ট্রাম্পের নতুন শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেল স্মার্টফোন ও কম্পিউটার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্মার্টফোন, কম্পিউটারসহ আরও কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যকে 'পাল্টা' শুল্কের আওতা থেকে বাদ দিয়েছে । চীন থেকে আমদানি করা এসব পণ্যেও নতুন এই শুল্ক কার্যকর হবে না। চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এসব পণ্য ট্রাম্পের বৈশ্বিক ১০ শতাংশ শুল্ক এবং চীনা আমদানির ওপর বড় আকারের কর থেকে অব্যাহতি পাবে।
চীনের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কে এটাই প্রথম বড় ধরনের ছাড়। একজন বাণিজ্য বিশ্লেষক একে 'পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া পরিস্থিতি' বলে উল্লেখ করেছেন।
শনিবার ট্রাম্প জানান, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই শুল্ক অব্যাহতির বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হতে পারে বলে উদ্বেগ জানানোর পরই এই সিদ্ধান্ত এল। এই উদ্বেগের কারণ ছিল, বহু প্রযুক্তিপণ্যই চীনে তৈরি হয়।
৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে এই শুল্ক অব্যাহতি। অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, যেমন সেমিকন্ডাক্টর, সোলার সেল ও মেমোরি কার্ডও এই অব্যাহতির আওতায় পড়বে।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের প্রযুক্তি গবেষণা প্রধান ড্যান আইভস এক্সে লেখেন, 'এটি প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বপ্নের মতো এক পরিস্থিতি। স্মার্টফোন আর চিপ (শুল্ক থেকে) বাদ যাওয়া মানে চীনা শুল্ক ইস্যুতে এক মোড় পরিবর্তনের মুহূর্ত।'
তিনি আরও বলেন, অ্যাপল, এনভিডিয়া, মাইক্রোসফটসহ বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই সপ্তাহে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে।
হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে, এই শুল্ক অব্যাহতির লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেন উৎপাদন কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে আনার জন্য কিছুটা সময় পায়।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, সেমিকন্ডাক্টর, চিপ, স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি উৎপাদনে চীনের ওপর নির্ভর করা উচিত নয় যুক্তরাষ্ট্রের।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এসব প্রতিষ্ঠান এখন উৎপাদন যদ দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রে ফেরাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।'
শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, চীনের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
'আমি মনে করি, এ থেকে ভালো কিছুই বেরিয়ে আসবে,' বলেন তিনি।
তবে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অভ স্টাফ অন পলিসি স্টিফেন মিলার এক্সে জানান, এসব ইলেকট্রনিক পণ্য এখনও ফেন্টানিল-সংশ্লিষ্ট ২০ শতাংশ চীনা শুল্কের আওতায় রয়ে গেছে।
একাধিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, খরচ যদি গ্রাহকের কাঁধে পড়ত, তাহলে আইফোনের দাম তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেত।
যুক্তরাষ্ট্র আইফোনের অন্যতম প্রধান বাজার। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ অনুযায়ী, গত বছর মার্কিন বাজারে বিক্রীত স্মার্টফোনের অর্ধেকের বেশি ছিল অ্যাপলের।
সংস্থাটির ভাষ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য নির্ধারিত অ্যাপলের প্রায় ৮০ শতাংশ আইফোন চীনে তৈরি হয়, বাকি ২০ শতাংশ ভারতে।
স্যামসাংয়ের মতো অ্যাপলও চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে গত কয়েক বছরে সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করেছে।
ভারত ও ভিয়েতনাম উদীয়মান নতুন উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে উঠে এসেছে।
শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর অ্যাপল ভারতে তৈরি ডিভাইসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
ট্রাম্প শুরুতে বিভিন্ন দেশের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছিলেন, যা এই সপ্তাহেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
তবে বুধবার তিনি ঘোষণা দেন, শুধু চীন ছাড়া বাকি সব দেশের জন্য এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ছিল মূলত অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আরও সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি আদায়ের কৌশল।