যুক্তরাষ্ট্রের গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত ইসরায়েল, প্রত্যাখ্যান করবে হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস বলেছে, প্রস্তাবের শর্তগুলো তাদের চাওয়া পূরণ করছে না, তাই তারা এটি এখনও পর্যালোচনা করছে এবং শিগগিরই আনুষ্ঠানিক উত্তর জানাবে। তবে বিবিসিকে হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করবে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই প্রস্তাবে সই করেছে। যদিও প্রস্তাবের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, তবে এ বিষয়ে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, প্রস্তাবের প্রথম ধাপে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের কথা রয়েছে।
আর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই প্রস্তাব অনুযায়ী হামাস দুই ধাপে ১০ জন জীবিত জিম্মি ও ১৮ মৃতদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করবে। এর বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তারা এই প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে। তবে তিনি জানান, প্রস্তাবের শর্তগুলো ইসরায়েলের পক্ষেই—এতে যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার বা মানবিক সহায়তার প্রবেশের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই, যা হামাস দাবি করে আসছে।
আর হামাসের আরেক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবে হামাসের মূল দাবি, যেমন যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই গোষ্ঠীটি এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। তিনি জানান, হামাস যথাসময়ে তাদের লিখিত উত্তর জানাবে।
ইসরায়েলি সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার জিম্মিদের পরিবারের সাথে আলোচনায় উইটকফের পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গভীর মতপার্থক্যের কারণে মার্চে দুই মাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে হলে হামাসকে অস্ত্রত্যাগ ও তাদের সামরিক এবং প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে দিতে হবে। সেই সঙ্গে গাজায় এখনও আটক ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।
অন্যদিকে হামাস ইসরায়েলের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, ইসরায়েলকে গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
গত ১৮ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে। ইসরায়েল বলেছে, তারা হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যাতে গোষ্ঠীটি এখনো আটক ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯ মে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় অভিযান আরও জোরালো করে। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজার সব অংশের নিয়ন্ত্রণ নেবে। পরদিন তিনি জানান, দুর্ভিক্ষ রোধে গাজায় 'সীমিত' পরিমাণ খাদ্য ঢুকতে দেওয়া হবে।
গত ১০ সপ্তাহে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনার কারণে আরও ৬ লাখ মানুষ গাজায় নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাতিসংঘ-সমর্থিত আইপিসি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামনের কয়েক মাসে প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে পড়তে পারেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিটকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সৌদি মালিকানাধীন আল-আরাবিয়ার প্রতিবেদনের সত্যতা সম্পর্কে, যেখানে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, 'আমি নিশ্চিত করতে পারি যে, বিশেষ দূত উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট হামাসের কাছে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, যা ইসরায়েল সমর্থন করেছে এবং সই করেছে। এই প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পাঠানোর আগে ইসরায়েল এর পক্ষে সায় দিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আলোচনা চলমান রয়েছে এবং আমরা আশা করছি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে যাতে সব জিম্মিকে বাড়ি ফেরানো সম্ভব হয়।'
তবে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা পরে বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই চুক্তি হামাসের আলোচক এবং উইটকফের মধ্যে পূর্ববর্তী আলোচনার সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি জানান, এই প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই, এবং পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতির সময় যে মানবিক প্রটোকল অনুযায়ী প্রতিদিন শত শত ট্রাক গাজায় ঢুকতো, সেই ব্যবস্থায় ফেরার নিশ্চয়তাও নেই।
তবুও তিনি বলেছেন, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে এবং শিগগিরই লিখিত উত্তর দেবে।