ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখল পরিকল্পনায় হস্তক্ষেপ করবে না রাশিয়া: পুতিন

মুরমানস্ক, আর্কটিক বৃত্তের উত্তরে সবচেয়ে বড় শহর। সেখানেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ 'আর্কটিকে বৈশ্বিক নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী করবে'। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেছেন, এই অঞ্চলে 'ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা' ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। খবর বিবিসির।
এর প্রমাণ হিসেবে তিনি প্রথমেই উল্লেখ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার পরিকল্পনার কথা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে কোনো সমালোচনা করেননি ক্রেমলিন নেতা।
এটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বর্তমানে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিন তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।
পুতিন বলেন, 'সংক্ষেপে, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আমেরিকার পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুতর। এর ঐতিহাসিক শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। এটি স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে আর্কটিকে তাদের ভূ-কৌশলগত, সামরিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আলোচনা দুটি নির্দিষ্ট দেশের বিষয়, এতে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।'
তবে এই মন্তব্য এসেছে এমন একজনের কাছ থেকে, যিনি একটি স্বাধীন প্রতিবেশী দেশে সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছেন এবং বিশাল অঞ্চল দখলের দাবি করেছেন।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ওয়াশিংটন ও মস্কো একে অপরের কঠোর সমালোচনা করত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
আর্কটিকে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বরাবরই অঞ্চলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি করেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথ খুঁজছে।
'আমরা এমন বিভিন্ন বিনিয়োগ সুযোগ বিবেচনা করতে প্রস্তুত, যা রুশ সরকারের অনুমোদিত নির্দিষ্ট খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে,' বলেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ।
তিনি রাশিয়ার সরাসরি বিনিয়োগ তহবিলের প্রধান নির্বাহীও এবং ইতোমধ্যে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।
'আমরা আর্কটিকে বিনিয়োগ সহযোগিতার জন্য উন্মুক্ত। এটি হতে পারে লজিস্টিকসহ এমন অন্যান্য খাতে, যা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই লাভজনক,' বলেন দিমিত্রিয়েভ।
তবে এ ধরনের চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের সমাপ্তি জরুরি বলে মন্তব্য করা হলে তিনি রাজনৈতিক প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে যান।
'আমি কেবল অর্থনীতি ও বিনিয়োগের বিষয় নিয়েই কাজ করি, রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য করি না,' বলেন তিনি।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সংলাপ এখনো চলমান এবং যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করছে—এটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়া আত্মবিশ্বাসী যে, আর্কটিক ও দেশের অন্যান্য খাতে লাভজনক চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের পক্ষে আনতে পারবে।
এই আত্মবিশ্বাস অমূলক নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইউরোপ নিয়ে ক্রেমলিনের বক্তব্য মার্কিন কর্মকর্তাদের মুখেও শোনা যাচ্ছে।
সম্প্রতি সাবেক ফক্স নিউজ উপস্থাপক টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে অনুষ্ঠিত গণভোটের ফলাফল মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ভোটগুলোকে বৈধতা দেয়নি।
এক রুশ সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এসেছে: 'মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা এখন একই ভাষায় কথা বলছেন।'
রাশিয়ার প্রভাবশালী রাজনীতিক ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপদেষ্টা নিকোলাই পাতরুশেভ বলেন, 'আমেরিকায় দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল আছে। ডেমোক্র্যাটরা এক অবস্থান নেয়, রিপাবলিকানদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।'
তিনি ব্যাখ্যা করেন, 'এর মানে এই নয় যে, তারা রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিয়েছে। বরং তারা তাদের নিজস্ব অবস্থান ধরে রাখছে, এবং আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি।'
'আগে বিশ্বে দুটি শক্তি আধিপত্য বিস্তার করত। পরে মাত্র একটি ছিল। এখন আমরা বহুমেরু বিশ্ব গড়ে তুলছি, তবে তা নিজস্ব জটিলতা নিয়ে আসছে,' বলেন পাতরুশেভ।
মুরমানস্কের বুকে বিশাল এক তিমি—রাশিয়ার মহাপরিকল্পনার প্রতীক?
মুরমানস্কের কেন্দ্রস্থলে এক অভিনব দৃশ্য—তার দিয়ে ঝুলানো বিশাল এক তিমি আকৃতির বেলুন, যার নিচে রুপালি বেলুনের ঢেউ। বাতাসের দোলায় তরঙ্গিত হচ্ছে এই শিল্পকর্ম।
একদিকে রাশিয়ার আর্কটিক পরিকল্পনা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন রূপ নিয়ে আলোচনা চলছে, অন্যদিকে মুরমানস্কের পরিবারগুলো তিমির সামনে ছবি তুলতে ব্যস্ত।
এই মুহূর্তটিই সুযোগ, জানতে চাওয়া—রাশিয়ার জনগণ কি আর্কটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা সমর্থন করেন?
এলিনা বলেন, 'রাশিয়া শক্তিশালী। সবসময় শক্তিশালীদের সঙ্গে থাকা উচিত।'
'আমাদের আর্কটিক অঞ্চলকে উন্নত করতে হবে,' বলেন ওলগা। 'বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করা ভালো।'
তবে যুক্তরাষ্ট্রকে কি তিনি বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে দেখেন?
'আপনি জানেন কি? আমি নিশ্চিত নই,' বলেন তিনি।
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ ইলন মাস্কের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, ইলন মাস্ক একজন দুর্দান্ত দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নেতা এবং অত্যন্ত সফল ব্যক্তি'।
তিনি আরও বলেন, 'মঙ্গলে অভিযানের ক্ষেত্রে রাশিয়া অনেক কিছু দিতে পারে, বিশেষ করে আমাদের কিছু পারমাণবিক প্রযুক্তি রয়েছে যা ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।'
রাশিয়ার পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে যে, মাস্কের দলের সঙ্গে শিগগিরই কিছু ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।