মার্কো রুবিওর সফর বাতিল: ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে লন্ডনে আলোচনা গুরুত্ব হারাল

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হঠাৎ করেই তাঁর সফর বাতিল করায়— ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে লন্ডনে আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটিও গুরুত্ব হারাচ্ছে। আজ বুধবারের এই বৈঠকে ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও, রুবিও'র সিদ্ধান্তের পর বেশিরভাগই শেষ মুহূর্তে যোগ না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, রুবিও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে ইউক্রেন হয়তো আবার তার কঠোর অবস্থানে ফিরে যাবে, ফলে আলোচনা থেকে কোনো ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত আসবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় শিগগিরই কোনো অগ্রগতি না হলে— ওয়াশিংটন আলোচনার টেবিল থেকে উঠে যাবে। রোববার তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সপ্তাহেই মস্কো ও কিয়েভ একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে। তবে কূটনৈতিক মহল সেই আশাকে অবাস্তব বলেই মনে করছে।
রুবিওর সফর বাতিল, প্রাথমিক বৈঠকে সীমিত আলোচনা
মঙ্গলবার রাতেই ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কো রুবিও এবং জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তিনি ফের লন্ডন সফর করবেন। বুধবারের বৈঠক এখন কেবল টেকনিক্যাল বৈঠক হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার-এর মুখপাত্র জানান, বল এখন রাশিয়ার কোর্টে। তিনি বলেন, "আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি আনার উদ্যোগকে সমর্থন করি এবং ইউক্রেনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করি।"
ওয়াশিংটন-মস্কো কূটনীতি: ট্রাম্পের বিশেষ দূতের রাশিয়া সফর
লন্ডনের আলোচনায় থাকছেন না ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি রাশিয়ায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। অন্যদিকে, জেনারেল কিথ কেলোগ লন্ডনে অবস্থান করবেন আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
গত সপ্তাহে প্যারিসে অনুষ্ঠিত অনুরূপ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যৌথ অবস্থান তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন কিছু প্রস্তাব ইউরোপ ও ইউক্রেনের কাছে ছিল 'অগ্রহণযোগ্য'। সূত্র জানায়, অন্যতম বিতর্কিত প্রস্তাব ছিল রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে স্বীকৃতি দেওয়া, যা ইউক্রেন ও ইউরোপের প্রভাবশালী মিত্ররা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি।
বাধা ও জটিলতা: নিষেধাজ্ঞা ও পারমাণবিক অঞ্চল
আরও একটি বিতর্কিত ইস্যু হল রাশিয়ার দাবি, আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই মস্কোর ওপর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক—যা ইউরোপীয় দেশগুলো দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার জানান, মার্কিন সহায়তায় তিনি কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধারে আগ্রহী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মস্কোকেও ক্ষুব্ধ করতে পারে
দুই কূটনীতিক জানান, মার্কিন প্রস্তাবে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রিকরণ করার রাশিয়ান দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউরোপীয় বাহিনী মোতায়েনের কথাও বাদ যায়নি, যা মস্কো গ্রহণ করবে না।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কূটনীতি ও ইউরোপের উদ্বেগ
জনুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে চাপ দিচ্ছেন এবং রাশিয়ার ওপর বাইডেন প্রশাসনের চাপপ্রয়োগমূলক নীতিগুলো অনেকটাই শিথিল করেছেন। মে মাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের কথা বারবার বলেছেন তিনি।
তবে ইউরোপ উদ্বিগ্ন ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়ার প্রতি উদার মনোভাব দেখে—বিশেষ করে এই অবধি শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর।