আমদানিকৃত বীজে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

বাংলাদেশ হয়তো নিজের প্রয়োজনের সব খাদ্য উৎপাদন করতে পারে, কিন্তু সেই উৎপাদন টিকিয়ে রাখার মতো বীজ উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে অর্থকরী ফসল থেকে শুরু করে শাকসবজি পর্যন্ত—দেশের কৃষি এখন নীরবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে আমদানি করা বীজের ওপর, যা আজ বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনের মূলভিত্তি হয়ে উঠেছে।
পাটের কথাই ধরুন, বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানটি বাংলাদেশের। অথচ সোনালী আঁশের প্রায় ৮০ শতাংশ বীজ আমদানি করা হয়,যার বেশিরভাগটাই ভারত থেকে।
উচ্চ ফলনের জন্য কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা হাইব্রিড ধানের ক্ষেত্রেও একই চিত্র—বাংলাদেশ চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে বিপুল পরিমাণে বীজ আমদানি করছে। ভুট্টা, শাকসবজি, তৈলবীজ ও ডালজাত ফসলে-ও বিদেশি বীজ দ্রুত দেশীয় জাতের জায়গা দখল করছে।
অথচ দুই দশক আগেও দেশে ব্যবহৃত বীজের বড় অংশই আসত কৃষকের নিজস্ব সংরক্ষণ অথবা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে। তখন বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ ছিল দেশের কৃষি ঐতিহ্যের অংশ। তবে সেই চিত্র নাটকীয় হাড়ে বদলে এখন একটি বড় অংশ আমদানি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য নিরাপত্তা থাকলেও বীজ নিরাপত্তা না থাকলে সেটি কখনোই টেকসই হবে না।
বীজ আমদানির ঊর্ধ্বগতি
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট বীজ চাহিদা ছিল প্রায় ১৩.১৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৮.৬৫ লাখ টন আলুর বীজ এবং ৩.৩৫ লাখ টন ধানের বীজ—যার বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। বাকি চাহিদা—পাট, ভুট্টা, শাকসবজি, তৈলবীজ ও ডালের—মূলত পূরণ হয় আমদানি করা বীজের মাধ্যমে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩২ হাজার ৩৮৫ টন বীজ আমদানি করেছে; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৪৯২ টন, আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৯৪ টন।
দেশের বার্ষিক পাটবীজের চাহিদা ৬,০০০–৬,৪০০ টন, যার ৭৫–৮০ শতাংশই আমদানি করা হয়। ভুট্টার জন্য বছরে ১৫ হাজার টন বীজ প্রয়োজন, যার ৯০–৯৫ শতাংশই আসে বিদেশ থেকে।
শাকসবজির বীজের বার্ষিক চাহিদা ৪,০০০–৪,৫০০ টন, যার প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, বিট ও হাইব্রিড মূলার বীজ প্রায় পুরোপুরি বিদেশি উৎস থেকে আসে।
হাইব্রিড ধান উৎপাদনে বছরে প্রায় ২৬ হাজার টন বীজ প্রয়োজন হয়, যার প্রায় ২০ শতাংশ আমদানি করা হয়। তৈলবীজের চাহিদা ২৬ হাজার ৯৪৭ টন—এর ৮৫–৯০ শতাংশই আবার আমদানিকৃত। ডালের বীজের চাহিদা বছরে ২৩ হাজার ১২৭ টন, যার ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আসে।
আলুবীজ বাদে, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে প্রায় ৩৩ শতাংশ বীজ, বেসরকারি কোম্পানি ৩০ শতাংশ, আর বাকিটা (৩৭%) কৃষকেরাই উৎপাদন করেন। সরকারের সরবরাহ করা বীজের বড় অংশই ধানবীজ।
দেশের শীর্ষ বীজ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে লাল তীর সিড লিমিটেড, এসিআই সিড, সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেড, ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজ, এ.আর. মালিক সিডস প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্পাহানি অ্যাগ্রো, মেটাল অ্যাগ্রো, কৃষিবিদ সিড, মাসুদ সিড কোম্পানি এবং ইউনাইটেড সিড।
আলুবীজ ছাড়া অন্যান্য বীজের মধ্যে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে প্রায় ৩৩ শতাংশ বীজ এবং বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি ৩০ শতাংশ জোগান দেয়। আর বাকি ৩৭ শতাংশ কৃষকেরাই উৎপাদন করেন। সরকারের সরবরাহ করা বীজের বড় অংশই ধানবীজ।
দেশের শীর্ষ বীজ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে লাল তীর সিড লিমিটেড, এসিআই সিড, সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেড, ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজ, এ.আর. মালিক সিডস প্রাইভেট লিমিটেড, ইস্পাহানি অ্যাগ্রো, মেটাল অ্যাগ্রো, কৃষিবিদ সিড, মাসুদ সিড কোম্পানি এবং ইউনাইটেড সিড।
বীজের নিরাপত্তা: খাদ্য নিরাপত্তার পরবর্তী ধাপ
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় যদি "বীজ নিরাপত্তা" নিশ্চিত না হয়।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, "যতোই উচ্চফলনশীল জাত আসছে কৃষকের পক্ষে বীজ সংরক্ষণ ততোই কঠিন হচ্ছে। এখন কৃষকরা খুব কমই বীজ সংরক্ষণ করেন। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বীজ উদ্ভাবন করে। কিন্তু বীজের সম্প্রসারণ করে অন্য প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে বিএডিসির এখনো সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে।
"উচ্চফলনশীল জাতের বিস্তারে কৃষকের পক্ষে বীজ সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন জাত উদ্ভাবন করছে, কিন্তু বিএডিসি এখনো সক্ষমতার ঘাটতিতে ভুগছে। এর বাইরে প্রাইভেট সেক্টরও (বেসরকারি খাত) এখন বীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বীজ আমদানি করে বিক্রি করে। স্থানীয়ভাবে তাদের নিজস্ব গবেষণা ও উদ্ভাবন নেই।"
তিনি আরও বলেন, বিদেশী বীজে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। মাঝেমধ্যে জার্মিনেশন (অঙ্কুরোদগম) ঠিকমতো হয় না। এতে কৃষক যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানও লোকসানে পড়ে। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বীজ উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে নজর দিতে হবে। পাঁচ থেকে সাত বছরের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে সরকারি সংস্থা, বিএডিসি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব।
ভারতের ওপর নির্ভরশীল পাটবীজ আমদানি
বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদক এবং অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে প্রায় ৯০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৮২০ মিলিয়ন ডলার—এর মধ্যে কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে ১৪৮ মিলিয়ন ডলারের, পাটের সুতা থেকে ৪৬১ মিলিয়ন, বস্তা থেকে ১২৫ মিলিয়ন এবং পাটজাত অন্যান্য পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৮৩ মিলিয়ন ডলার।
তবুও দেশে বছরে প্রয়োজনীয় ৬,০০০–৬,৪০০ টন পাটবীজের মধ্যে ৭৫–৮০ শতাংশ—অর্থাৎ প্রায় ৪,০০০–৫,০০০ টন—ভারত থেকে আমদানি করতে হয়।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এখন পর্যন্ত পাটের ৫৭টি জাত উদ্ভাবন করেছে, কিন্তু উৎপাদন ব্যয় ও ফলন কম হওয়ায় সেগুলোর ব্যবহার সীমিত। অধিকাংশ কৃষক এখনও আমদানি করা জেআরও ৫২৪ জাতের বীজ ব্যবহার করেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে জেআরও ৫২৪ ও কেনাফ বীজের আমদানি হয়েছে ৪,১১৬ টন।
নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের কৃষক আহসান হাবিব বলেন, স্থানীয় বীজে ফলন না হওয়ায় তিনি ভারতীয় জাত ব্যবহার শুরু করেছেন। "জেআরও ৫২৪-তে ফসল ভালো হয়," তিনি বলেন।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নত দেশীয় জাত যেমন কেনাফ–৪–এর চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক নার্গীস আখতার (রুটিন দায়িত্ব) টিবিএসকে বলেন, কৃষকরা সাধারণত বেশি লাভজনক ধান ও শীতকালীন সবজি চাষে অগ্রাধিকার দেন, ফলে পাটবীজ উৎপাদনে আগ্রহ কম থাকে। তিনি বলেন, "পাটবীজে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বিজেআরআই, বিএডিসি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে (ডিএই) সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।"
ভুট্টার সাফল্যের পিছনেও আমদানি করা বীজ
গত এক দশকে দেশের ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। বর্তমানে চাল ও আলুর পর সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় ভুট্টা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সর্বশেষ অর্থবছরে ৭৩ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে, যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে-ও ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টন।
মূলত পোলট্রি, পশু ও মৎস্য খাদ্য ছাড়াও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য হিসেবে ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে। ফলে সমানতালে বাড়ছে উৎপাদনও। তবে এর পিছনে মুখ্য ভূমিকা রাখছে আমদানিকৃত বীজ। বীজ খাত সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, দেশে চাহিদার প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ বীজই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়।
বছরে প্রায় ১৫ হাজার টন ভুট্টা বীজের প্রয়োজন হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভুট্টার বীজ আমদানি হয়েছে ১৪ হাজার ৮১৭ টন। আমদানি হওয়া এসব বীজের প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ ভারত থেকে আসে। আর বাকী অংশ থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে।
শাকসবজি, হাইব্রিড ধান, তৈলবীজ ও ডাল
বাংলাদেশে বছরে এখন প্রায় ৮০ লাখ টন শাক-সবজি উৎপাদন হয়। যদিও সবজির উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের একটি বড় অংশ আমদানি হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশে বছরে প্রায় ৩,১৩০ টন সবজির বীজ প্রয়োজন। যদিও বেসরকারি খাতের তথ্য বলছে, প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার টন সবজি বীজের চাহিদা রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সবজির বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় ১,৮০০ টন, এছাড়া একই অর্থবছরে শাকের বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় ৮৫০ টন। আমদানি করা সবজি বীজের মধ্যে মুলা (১,১২৬ টন), ঢেঁড়স (৩৪১ টন), মরিচ (৯০ টন) ও করলা (৩৯ টন) প্রধান। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, বিট ও হাইব্রিড মুলার বীজ প্রায় পুরোপুরি বিদেশি উৎস থেকে আসে।
হাইব্রিড ধান বর্তমানে মোট আবাদি জমির ১৬ শতাংশে চাষ হয়, যা মোট উৎপাদনের ২১ শতাংশ জোগান দেয়। এর প্রায় ২০ শতাংশ বীজ আমদানি করা হয়। আবার দেশে উৎপাদিত হাইব্রিড বীজের একটি অংশের প্যারেন্ট বীজ ভারত, চীন ও ভিয়েতনাম থেকে আসে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. খালেকুজ্জামান জানান, "আমরা এখন পর্যন্ত আটটি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছি, আরও দুটি অনুমোদনের অপেক্ষায়। বিএডিসি ও বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে এর বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে।"
তৈলবীজের ৮৫–৯০ শতাংশ ও ডালের ৮০ শতাংশ বীজ আমদানি করা হয়। বছরে তৈলবীজের চাহিদা ২৬ হাজার ৯৪৭ টন এবং ডালের ২৩ হাজার ১২৭ টন।
নির্ভরশীলতায় বাড়ছে ঝুঁকি
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করছেন—আমদানি করা বীজের ওপর এই বাড়তি নির্ভরতা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তিকে দুর্বল করে তুলতে পারে। ফলে বৈদেশিক সরবরাহ যেকোনো কারণে ব্যাহত হওয়ার বা বাজারে অস্থিতিশীলতার বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের কৃষি উৎপাদনে।
জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, "বীজ একটি সংবেদনশীল উপাদান। সময়মতো মানসম্মত বীজ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, যা সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি বীজনিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করা এখন জরুরি।"
তিনি সতর্ক করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন বা রপ্তানিকারক দেশের রাজনৈতিক বা জলবায়ুগত সমস্যা আমদানিতে বড় ধাক্কা আনতে পারে। ফলে খাদ্য উৎপাদনও হুমকিতে পড়তে পারে। একারণে বীজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জুররি। নিজস্বভাবে মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে।
স্থানীয় উদ্ভাবনে সহায়তা চায় বেসরকারি খাত
বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোর দাবি, স্থানীয়ভাবে বীজ উৎপাদনে তাদের খরচ ও আবহাওয়াগত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
লাল তীর সিড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, "বিদেশে পাটবীজ সস্তা, কিন্তু বাংলাদেশে এর উৎপাদন খরচ বেশি। ভারতে প্রচুর পতিত জমি আছে, তারা সেখানে বীজ উৎপাদন করে। একারণে তাদের খরচ কম। বাংলাদেশের উৎপাদনের জন্য জায়গা কম। আবার ভুট্টার ক্ষেত্রে এর বীজ হারভেস্ট এরপর সাথে সাথে ড্রাই করে প্যাকেট করে ফেলতে হয়। বাংলাদেশে এতো বড় পরিমাণে ক্যাপাসিটি তৈরি হয়নি। সরকারিভাবে বীজের ছাড়করণেও পদ্ধতিগত জটিলতা রয়েছে। সেগুলো কাটাতে হবে। বেসরকারি খাত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি গবেষণা করে জাত উদ্ভাবন করছে। সরকারকে এতে সাপোর্ট দিতে হবে।"
সুপ্রিম সিড কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুম বলেন, "দেশীয় জাতগুলো এখনো আমদানিকৃত জাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। সরকারি গবেষণার ফলাফল বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করা গেলে আমদানি নির্ভরতা অনেক কমানো যাবে। তবে হাইব্রিড সবজি বীজ এখনও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা কঠিন।"
তিনি আরও বলেন, "কেউই আমদানিকৃত বীজের ওপর নির্ভর করতে চায় না, কারণ তা সরাসরি খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা স্থানীয়ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব।"
এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এফএইচ আনসারী আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, "দিন দিন বেসরকারি খাতের বীজ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ছে। এখন অনেক সবজির হাইব্রিড বীজ আমরা দেশেই উৎপাদন করছি। হাইব্রিড ধান বীজও উৎপাদন করছি। হাইব্রিডের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় স্থানীয় বীজ উৎপাদন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সরকার ও বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করলে খুব দ্রুতই বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে।"