ট্রাম্পের গোপন চিঠিতে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারবে: রিপোর্ট

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চললেও, ইসরায়েল এমন একটি লিখিত নিশ্চয়তা চাইছে যাতে তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা ফের সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে—এমন খবর প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১৪।
বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বর্তমান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের সঙ্গে একটি 'সাইড লেটার' বা গোপন চিঠি যুক্ত রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এটি দেওয়া হবে। রাজনৈতিক মহলের একজন সদস্যকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই চিঠিতে উল্লেখ থাকবে যে, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং তাদের শীর্ষ নেতাদের নির্বাসনের বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি পূরণ না হলে তারা 'যুদ্ধ ফের শুরু করতে পারবে'। কী ধরনের পদক্ষেপে ওই দাবিগুলো পূরণ হয়েছে বা হয়নি—তা নির্ধারণ ও ব্যাখ্যার অধিকারও থাকবে ইসরায়েলের ওপর।
চলতি বছরের মার্চ মাসে একবার যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় হামলা শুরু করেছিল ইসরায়েল। তখন অনেক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছিলেন, তেলআবিব আদৌ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী নয়।
সবশেষ এই খবর এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মার্কিন প্রশাসন ও ইসরায়েল—উভয়পক্ষই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে নিয়েছে। এই বিরতির সময়টিকে ব্যবহার করে সব পক্ষ যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'তার ও মিশর যেভাবে দীর্ঘ সময় ধরে শান্তি আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তারাই এই চূড়ান্ত প্রস্তাব নিয়ে আসবে।'
তবে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে, আলোচনায় এখনও নানা জটিলতা রয়ে গেছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির পর কী হবে—সেই প্রশ্নে গুরুতর মতানৈক্য রয়েছে।
'নব্য মধ্যপ্রাচ্য' ও হামাসকে চাপ
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক ফিলিস্তিন বিভাগীয় উপপ্রধান ও রিজার্ভ সদস্য আমিত ইয়াগুর চ্যানেল ১৪-কে বলেন, 'ট্রাম্পের নেতৃত্বে 'নব্য মধ্যপ্রাচ্য' গঠনের উদ্যোগ এই অঞ্চলের নানা পক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে কাতারের ওপর, যেখানে অনেক সিনিয়র হামাস নেতা অবস্থান করছেন।
'নতুন মধ্যপ্রাচ্যই এখন মূল ফোকাস,' বলেন ইয়াগুর। 'এ অঞ্চলে যে নতুন ভূরাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে, তা সব পক্ষের ওপর প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যেই নির্ধারিত হচ্ছে চুক্তির ভবিষ্যৎ ও হামাস কতদূর ছাড় দেবে।'
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, যেকোনো চুক্তিই এমনভাবে হতে হবে, যাতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তির 'সম্পূর্ণ ধ্বংস' নিশ্চিত হয়। 'কারও হাতে অস্ত্র থাকলে, তাকেই হত্যা করতে হবে,' মন্তব্য করেন তিনি।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজের সামরিক বিশ্লেষক আমোস হারেল লিখেছেন, নেতানিয়াহু হয়তো ওয়াশিংটনকে বোঝাতে আপোষের ভান করছেন, কিন্তু হামাসকে বার্তা দিচ্ছেন—মূল দাবি থেকে তিনি একচুলও পিছিয়ে আসেননি।
'হামাসের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যুদ্ধ শেষ করা,' উল্লেখ করেন হারেল। 'তাদের চাওয়া, যুক্তরাষ্ট্র এমন নিশ্চয়তা দেবে যাতে চুক্তির পরবর্তী ধাপকে ইসরায়েল বানচাল করতে না পারে।'
তবে নেতানিয়াহু এখন এমন এক অবস্থানে রয়েছেন, যেখানে যুদ্ধবিরতির পথে যাওয়া এবং তার কট্টর ডানপন্থী জোটের সমর্থন ধরে রাখার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন হারেৎজের এই লেখক।