যে ৫টি দারুন পুষ্টিগুণ রয়েছে তরমুজের বীজে

তরমুজের বীজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের মতো পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ভাজা তরমুজের বীজ হতে পারে স্বাস্থ্যকর একটি খাবার।
তরমুজ খাওয়ার সময় অনেকেই বীজ ফেলে দেন, আবার কেউ বীজবিহীন তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। তবে তরমুজের বীজের পুষ্টিগুণ জানলে হয়তো দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।
তরমুজের বীজে ক্যালোরি কম এবং পুষ্টিতে ভরপুর। মচমচে ভাজা বীজ অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের বিকল্প হতে পারে। চলুন, দেখে নেয়া যাক তরমুজের বীজের উপকারিতা।
কম ক্যালোরিযুক্ত
এক আউন্স বা প্রায় ২৮ গ্রাম তরমুজের বীজে প্রায় ১৫৮ ক্যালোরি থাকে। যা লেইস কোম্পানির এক আউন্স পটেটো চিপসের (১৬০ ক্যালোরি) কাছাকাছি। তবে একটি বড় মুঠো (প্রায় ৪ গ্রাম) তরমুজের বীজের ক্যালোরি মাত্র ২৩, যা এক প্যাকেট চিপসের তুলনায় অনেক কম।
ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস
তরমুজের বীজে থাকা অন্যতম খনিজ উপাদান হলো ম্যাগনেসিয়াম। ৪ গ্রাম বীজে প্রায় ২১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এটি দৈনিক চাহিদার ৫ শতাংশ পূরণ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) অনুসারে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ৪২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া, স্নায়ু ও পেশির কার্যকারিতা, পাশাপাশি হৃৎপিণ্ড, হাড় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আয়রনের উৎস
এক মুঠো তরমুজের বীজে প্রায় শূন্য দশমিক ২৯ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা দৈনিক চাহিদার প্রায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এই পরিমাণ খুব বেশি না হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে এবং শরীরে অক্সিজেন পরিবহন করে।
তবে তরমুজের বীজে থাকা 'ফাইটেট' নামক যৌগ শরীরের আয়রন শোষণ ক্ষমতা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।
উপকারী চর্বি
তরমুজের বীজে মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এক মুঠো (৪ গ্রাম) বীজে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৩ গ্রাম ও ১ দশমিক ১ গ্রাম এই উপকারী চর্বি পাওয়া যায়।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই চর্বি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দস্তার (জিংক) ভালো উৎস
তরমুজের বীজ দস্তার (জিংক) একটি ভালো উৎস। এক আউন্স বীজে দৈনিক চাহিদার ২৬ শতাংশ এবং এক মুঠো (৪ গ্রাম) বীজে ৪ শতাংশ দস্তা থাকে।
দস্তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, কোষ পুনর্গঠন ও বিভাজন, স্বাদ ও গন্ধ শনাক্ত করার ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে আয়রনের মতোই দস্তার শোষণ ক্ষমতাও ফাইটেটের কারণে কিছুটা কমে যেতে পারে।
ডায়াবেটিস থাকলে কি তরমুজ খাওয়া যাবে?
তরমুজের স্বাদ মিষ্টি হলেও এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। আপনি কতটুকু তরমুজ খান এবং আপনার সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে এটি রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে।
তরমুজে কতটুকু চিনি থাকে?
এক কাপ (১৫২ গ্রাম) টুকরো করা তরমুজে প্রায় ৯ দশমিক ৪২ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি এবং ১১ দশমিক ৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। একটি বড় ফালি (প্রায় ২৮৬ গ্রাম) তরমুজে ১৭ দশমিক ৭ গ্রাম চিনি ও ২১ দশমিক ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।
তবে ডায়াবেটিস থাকলেও পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন প্রক্রিয়াজাত চিনি যুক্ত খাবারের পরিবর্তে তাজা, হিমায়িত বা সংরক্ষিত ফল খাওয়ার পরামর্শ দেয়, যা স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।