্বোধন করে লেখা একটি চিঠির খণ্ডাংশ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৬০০ থেকে ১৬১০ সালের মধ্যে তারা লন্ডনে একসঙ্গে বসবাস করতেন।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্টেগল এই গবেষণা চালিয়েছেন।
চিঠিটি হেরেফোর্ডে একটি বইয়ের মলাটের মধ্যে সংরক্ষিত অবস্থায় ছিল। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, শেক্সপিয়ার জন বাটস নামে এক অনাথ ছেলের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দেননি। সেই কারণেই মিসেস শেক্সপিয়ারের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক স্টেগল বলেন, 'এই চিঠিটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৮ সালে এবং তখন থেকেই এটির কথা সবাই জানতো। তবে এতদিন কেউই এতে উল্লিখিত নাম বা স্থানগুলো শনাক্ত করতে পারেননি। এছাড়া, এই 'মিস্টার শেক্সপিয়ার'-যে নিশ্চিতভাবে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, নিশ্চিতভাবে এ কথা বলার মতো কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি। কারণ এটা একই সময়ে থাকা শেক্সপিয়ার নামের অন্য কোনো মানুষও হতে পারতেন।'
অধ্যাপক স্টেগল বলেন: 'তাই এটি মূলত শেক্সপিয়ার দম্পতির বৈবাহিক জীবন এবং লন্ডনের সঙ্গে শেক্সপিয়ারের যোগাযোগের প্রমাণ।'
তিনি বলেন, 'আর যদি চিঠির পেছনের লেখাটি এই চিঠিরই জবাব হয়, তাহলে এটি সম্ভবত অ্যান হ্যাথাওয়ের নামে শনাক্ত করা প্রথম কোনো লেখার নিদর্শন। হতে পারে এটি অ্যান হ্যাথওয়ের নিজের হাতে লেখা ।'
অধ্যাপক স্টেগল আরও বলেন, 'এটি একই সঙ্গে দুইটি চিঠি। একটি শেক্সপিয়ার বা তার পরিবারের উদ্দেশে লেখা হয়েছে, আরেকটি হলো চিঠির উল্টোপাশে তাদের পক্ষ থেকে পাঠানো জবাব।'

তিনি বলেন: 'এখন পর্যন্ত শেক্সপিয়ার এবং তার পরিবারের উদ্দেশ্যে লেখা বা তাদের পক্ষ থেকে পাঠানো একমাত্র চিঠি এটি। তবে এই চিঠিটি শেক্সপিয়ারের লন্ডন জীবনযাত্রার অজানা একটি দিক তুলে ধরে এবং এতে তার ট্রিনিটি লেনে বসবাস সসম্পর্কেও জানা গেছে।'
তিনি আরও বলেন: 'এর দ্বারা ধারণা করা যায় যে, শেক্সপিয়ারের স্ত্রী সম্ভবত তার স্বামীর সঙ্গে 'বেশ অনেকটা'' সময় লন্ডনে কাটিয়েছিলেন।'
অধ্যাপক স্টেগল বিবিসিকে বলেন, 'তবে এটি [আমার কথা] পুরোপুরি নিশ্চিত, তা বলছি না।'
তিনি বলেন, 'একেবারে নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও; সম্ভাবনাটা খুব জোড়ালো, একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।'
'তারা একে অপরকে ভালোবাসতেন'
বিবিসি রেডিও ৪ এর ওয়ার্ল্ড অ্যাট ওয়ান প্রোগ্রামে কথা বলার সময় লেখক ম্যাগি ও'ফ্যারেল এই আবিষ্কারকে 'রোমাঞ্চকর' এবং 'দুর্দান্ত' বলে অভিহিত করেছেন।
পুত্রের মৃত্যুর শোকে কাতর শেক্সপিয়ার এবং তার স্ত্রীর মধ্যকার কাল্পনিক সম্পর্ক নিয়ে হ্যামনেট নামের একটি বই লিখেছেন ম্যাগি ও'ফ্যারেল।
ম্যাগি ও'ফ্যারেল বলেন, 'অনেক বিজ্ঞ পণ্ডিত বলেছেন যে তিনি [শেক্সপিয়ারের স্ত্রী] কুৎসিত ছিলেন, শেক্সপিয়ার তাকে ঘৃণা করতেন, তিনি নিরক্ষর ছিলেন, তিনি বোকা ছিলেন।'
তিনি বলেন, 'অথচ এসবের একটারও কোনো প্রমাণ নেই। বিষয়টি সবসময় আমাকে অবাক করেছে যে, কেন তাকে এত নির্দয়ভাবে আক্রমণ করা হয় এবং তার প্রতি এত বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করা হয়!'
এই লেখক আরও বলেন, একটি বইয়ের মলাট থেকে ১৬০৮ সালে লেখা একটি চিঠির টুকরো খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি দারুণ। এটি অবশ্যই প্রমাণ করে যে তারা একে অপরকে ভালবাসতেন এবং সম্ভবত লন্ডনে কিছু সময় একসঙ্গে বসবাসও করেন।'