ভাইরাল ভিডিওতে চিতাকে পানি পান করিয়ে বরখাস্ত হওয়া ভারতীয় বনকর্মীকে চাকরিতে পুনর্বহাল

ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে চিতা ও তার বাচ্চাদের পানি পান করাতে দেখা গিয়েছিল যাকে, সেই ভারতীয় বনকর্মী সত্যনারায়ণ গুর্জরকে পুনরায় চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। খবর বিবিসি'র।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে চালক পদে কর্মরত গুর্জর ভিডিওটি প্রকাশের পর সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল, কারণ শুধু অনুমোদিত কর্মীরাই বড় বিড়ালের কাছে যেতে পারবেন বলে সেখানে নিয়ম রয়েছে।
ভারতে চিতা বিলুপ্ত হয় ১৯৫২ সালে। পরে ২০২২ সালে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের আওতায় কুনো অভয়ারণ্যে আবার এই প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনা হয়।
গুর্জর বিবিসিকে বলেন, "আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু এখন আবার চাকরিতে বহাল করা হয়েছে।" তিনি জানান, কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। যদিও শীর্ষ বন কর্মকর্তা তার কাজ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
তার সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিবাদ করার পর বন বিভাগ গুর্জরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে। কর্মকর্তারা জানান, এটি তার প্রথম ভুল হওয়ায় সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো প্রাণীকে বিপদে পড়তে দেখলে নিজে হস্তক্ষেপ না করে কর্তৃপক্ষকে জানাতে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, গুর্জর ক্যামেরার বাইরে থাকা এক কণ্ঠের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে একটি ধাতব পাত্রে পানি ঢালছেন। কিছুক্ষণ পর চিতা 'জোয়ালা' ও তার চারটি শাবক সেই পানি পান করে।
গুর্জর দাবি করেন, তিনি কোনো ভুল করেননি; বরং ভিডিওটি ভাইরাল করেছেন যারা, দায় তাদেরই। তিনি বলেন, "আমি তাকে নাম ধরে ডাকছিলাম— 'জোয়ালা, আয় জোয়ালা, আয়।' ওরা শুধু তখনই আসে, যখন নাম ধরে ডাকা হয়।"
প্রথম দিকে অনেক সংবাদমাধ্যম ভিডিওটিকে "মানবিক" বলে আখ্যা দিয়ে গুর্জরের "করুণা" ও "সাহসিকতার" প্রশংসা করেছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অভয়ারণ্যের ভেতরে স্থায়ী পানি সরবরাহের দাবি তোলেন।
গুর্জর বলেন, তিনি বন্যপ্রাণীকে ভয় পান না, কারণ তার পূর্বপুরুষেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বনেই বসবাস করেছেন। "আমি পশুদের চোখের দিকেই তাকালেই তাদের অনুভূতি বুঝতে পারি। ওই চিতা ও তার বাচ্চারা যে পিপাসার্ত ছিল, তা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গিয়েছিলাম। তাই পানি দিয়েছিলাম।"
বন কর্মকর্তারা জানান, অভয়ারণ্যের সীমান্ত এলাকায় কখনো কখনো বড় বিড়ালদের পানি দেওয়া হয়, যাতে তাদের আবার বনের ভেতরে ফিরিয়ে আনা যায়।
বন বিভাগের প্রধান সংরক্ষক উত্তম কুমার শর্মা বলেন, শুধু প্রশিক্ষিত কর্মীরাই চিতার কাছে যেতে পারেন। তাও শুধু তাদের বনে ফেরাতে হলে। গুর্জরের কাজ সেই প্রটোকলের লঙ্ঘন, কারণ কর্মীদের দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে।
বড় বিড়ালের মুখোমুখি হলে কী করা উচিত, এ নিয়েও গুর্জরের এক পরামর্শ রয়েছে। তিনি বলেন, "যদি কখনো চিতার সামনে পড়েন, ভালোবাসা দিয়ে কথা বলবেন। ওকে মারবেন না বা পাথর ছুড়বেন না।"
২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া থেকে কুনোতে ২০টি চিতা আনা হয়. এই ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় স্থানান্তর এটাই প্রথম।
তবে এরপর আটটি চিতা কিডনি বিকল হওয়া, প্রজননকালীন আঘাতসহ নানা কারণে মারা যায়। এতে অভয়ারণ্যের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
তবে কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানায়, এখনো ২৬টি চিতা জীবিত আছে। এর মধ্যে ১৭টি মুক্তভাবে বিচরণ করছে, আর ৯টি ঘের দেওয়া স্থানে রাখা হয়েছে।
চলতি বছর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ২০টি চিতা আসার কথা রয়েছে।