লবিস্ট নিয়োগে লাভ হতো না, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও আলোচনাই করতে হয়েছে: খলিলুর রহমান

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনামের মতো মিত্রদের আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করেই শুল্ক চুক্তি করতে হয়েছে। সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করে বাংলাদেশের বিশেষ কোনো লাভ ছিল না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মর্তুজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. খলিল একথা বলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
গোলাম মর্তুজা তাঁর কাছে জানতে চান, আমরা লবিস্ট নিয়োগ করলাম না কেন, এতে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
ড. খলিলুর বলেন, ইইউ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো–এদের সঙ্গে আমেরিকার বহু বছরের সম্পর্ক, সেটা অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বা বিনিয়োগের নয়, বরং সামরিক।তারাই খুব সহজে এগ্রিমেন্ট করতে পারে নাই, কানাডা আজকেও করতে পারে নাই, ভারতও পারে নাই। তাদের লবিস্ট কী কম আছে?
'আপনি লবিস্ট দিয়ে কী করবেন, আলোচনা করবেন? এই আলোচনা লবিস্ট দিয়ে হয় না। আর দুই নম্বর কথা, আমরা লবিস্টের পেছনে কতো টাকা খরচ করতে পারব? আলোচনা হবার পরে এটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে যায়, এবং তিনি সেটাই সম্মত হলে ট্যারিফ রেটগুলো বিভিন্ন দেশ পায়। একসেস থাকতে হবে সেই পর্যায়ে, শেষমুহূর্তে এসে আমরা কোনো লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ করলে–সে একসেস পাবে? পাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
গোলাম মর্তুজা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনার শুরু থেকে একটি সমালোচনা শোনা গেছে যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে— তারা যোগ্য কিনা, তারা সক্ষম কিনা নেগোসিয়েশনে। আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক মানুষ এই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
আপনি যেহেতু শুল্ক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন, তাই আপনার কাছে জানতে চাই এ প্রশ্ন সম্পর্কে আপনার কী বলার আছে।
ড. খলিলুর: দেখুন সংস্কৃতে একটা কথা আছে – 'ফলেন পরিচিয়ৎ' – অর্থাৎ ফল দেখলেই আপনি বুঝবেন কাজটা ঠিক হয়েছে কিনা। আমরা তো ফল আনলাম, আর আমরা যেটা আনলাম সেটা আমাদের প্রতিযোগীদের যে রেঞ্জে, সেই রেঞ্জেই। এখন কম্পিটেন্স (যোগ্যতা) নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণটা আমি নিজেও বুঝিনি। এটা হতে পারে, এটা যে শুধুমাত্র শুল্কচুক্তি নয়– এসম্পর্কে সম্ভবত সম্যক ধারণা ছিল না।
এটা যদি কেবল এমন হতো যে আমরা আমাদের ডিউটিগুলি এডজাস্ট করে নিচ্ছি আমেরিকান প্রোডাক্টের জন্য— তাহলে এই কাজটা আমরা দেড়-দুবেলাতেই করে ফেলতে পারতাম।
দুই নম্বর ও প্রধান বিষয়টি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এখানে শুল্ক বাধা একটা জিনিস। শুল্ক বাধা যেগুলো আছে, সেগুলো একটা আমদানিকারক দেশের বিভিন্ন নীতিতে প্রতিফলিত হয়। তারা চাইছে সেই নীতিগুলো পরিমার্জন করা হোক, যাতে তাদের এক্সপোর্টের ওপর বিধিনিষেধ কমে যায়।
মর্তুজা: শুল্ক বিষয়ে আলোচনায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কেন?
ড. খলিলুর: সেখানে আসার আগে তৃতীয় বিষয়টা বলে নেই। কিছু জিনিস আমাদের তাৎক্ষনিক পারচেজ করতে হবে– যাতে বাণিজ্য ঘাটতিটা আমেরিকার জন্য কিছু কমে যায়। এবং চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে, যে আইনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ দিয়েছেন, ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ইমার্জেন্সি পাওয়ার্স অ্যাক্ট, তাতে বলা আছে যদি (মার্কিন) রাষ্ট্রপতি মনে করেন, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক, কূটনীতিক কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে– এধরনের কারণে যদি তিনি বিদেশি পণ্য আমেরিকার বাজারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে সেটা তিনি করতে পারবেন। ওই আইনেই জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। সেই কারণে শুধু আমি নই, (দক্ষিণ) কোরিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজরও এর আগে আলোচনা করেছেন।
আমাদের পক্ষ থেকে যেটা চেয়েছি, সেটা হলো আমরা যেন কোনো ভূরাজনৈতিক ফাঁদে পড়ে না যাই। সেকারণেই আমরা সবসময় সচেষ্ট থেকেছি, যাতে শুল্ক নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকে।