অ্যান্টার্কটিকায় ব্যাপক মিথেন নিঃসরণ, উষ্ণায়নের বড় ঝুঁকি

স্প্যানিশ বিজ্ঞানীদের একটি দল অ্যান্টার্কটিক মহাসাগরে মিথেনের 'ব্যাপক নিঃসরণ' শনাক্ত করেছে। এই গ্যাসের নিঃসরণ যদি বেড়ে যায়, তবে তা পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে পরিবেশে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে।
মিথেন গ্যাসের পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ানোর ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি।
অভিযানের প্রধান ভূতত্ত্ববিদ রিকার্ডো লিওন এবং রজার উরগেলেস এল পাইসকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, তারা 'সার্মিয়েন্টো দে গাম্বোয়া' জাহাজে করে অনুসন্ধানে গিয়েছিল। তারা মহাসাগরে ৭০০ মিটার দীর্ঘ এবং ৭০ মিটার প্রশস্ত মিথেন নিঃসরণ খুঁজে পেয়েছেন।
এই নিঃসরণের উৎস অনুসন্ধানে গত ১২ জানুয়ারি বিজ্ঞানীরা মহাসাগরের তলদেশে গিয়ে মিথেনের বিরাট মজুত খুঁজে পান।
এই যৌগটি প্রায় ২০ হাজার বছর আগে জৈব পদার্থের পচনের মাধ্যমে মিথেন হাইড্রেট আকারে মহাসাগরের তলদেশে জমা হয়েছিল।
বার্সেলোনায় অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের উরগেলেস বলেন, 'এটি ঠিক বরফের মতো, এতে আগুনে ধরিয়ে দিলে এটি পুড়ে যাবে।'
ধারণা করা হয়, বিপুল আকারের অ্যান্টার্কটিক বরফের স্তর পাতলা হয়ে যাওয়ায়, যা গত বরফ যুগের শেষে শুরু হয়েছিল, ভূমির উপর বরফের চাপ কমে গেছে এবং মহাদেশের স্থলভাগের উচ্চতা বাড়ছে। এই ঘটনাকে পোস্ট-গ্লেসিয়াল রিবাউন্ড বলা হয়। এর ফলে বহু হাজার বছর ধরে মহাসাগরের তলদেশে জমাট বেধে থাকা মিথেন নিঃসরিত হতে শুরু করে।
গবেষকরা অ্যান্টার্কটিকার বিভিন্ন প্রান্তে মিথেন নিঃসরণের উৎস সন্ধানে বের হয়েছিলেন। কেননা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর একটি এটি। মাত্র ৫০ বছরে এখানকার তাপমাত্রা তিন ডিগ্রিরও বেশি বেড়েছে।
উরগেলেস সতর্ক করে বলেছেন, 'আমরা অনুমান করেছি এই অঞ্চলে মিথেন হাইড্রেটে প্রায় ২৪ গিগাটন কার্বন জমা রয়েছে, যা সারা পৃথিবীর সব মানুষের দুই বছরে নির্গমনের সমান।' বরফে জমে থাকা মিথেন এখন গ্যাসে পরিণত হচ্ছে।
স্পেনের জিওলজিক্যাল অ্যান্ড মাইনিং ইন্সটিটিউটের লিওন বলেছেন, 'এই ঘটনা আগেই আর্কটিকে দেখা গেছে, তবে অ্যান্টার্কটিকায় প্রথমবারের মতো এটি শনাক্ত করা হয়েছে।'

তাদের অভিযানের শেষ দিন গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার দল অ্যান্টার্কটিকার কিং জর্জ দ্বীপে এল পায়েসের সাংবাদিকের এসব তথ্য জানান।
তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের ফলাফল থেকে জানা যায়, মহাসাগরের ভূগর্ভস্থ ফাটল দিয়ে এই গ্যাস নিঃসরিত হয় এবং কাদার আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে মহাসাগরের তল থেকে শত শত মিটার উপরে উঠে আসে।
'সার্মিয়েন্টো দে গাম্বোয়া' গবেষণা জাহাজটি স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের (সিএসআইসি) অংশ। এটি প্রায় এক মাস ধরে বিপজ্জনক অ্যান্টার্কটিক মহাসাগরে ঘুরে ঘুরে পানি এবং পলি সংগ্রহ করছে এবং মাটির নিচের অংশের এক্স-রে করছে।
বরফের মতো মিথেন হাইড্রেটসও কম তাপমাত্রা এবং উচ্চ চাপে জমাট বেধে থাকে। তবে মহাসাগরের উষ্ণতা এবং এন্টার্কটিক ভূখণ্ডের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে এগুলো গ্যাসে পরিণত হয় এবং নিঃসরিত হতে শুরু করে।
গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, নিঃসরিত মিথেন মহাসাগরের পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫০ মিটার উপরে গিয়ে দ্রবীভূত হয়। ভবিষ্যতে এই নমুনাগুলোর বিশ্লেষণ থেকে জানা যাবে যে গ্যাসটি বায়ুমণ্ডলে কতটা ছড়িয়ে পড়ে।
ভূতত্ত্ববিদ রিকার্ডো লিওন এবং রজার উরগেলেস আরেকটি হুমকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
সামুদ্রিক পললের অস্থিতিশীলতা মহাদেশীয় ঢালে বিশাল ভূমিধসের কারণ হতে পারে, যার ফলে সুনামিও হতে পারে।
উরগেলেস সতর্ক করে বলেছেন, 'মিথেন হাইড্রেট গ্যাসে রূপান্তরিত হলে,এটি ১৬০ গুণ বেশি স্থান দখল করে। যদি এই মিথেন গ্যাস জমে থাকা অবস্থায় দ্রুত বের না হয়, তবে এটি বড় ভূমিধস বা সুনামি সৃষ্টি করতে পারে। এর আগেও পৃথিবীতে এমন এক ধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল। এর পলে ৮ হাজার ১৫০ বছর আগে সুনামি হয়ে উত্তর ইউরোপের উপকূলগুলোতে বড় ধ্বংসলীলা ঘটেছিল।
এখনও নরওয়ের উপকূল, ডেনমার্ক এবং এমনকি গ্রিনল্যান্ডেও সেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভূতাত্ত্বিক চিহ্ন পাওয়া যায়।