যাচাই হওয়ার পরও ছড়াচ্ছে ড. ইউনূসের প্রশংসা করে ট্রাম্পের ভুয়া বক্তব্যের ভিডিও

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রশংসা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—এমন দাবি করে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ালেও সেটি যে ভুয়া, তা তথ্য যাচাইয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখনও বন্ধ হয়নি ভিডিওটি ছড়ানো।
ভিডিওটিতে ট্রাম্পের কণ্ঠ ও বক্তব্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব।
১১ মে 'আমার দেশ' নামে একটি নকল ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়ায়। তবে তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, পেজটির কোনও সংযোগ নেই আসল 'আমার দেশ' পত্রিকার সঙ্গে এবং এটি এর আগেও ভুয়া খবর ছড়িয়েছে। বিতর্ক উঠলে পেজটি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলে।
রাতেই রিউমর স্ক্যানার ও পরে ফ্যাক্টওয়াচ আলাদাভাবে ভিডিওটি যাচাই করে জানায়, এটি পুরনো একটি ফুটেজ, যাতে কৃত্রিমভাবে তৈরি অডিও যুক্ত করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, 'ইউনূস আমার বন্ধু এবং তিনি অত্যন্ত উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক... তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন এবং খুব ভালো করছেন।' এই বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে নকল এবং এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।
ভিডিওটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও শেয়ার করেছিলেন, যদিও পরবর্তীতে সেটি মুছে ফেলা হয়।
ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, ভিডিওর সূত্র যাচাই করতে গিয়ে তারা ফক্স নিউজে প্রকাশিত ট্রাম্পের একটি মূল ভিডিও ক্লিপ শনাক্ত করে। ভিডিওটি ৩০ এপ্রিলের মন্ত্রিসভার বৈঠকের এবং সেটি হোয়াইট হাউজের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচার করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্যে বাংলাদেশ বা ড. ইউনূস প্রসঙ্গে কোনো কথাই ছিল না।
মূল ভিডিওর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ২ সেকেন্ড থেকে ২০ সেকেন্ড সময়ের একটি অংশ নিয়ে সেখানে ভুয়া অডিও বসানো হয়েছে। ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওতে ফক্স নিউজের মতো একই টুপিও দেখা যায়, যাতে বিভ্রান্তি আরও বাড়ে।
ফ্যাক্টওয়াচ জানিয়েছে, তারা এআই ডিটেকশন টুল 'ডিপফেক ও মিটার' ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছে, ট্রাম্পের বক্তব্য কৃত্রিমভাবে তৈরি।
যে ভুয়া পেজ থেকে ভিডিওটি ছড়ায় সেটি আসল 'আমার দেশ' পত্রিকার লোগো ব্যবহার করলেও পত্রিকার অফিসিয়াল পেজ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এটি তাদের কনটেন্ট নয়।
ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা যায়, পেজটির ২০টি পোস্টের মধ্যে অন্তত তিনটি ভুয়া— একটি ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা ও এনসিপি নেত্রী তাসনুভা জাবিনের ভুয়া টকশো; একটি চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আজম রনির গ্রেপ্তার সংক্রান্ত; এবং একটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীকে 'আকাশের রাজা' বলে প্রচারিত ভুয়া খবর।
তাছাড়া ওই পোস্টগুলোর চারটি আওয়ামী লীগ বিরোধী, চারটি বিএনপিবিরোধী এবং তিনটি অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে তৈরি। সম্প্রতি ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়েন মাহফুজ।