মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা নেই: জাপান

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে আসন্ন শুল্ক আলোচনা নিয়ে তার দেশ কোনো বড় ধরনের ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না এবং এই আলোচনা দ্রুত শেষ করতেই হবে— এমন মনোভাবও তাদের নেই।
আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) জাপানের পার্লামেন্টে বক্তব্যে ইশিবা বলেন, "আমি মনে করি না, কেবল আলোচনা দ্রুত শেষ করার জন্য আমাদের বড় ছাড় দেওয়া উচিত।" তিনি একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন।
জাপান যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র হলেও— বর্তমানে দেশটির মার্কিন বাজারে রপ্তানিতে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্কের মুখে পড়েছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের অধিকাংশ 'পারস্পরিক' শুল্ক নীতির মতো এই শুল্কগুলোকেও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে ১০ শতাংশের মতো একটি সাধারণ হারে সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক বলবৎ রয়েছে। তবে গাড়ি আমদানিতে কার্যকর রয়েছে ২৫ শতাংশ শুল্ক, অটোমোবাইল শিল্পের জায়ান্ট জাপানের জন্য যা বিশেষভাবে সমস্যাজনক। কারণ, জাপানের যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির প্রায় ২৮ শতাংশই এই খাত থেকে আসে।
এ অবস্থায়, আগামী বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা; যেখানে শুল্ক, অশুল্ক বাধা এবং মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইশিবা বলেন, "আমাদের বুঝতে হবে ট্রাম্পের অবস্থানের পেছনে যুক্তি এবং আবেগ— উভয় দিক থেকেই কী রয়েছে।" তার মতে, মার্কিন শুল্ক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শৃঙ্খলায় অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
এদিকে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর কাজুও উয়েদাও সতর্ক করে বলেন, "মার্কিন শুল্ক বিশ্ব এবং জাপানের অর্থনীতিতে নানা মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করবে।"
ট্রাম্প জাপানের বিরুদ্ধে শুধু বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নয়, বরং 'ইচ্ছাকৃতভাবে ইয়েন দুর্বল রাখা'র অভিযোগও তুলেছেন। ফলে টোকিওর ওপর মুদ্রার মান বাড়ানোর চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে— ডলার দুর্বল হওয়ায় ইয়েন কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।
কিন্তু, অত্যন্ত নিম্ন সুদের হার থেকে ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বগামী পথে হাঁটা ব্যাংক অব জাপান (বিওজে)-এর মুদ্রানীতিও আলোচনায় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
জাপানের অর্থমন্ত্রী কাতসুনোবু কাটো এবং মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় হার ইস্যুতে আলাদা আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রিওসেই আকাজাওয়া, যিনি জাপানের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
অর্থমন্ত্রী কাতসুনোবু কাটো বলেন, "উভয় দেশই একমত যে অতিরিক্ত বাজার অস্থিরতা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।"
এদিকে, ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দর ১৩০-এর কাছাকাছি নেমে এলে সুদের হার বৃদ্ধি বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গোল্ডম্যান স্যাকস জাপানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংক অব জাপানের সাবেক অর্থনীতিবিদ আকিরা ওতানি। বিপরীতে, ইয়েনের দর ১৬০ ছাড়িয়ে গেলে সুদের হার দ্রুততর হারে বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
সোমবার এক মার্কিন ডলারের দর ০.৬২ শতাংশ কমে ১৪২.৬২ ইয়েনে লেনদেন হয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে জাপান চায় না যে ইয়েনের মান খুব বেশি বাড়ুক, কারণ এটি দেশটির রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে আঘাত হানে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্বল ইয়েনই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেটি আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে ভোক্তা ব্যয় সংকোচন করছে।
এদিকে জাপানের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, এবং ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব থেকে অর্থনীতি রক্ষায় কর হ্রাস বা নগদ প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ইশিবা বলেন, "সরকার আপাতত অতিরিক্ত বাজেট ঘোষণার চিন্তা করছে না, তবে সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছে।"