নিরস্ত্রীকরণের শর্ত থাকা ইসরায়েলি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস

ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস, যেখানে ছয় সপ্তাহের অস্ত্রবিরতির বিনিময়ে সংগঠনটির নিরস্ত্রীকরণের দাবি জানানো হয়। খবর বিবিসির।
যুদ্ধবিরতির সংলাপ সম্পর্কে অবগত এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, ওই প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রতিশ্রুতি বা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত ছিল না — যা হামাসের প্রধান দাবির অন্তর্ভুক্ত। এর বিনিময়ে হামাসের কাছে থাকা জীবিত জিম্মিদের অর্ধেককে মুক্তির আহ্বান জানানো হয়।
এমন সময়ে এটি ঘটেছে, যখন ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। খান ইউনিসে একটি ফিল্ড হাসপাতালের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় একজন নিরাপত্তা প্রহরী নিহত হন এবং আরও নয়জন আহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে জাতিসংঘের একটি সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, "গাজায় মানবিক পরিস্থিতি এখন সম্ভবত গত ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।" ইসরায়েল ছয় সপ্তাহ ধরে গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না — যা এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম অবরোধ।
ইসরায়েলের দাবি, গাজায় যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে— কিন্তু জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং এই অবরোধকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করবে বলে জানিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অবরোধ হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর লক্ষ্যে আরোপ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিকসহায়তা বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, "মাঠপর্যায়ের অংশীদাররা জানাচ্ছেন, বর্তমানে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হচ্ছে এবং বেঁচে থাকার জন্য যেসব অবকাঠামো প্রয়োজন, সেগুলোর একটি বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।"
জানা গেছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কায়রো ও ওয়াশিংটন সফরের কয়েক দিনের মধ্যেই আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তাদের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠায়।
এরপর হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হায়্যার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কায়রোতে মিশরের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
উক্ত ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, "মিশরের মাধ্যমে হামাসকে যে ইসরায়েলি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তাতে স্পষ্টভাবে সংগঠনটির নিরস্ত্রীকরণের কথা বলা হয়েছে — অথচ ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ শেষ করার বা সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তাই হামাস পুরো প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে।"
এই প্রথমবারের মতো ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির অগ্রগতির পূর্বশর্ত হিসেবে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দাবি করল — যা হামাসের জন্য একটি রেডলাইন।
ওই ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েল কেবল জিম্মি উদ্ধার করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সময়ক্ষেপণ করছে।
বর্তমানে গাজায় ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত।