আরোপ হচ্ছে নতুন শুল্ক, সোমবার ট্রাম্পের চিঠি যাচ্ছে ডজনখানেক দেশের কাছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বেশকিছু দেশের কাছে নতুন ট্যারিফ (শুল্ক) হার সংক্রান্ত চিঠি পাঠাতে যাচ্ছে।
বর্ধিত নয়া এই শুল্ককে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে পারস্পরিক শুল্ক। যা বৈদেশিক বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর বসানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির হিসাব করে। ট্রাম্প এর আগে ৯০ দিন স্থগিত রেখেছিলেন নতুন এ শুল্ক হার। তবে আগামী ৯ জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে সে স্থগিতাদেশ।
নতুন শুল্ক নিয়ে কয়েক মাস ধরে ধরে হুমকি-ধামকির পর হঠাৎ করেই ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপ ফের বাড়িয়ে তুলছেন। ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা, যারা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা শান্ত পরিবেশ পাচ্ছিলেন, তাদের জন্য এই পদক্ষেপ নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া আর্থিক বাজার, যেখানে শুল্ক-পরবর্তী সময়ে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিল, সেখানে আবারও নতুন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ইউরোপের পুঁজিবাজার ও যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে শুক্রবার ইতোমধ্যেই পতনের ধাক্কা লেগেছে ট্রাম্পের ঘোষণার পর।
শুক্রবার রাতে এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় ট্রাম্প জানান, প্রায় ডজনখানেক দেশের কাছে সোমবার এসব চিঠি পাঠানো হবে।
তবে তিনি স্পষ্ট করেননি কোন কোন দেশের ওপর এই নতুন ট্যারিফ বসানো হবে বা ঠিক কত শতাংশ হারে তা নির্ধারণ করা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, এসব চিঠিতে নির্ধারিত শুল্কের হার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। কিছু ক্ষেত্রে এই হার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
তবে এটি নতুন কোনো কৌশল নয়। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও এমন কৌশল নিয়েছে—তাদের আগ্রাসী অবস্থান জানানোর পরও বাণিজ্য অংশীদারদের জন্য শেষ মুহূর্তে আলোচনার সুযোগ রেখে দিয়েছে।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ এখন হঠাৎ করে আলোচনায় বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পূর্বের অভিজ্ঞতা:
চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে নতুন ট্যারিফের ঘোষণা দেন, যদিও ঠিক এক সপ্তাহ পর তা স্থগিত করা হয়।
সেসময় ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, স্থগিতাদেশের ৯০ দিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ৯০টি বাণিজ্যচুক্তি করা হবে। কিন্তু প্রথম ৮৫ দিনে মাত্র তিনটি চুক্তি সম্পন্ন হয়—যুক্তরাজ্য, চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে।
মে মাসের মাঝামাঝি ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, আলাদা আলাদা আলোচনার দরকার নেই, বরং সরাসরি চিঠির মাধ্যমেই ট্যারিফ হার ঘোষণা করা হবে।
জুন মাসে তিনি একই হুমকি পুনরায় দেন এবং মাসের শেষে ফের জানান, এই পদ্ধতি তার কাছে অনেক সহজ মনে হয়, কারণ এতে একসঙ্গে অনেক দেশের সঙ্গে জটিল আলোচনা এড়ানো যায়।
যদিও ৯ জুলাই ট্যারিফ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কিছু দেশের জন্য আলাদা সময়সীমা রয়েছে, যেমন—চীন ও কানাডার জন্য সময়সীমা এই মাসের শেষ বা পরের মাসে।
ট্রাম্প কতটা আগ্রাসী হয়ে নতুন ট্যারিফ হার আরোপ করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, ভিয়েতনামের সঙ্গে করা সাম্প্রতিক চুক্তিতে ২০ শতাংশ শুল্কের হার নির্ধারণ করা হয়েছে—যা বিশ্বব্যাপী ঘোষিত মূল হার থেকে দ্বিগুণ হলেও এপ্রিল মাসে যে হার নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার তুলনায় অনেক কম।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা ফের বাড়তে পারে। এখন অপেক্ষা, চিঠিগুলো পৌঁছানোর পর বিশ্ব অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়ে, তা দেখার।