যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতির দাবি ট্রাম্পের, ক্রেমলিন জানাল— ‘তাৎক্ষণিক ফলাফল আসবে না’

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা 'খুব ভালোভাবেই' এগিয়ে চলেছে। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তার কারণে তাৎক্ষণিক কোনো ফলাফল প্রত্যাশা করা ঠিক না।
ট্রাম্প, যিনি নিজেকে 'শান্তির দূত' হিসেবে স্মরণীয় করতে চান, ইউক্রেনে চলমান তিন বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে বন্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার প্রশাসন এখন এই সংঘাতকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার একটি প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করছে— যা রাশিয়ার অবস্থানকেই প্রতিফলিত করে।
তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের পর ট্রাম্প শনিবার বলেন, "আলোচনা হয়তো ভালোই চলছে, কিন্তু একটা সময় আসে যখন হয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়— নতুবা চুপ থাকতে হয়।"
এবিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিক পাভেল জারুবিনকে বলেন, "সব কিছুই খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে।" তিনি জানান, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে— পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুতিনের বিনিয়োগ বিষয়ক দূত কিরিল দমিত্রিয়েভ এসব আলোচনায় যুক্ত রয়েছেন।
তবে পেসকভ সতর্ক করে বলেন, "যেসব ক্ষতি হয়েছে বিগত সময়ে, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে, তা ঠিক করে তোলার জন্য সময় লাগবে। তাই তাৎক্ষণিক কোনো অগ্রগতি আশা করা ঠিক হবে না।"
রাশিয়ার ২০২২ সালের ইউক্রেন আক্রমণ – স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশটির সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের জন্ম দেয়, যা অনেক বিশ্লেষক ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের পর— (দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের) সবচেয়ে বিপজ্জনক অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করছেন।
সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিন ও ট্রাম্পের দূত উইটকফের বৈঠক হয়েছে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী। রুশ রাষ্ট্রীয় টিভিতে পুতিনকে উইটকফকে অভ্যর্থনা জানাতে দেখা গেছে, যেখানে উইটকফ বুকের ওপর হাত রেখে অভিবাদন জানান।
ট্রাম্প বলেছেন, "রাশিয়ার এখনই কিছু করে দেখানো উচিত।" তবে পেসকভের বক্তব্যে স্পষ্ট— পুতিন ও ট্রাম্পের সরাসরি বৈঠকের পথ এখনও প্রস্তুত নয়। তিনি বলেন, "আমরা এই পথে একসঙ্গে ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। সম্পর্ক পুনঃস্থাপন একটি জটিল ও শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া।"
ইউরোপীয় নেতারা ও ইউক্রেন— ২০২২ সালের আগ্রাসনকে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী ভূখণ্ড দখলের প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে আছে।
পুতিন এই যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের পতনশীল প্রভাবের বিরুদ্ধে রাশিয়ার লড়াই হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার দাবি, ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে অপমান-অপদস্থ করেছে, এবং ন্যাটো সম্প্রসারণের মাধ্যমে মস্কোর প্রভাববলয়ের ভেতরে— বিশেষ করে ইউক্রেনে— হস্তক্ষেপ করেছে।