সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাসে কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। খবর বিবিসি'র।
৩০ দিনের এই বিরতি ট্রাম্পের সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের একাধিক আলোচনার পর ঘোষণা করা হয়। কানাডা ও মেক্সিকো সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়াতে ও মাদক চোরাচালান দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কানাডা একজন 'ফেন্টানিল জার' নিয়োগ দেবে, আর মেক্সিকো সীমান্তে ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করবে।
এর আগে, ট্রাম্প একাধিকবার কানাডা এবং মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে অবৈধ মাদক কারবারি এবং অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশের অভিযোগ করেছেন। এরপরই তিনি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানির উপর ২৫ শতাংশ এবং চীন থেকে আমদানির উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন।
কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ট্রাম্প তার শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশ পাল্টা বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডরের প্রিমিয়ার অ্যান্ড্রু ফিউরি বলেছেন, ট্রাম্প শুল্ক আরোপ স্থগিত করায় পুরো কানাডা "স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে"। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা এখনো রয়েছে এবং ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য কানাডিয়ানদের প্রস্তুত থাকা উচিত।
ফিউরি বলেন, "আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, মিত্র ও পরিবারের মতো সম্পর্ক থাকা দেশের এই আক্রমণে.আমরা কানাডিয়ানরা কিছুটা বিভ্রান্ত বোধ করছি।"
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের মতোই কানাডিয়ানরা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা ও ফেন্টানিল সংকট মোকাবিলায় আগ্রহী। তবে দুই দেশের অর্থনীতি ব্যাহত করাকে এর সমাধান হিসেবে দেখে না কানাডা।
ফিউরি বলেন, "কানাডিয়ানদের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প রয়েছে। আমরা এটাকে শুধু অর্থনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখি না, বরং আমাদের সার্বভৌমত্ব ও মূল্যবোধের জন্যও সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করি।"
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চঝুঁকির বাণিজ্য কৌশল কার্যকর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, কারণ মেক্সিকো ও কানাডা উভয়ই কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তা ও ফেন্টানিল চোরাচালান রোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে ছাড় আদায়ের এই কৌশল ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" এজেন্ডার জন্য একটি জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে মার্কিন ভোক্তারা ব্যাপক বাণিজ্যযুদ্ধের আর্থিক চাপ ছাড়াই তার অভ্যন্তরীণ নীতির প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন।
সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, "অর্থনৈতিকভাবে এবং সবকিছু আদায়ে শুল্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। আপনি যদি স্বর্ণের হাঁড়ি হন, তাহলে শুল্ক খুবই ভালো, খুবই শক্তিশালী এবং এটি আমাদের দেশকে আবারও সমৃদ্ধ করবে।"
এ ধরনের শুল্ক কৌশল ট্রাম্পের জন্য নতুন নয়। তার প্রথম মেয়াদে তিনি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করায় মেক্সিকো, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তখনকার শুল্কের পরিসর তুলনামূলক সীমিত ছিল।
এবার, ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার থেকেই চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। সোমবার ট্রাম্প ও চীনা নেতাদের মধ্যে কোনো আলোচনার কথা জানা যায়নি। তবে ট্রাম্প বলেন, "সম্ভবত আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে" একটি ফোনালাপ হতে পারে।
তিনি ১০ শতাংশ শুল্ককে "প্রাথমিক পদক্ষেপ" হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, কোনো চুক্তি না হলে শুল্কের হার "অনেক বেশি মাত্রায়" হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশের বেশি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ৩০ দিনের সময়সীমা শেষে ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে হুমকি বাস্তবায়ন করবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই অনিশ্চয়তা ব্যবসায়ীদের আমেরিকান বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে, নতুন কারখানা নির্মাণ এবং কর্মী নিয়োগে স্থগিত রাখতে বাধ্য করতে পারে; যতক্ষণ না বাণিজ্য পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়।