‘রেকর্ড’ ক্ষতিপূরণ পাবেন বিশ্বের দীর্ঘতম সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি

প্রায় ৫০ বছর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত থাকার পর খুনের অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়া এক জাপানি নাগরিক ১ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পাবেন। তার আইনজীবীদের দাবি, এটি দেশটির ইতিহাসে কোনো ফৌজদারি মামলায় দেওয়া সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ। খবর বিবিসি'র।
৮৯ বছর বয়সী ইওয়া হাকামাতা ১৯৬৮ সালে তার মালিক, মালিকের স্ত্রী এবং তাদের দুই সন্তানকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। তবে গত বছর পুনর্বিচারের পর তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।
হাকামাতার আইনজীবীরা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের আবেদন করে যুক্তি দেন যে, ৪৭ বছর বন্দি থাকায় তিনি ছিলেন বিশ্বের দীর্ঘতম সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি। এই দীর্ঘ সময় বন্দিদশায় তার মানসিক স্বাস্থ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) বিচারক কুনি কোশি এ আবেদনে সম্মতি জানান এবং রায়ে উল্লেখ করেন যে, হাকামাতা 'চরম মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা' সহ্য করেছেন।
জাপান সরকার এই বিপুল অর্থ প্রদান করবে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে এটি দেশটির ইতিহাসে কোনো ফৌজদারি মামলায় সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ।
হাকামাতার মামলাটি ছিল জাপানের ইতিহাসে দীর্ঘতম এবং অন্যতম আলোচিত আইনি লড়াই।
২০১৪ সালে তাকে পুনর্বিচারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, তদন্তকারীরা তার বিরুদ্ধে সাজানো প্রমাণ ব্যবহার করেছিলেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে, জাপানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর শিজুওকার এক আদালতে বিচারক হাকামাতার খালাসের রায় ঘোষণা করলে শত শত মানুষ সমবেত হয়ে উল্লাস করে।
তবে, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা গুরুতরভাবে অবনতি হওয়ায় হাকামাতা সেই শুনানিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এর আগের সব শুনানির ক্ষেত্রেও তাকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
২০১৪ সালে পুনর্বিচারের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে তিনি তার ৯১ বছর বয়সী বড় বোন হিদেকোর তত্ত্বাবধানে বসবাস করছিলেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে হিদেকো তার ভাইকে নির্দোষ প্রমাণের লড়াই চালিয়ে গেছেন।
১৯৬৬ সালে হাকামাতা শিজুওকায় একটি মিসো (গাঁজনকৃত সয়াবিন জাতীয় খাদ্য) প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কাজ করতেন। এসময় তার মালিক, মালিকের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের মৃতদেহ তাদের বাড়িতে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, তাদের প্রত্যেককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ হাকামাতার বিরুদ্ধে ওই পরিবারের সদস্যদের খুন, বাড়িতে আগুন দেয়া এবং ২ লাখ ইয়েন চুরির অভিযোগ তোলে।
প্রথমে হাকামাতা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে ১২ ঘণ্টা ধরে চলা জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধরের মুখে স্বীকারোক্তি দেন। যদিও তা পরে তিনি 'বাধ্যতামূলক স্বীকারোক্তি' বলে দাবি করেন।
১৯৬৮ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
বহু বছর ধরে তার আইনজীবীরা দাবি করে আসছিলেন যে, হত্যাকাণ্ডের সময় অপরাধীর গায়ে থাকা পোশাক থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা হাকামাতার সঙ্গে মেলেনি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে 'সাজানো প্রমাণ' ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন তারা।
২০১৪ সালে পুনর্বিচারের অনুমতি দেওয়া হলেও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার কারণে পুনর্বিচার শুরু হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।