সাবেক উপাচার্য এক বছর ধরে সেজে ছিলেন ওমানের ‘হাই কমিশনার’, ধরা পড়লেন ‘পদবি’র ভুল ব্যবহারে

মাত্র দুটি শব্দের ভুলে ফাঁস হলো ৬৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তির প্রতারণা। ভারতের সাবেক উপাচার্য ড. কে এস রানা টানা এক বছর ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন।
জানা যায়, ভারতের গাজিয়াবাদ পুলিশ কমিশনারেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তরে মঙ্গলবার একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে লেখা ছিল, 'সুলতানেট অব ওমান (মাসকাট)-এর হাই কমিশনার ড. (প্রফেসর) কে এস রানা-র জন্য প্রয়োজনীয় প্রটোকল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।'
শুরুতে পুলিশ এতে কোনো অস্বাভাবিকতা খুঁজে পায়নি। তবে গাজিয়াবাদ পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার মিশ্র চিঠির একটি ভুল লক্ষ্য করেন। তিনি বলেন, 'ওমান কমনওয়েলথভুক্ত দেশ না হওয়ায় সেখানে "হাই কমিশনার" পদবি থাকার কথা নয়। এতে সন্দেহ হওয়ায় আমি আমার দলকে চিঠির উৎস যাচাই করতে বলি।'
কূটনৈতিক নিয়ম অনুযায়ী, 'হাই কমিশনার' শব্দটি কেবল কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যাচাই শেষে বৃহস্পতিবার কে এস রানাকে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার, তথ্য গোপন ও নকল নথি প্রস্তুতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে জানা যায়, রানা ভারতের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তার কথিত 'ব্যক্তিগত সচিব' দেব কুমারের লেখা চিঠিটিই ছিল বড় সূত্র। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, রানা বৃহস্পতিবার গাজিয়াবাদের কৌশাম্বিতে এক 'গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে' অংশ নেবেন।
পুলিশ চালাকি করে রানাকে জানায়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) কৌশাম্বিতে পৌঁছানোর পরই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ জানায়, দিল্লির লাজপত নগরের বাসিন্দা রানা ২০১৮-২০২০ সালে উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এরপর তিনি আলমোড়ার উত্তরাখণ্ড রেসিডেনশিয়াল ইউনিভার্সিটি, রাজস্থানের মেওয়ার ইউনিভার্সিটি ও জয়পুরের ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য ছিলেন।
কুমায়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সাবেক সহকর্মীরা জানান, রানা সত্যিই উপাচার্য ছিলেন এবং সর্বশেষ তিনি মেওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদে ছিলেন বলে তারা শুনেছেন।
গাজিয়াবাদের ডিসিপি পাটিল নিমিশ দশরথ জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রানা নিজেকে ওমানের হাই কমিশনার পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক প্রটোকল কাজে লাগিয়ে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এর আগে তিনি মথুরা ও ফরিদাবাদে ভিআইপি প্রটোকল নিয়েছিলেন এবং দিল্লির এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে 'ওমানের হাই কমিশনার' হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ওমানের দূতাবাস ও রানার আগের কর্মস্থলগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আগ্রার ড. ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এক সময় প্রাণিবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব ও মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ছিলেন। এছাড়া পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একটি সংস্থায় কাজ করতেন এবং পরে ব্যাঙ্গালুরু-ভিত্তিক একটি বাণিজ্য সংস্থায় 'ট্রেড কমিশনার' পদে নিযুক্ত হন। সেখান থেকেই তার পরিচয় বদলে 'ওমানের হাই কমিশনার' হয়।
রানাকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার গাজিয়াবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ভিআইপি নিরাপত্তা ও সুবিধা ভোগ করতেই তিনি ভুয়া পরিচয় নিয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান, 'আমি আমার ব্যক্তিগত মার্সিডিজ জিএল ৩৫০ গাড়িতে কূটনীতিকদের জন্য ব্যবহৃত নীল রঙের নম্বরপ্লেট লাগিয়েছিলাম। গাড়ির সামনে ও পেছনের কাচে সুলতানেট অব ওমানের স্টিকার এবং বিশ্ব মানবাধিকার সুরক্ষা কমিশনের লাল স্টিকার বসিয়েছিলাম।'
পুলিশ ইতোমধ্যে গাড়িটি জব্দ করে রানার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩১৯(২) (প্রতারণা), ৩১৮(৪) (জালিয়াতি) এবং ৩৩৬(৩) (জাল নথি প্রস্তুত) ধারায় মামলা দায়ের করেছে।