গাজার মাতৃসেবা ও প্রজনন কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা ‘গণহত্যার’ শামিল : জাতিসংঘের প্রতিবেদন

ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সময় পরিকল্পিতভাবে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করেছে এবং যুদ্ধ কৌশল হিসেবে যৌন সহিংসতা চালিয়েছে—এমন অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার জেনেভাভিত্তিক স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েল 'ইচ্ছাকৃতভাবে' গাজার প্রধান প্রজনন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংস করেছে এবং একই সঙ্গে গর্ভধারণ, প্রসব ও নবজাতক সেবার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রবেশে বাধা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করেছে, যা গণহত্যার অপরাধের অংশ। এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের সময় এই ঘটনা ঘটে।
তবে জেনেভায় ইসরায়েলি মিশন এক বিবৃতিতে এই অভিযোগকে 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন' আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের তদন্তকে 'মিথ্যা অভিযোগ' বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, 'জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল নামে পরিচিত এই অ্যান্টি-ইসরায়েলি সার্কাস অনেক আগেই একটি অ্যান্টি-সেমিটিক, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সন্ত্রাসবাদ-সমর্থক সংগঠন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।'
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার মাতৃসদন হাসপাতাল ও প্রসূতি ওয়ার্ডগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এর পাশাপাশি গাজার প্রধান ইন-ভিট্রো ফার্টিলিটি (আইভিএফ) ক্লিনিক 'আল-বাসমা'ও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে আল-বাসমা ক্লিনিকে গোলাবর্ষণ করে, যেখানে সংরক্ষিত প্রায় ৪ হাজার ভ্রূণ ধ্বংস হয়। এই ক্লিনিকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতেন।
তদন্ত কমিশন জানায়, ভবনটি সামরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ধ্বংসযজ্ঞ গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জন্মহার কমানোর উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে, যা গণহত্যার শামিল।
জেনেভায় মঙ্গলবার ও বুধবার অনুষ্ঠিত জনসাক্ষ্য গ্রহণের পর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। জনসাক্ষ্যে যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য শোনা হয়।
তদন্ত কমিশন জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক নারীদের হত্যা করেছে, যা 'ইচ্ছাকৃত হত্যাযজ্ঞের' অপরাধের মধ্যে পড়ে।
এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে 'ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়মিত কৌশলের' অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে কাপড় খুলতে বাধ্য করা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণের হুমকি এবং যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলোকে গণ্য করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের সাবেক মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, 'জাতিসংঘ অবশেষে গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করছে, যা এতদিন এড়িয়ে চলা হচ্ছিল।'
তিনি আরও বলেন, গাজায় গণহত্যার প্রমাণ সুস্পষ্ট এবং জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনেক দেরিতে প্রকাশিত হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন না যে আন্তর্জাতিক আদালতগুলো (আইসিজে বা আইসিসি) এই অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেবে।
'এটি আইনি প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হবে কি না, আমার তা মনে হয় না,' বলেন গ্রিফিথস।