ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি আলেকজান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে হামাসের

গাজার ভেতরে ইসরায়েলি-আমেরিকান সেনা এডান আলেকজান্ডারকে আটক রাখা যোদ্ধাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে হামাস। সম্প্রতি ওই জায়গায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পর থেকেই তারা তাদের খোঁজ পাচ্ছে না বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। খবর বিবিসির।
২১ বছর বয়সী সেনা আলেকজান্ডারকে নিয়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল হামাস। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের দেওয়া ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে প্রথম দিনেই তার মুক্তির দাবি জানানো হয়েছিল। তবে হামাস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
মঙ্গলবার হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা এক বিবৃতিতে বলেন, 'সেনা এডান আলেকজান্ডারকে যে ডেলর কাছে বন্দি ছিল, সেই দলের অবস্থানে সরাসরি হামলার পর থেকে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা এখনও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।'
তবে কখন থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সে বিষয়ে হামাস কিছু বলেনি। পাশাপাশি, তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণও দেয়নি। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলে আসছে যে, তারা যেসব জায়গায় বন্দিরা থাকার আশঙ্কা করে, সেসব স্থানে হামলা থেকে বিরত থাকে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। বর্তমানে তাদের মধ্যে ৫৯ জন গাজায় রয়েছে এবং ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, আর আলেকজান্ডার ছিলেন জীবিত একমাত্র মার্কিন নাগরিক বলে মনে করা হয়।
মঙ্গলবার হামাস এক ভিডিও বার্তায় বলে, যদি ইসরায়েল অভিযান চালাতে থাকে, তাহলে 'বাকি জিম্মিদের মরদেহই শুধু পরিবারের কাছে ফিরবে'।
শনিবার হামাস আলেকজান্ডারের একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান যেন তার মুক্তির জন্য আলোচনা শুরু হয়।
হামাসেরএক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে প্রথম সপ্তাহেই অর্ধেক বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আলেকজান্ডারের মুক্তিকে 'সদিচ্ছার প্রতীক' হিসেবে প্রস্তাবের প্রথম দিনেই তাকে ছাড়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
চলতি বছরের শুরুতে দুই মাসের যুদ্ধবিরতিতে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছিল এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল।
কিন্তু যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ১৮ মার্চ ইসরায়েল আবার অভিযান শুরু করে।
টেল আভিভে জন্ম নেওয়া আলেকজান্ডার নিউ জার্সিতে বড় হন। তিনি গাজার সীমান্তে একটি এলিট ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটে দায়িত্ব পালন করছিলেন, সেখান থেকেই ৭ অক্টোবর হামলার সময় তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তার বাবা, আদি আলেকজান্ডার, সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম নিউজনেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর কাছে প্রশ্ন রাখেন: 'আপনি যদি যুদ্ধ বন্ধ না করেন, কিংবা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে না যান, তাহলে কীভাবে বন্দিদের উদ্ধার করবেন?'
হামাস জানিয়েছে, তারা এখনও যাদের আটক করে রেখেছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত—শর্ত শুধু একটি, ইসরায়েলকে পুরোপুরি যুদ্ধ বন্ধ করে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
মঙ্গলবার হামাস আবারও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, 'মিশরের মাধ্যমে পাঠানো প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ বা সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি সেখানে ছিল না। হামাস তাই পুরো প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে।'
গাজায় ইসরায়েলের পুনরায় অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ১,৬৩০ জন নিহত হয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১৮ মাসের এই যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজারে।