রাফায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩১, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থা

গাজার রাফায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। রোববারের (১ জুন) এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ঘটনার সময় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হাজারো মানুষ মানবিক সহায়তা নিতে আসছিলেন।
এই হামলাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুদ্ধবিরতি আলোচনা, যেখানে ইসরায়েল ও হামাস একে অপরকে দোষারোপ করছে।
খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত প্যারামেডিক আবু তারেক বলেন, 'এখানে শহীদ ও আহত অনেক। পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ। আমি অনুরোধ করব, কেউ যেন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে না যায়।'
প্যালেস্টিনিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, রাফার ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে ২৩ জন নিহত এবং ২৩ জন আহতকে উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মধ্য গাজায় একটি পৃথক স্থানে আরও ১৪ জন আহত হয়েছে, যেখানে জিএইচএফ-ই সাহায্য বিতরণ করছিল।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত নাসের হাসপাতালে অন্তত ৩১টি মরদেহ এসেছে।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এ ধরনের হামলার খবর খতিয়ে দেখছে এবং এখনও সেনাবাহিনীর গুলিতে হতাহতের কোনও তথ্য তাদের জানা নেই।
জিএইচএফ দাবি করেছে, রাফার ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে কেউ হতাহত হয়নি এবং তাদের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। বরং তারা হামাসকে 'ভুয়া প্রতিবেদন ছড়ানো'র জন্য দায়ী করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একটি ক্রেন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায় এবং একটি ট্যাংক সহায়তা নিতে আসা মানুষের দিকে হামলা করে।
রয়টার্সের ফুটেজে আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে নাসের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা সরকার অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোকে 'মৃত্যুকূপে' পরিণত করেছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''ইসরায়েল মানবিক সহায়তাকে একটি 'যুদ্ধাস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করছে, যার মাধ্যমে ক্ষুধার্ত মানুষকে জড়ো করে হত্যা করছে।"
জিএইচএফ- গত মাসে গাজায় কার্যক্রম শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সরকারের সমর্থনে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি তিনটি কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত এবং এর নির্বাহী পরিচালক গত মে মাসে পদত্যাগ করেন। প্রতিষ্ঠানটির অর্থায়ন উৎস এখনও পরিষ্কার নয়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কেউ হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা যাচাই করা হবে।
রোববারের ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন একটি নতুন আরব- মার্কিন মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েল ও হামাস একে অপরকে দায়ী করছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কিছু সংশোধন চায়। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত এটিকে 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হামাস জানিয়েছে, তারা ১০ জন জীবিত এবং ১৮ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি।
তবে তারা যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে, যা ইসরায়েল মেনে নিচ্ছে না।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা মার্কিন দূত উইটকফের পরিকল্পনায় সম্মত। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়।
এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের অধিকাংশ বেসামরিক নাগরিক।