রোববার সকাল থেকে গাজায় কার্যকর হবে যুদ্ধবিরতি: কাতার

ইসরায়েলি তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধের আশা দেখা দিয়েছে। আগামীকাল রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কার্যকর হতে চলেছে একটি যুদ্ধবিরতি। বিষয়টি আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের 'এক্স' (সাবেক টুইটার) একাউন্টে একটি পোস্ট করে জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি পোস্টে লিখেছেন, 'উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে… রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। আমাদের ভাইদের পূর্ব সতর্কতা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি, তাঁরা যেন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকেন, এবং কর্মকর্তাদের থেকে পাওয়া নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেন।'
এর আগে আজ শনিবার ভোরের দিকে ইসরায়েলের জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন পায়। মন্ত্রিসভায় ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বিশ্বের আধুনিকতম সামরিক বাহিনী আছে ইসরায়েলের। পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র, অর্থ আর এমনকী স্বেচ্ছাসেবী জনবলেও যুদ্ধ প্রস্তুতি তাদেরই সেরা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। এমন একটি শক্তির বিরুদ্ধে গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিতান্ত মামুলি অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে লড়েছেন। তবু ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধের ময়দানে হারাতে পারেনি ইসরায়েল। এই অবস্থায়, যুদ্ধের ৪৬০ দিনের বেশি সময়ের পর লড়াইয়ে বিরতি টানার কোনো চুক্তি অনুমোদন হলো।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি তিন ধাপে কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ হবে ছয় সপ্তাহের। চুক্তির আওতায়, ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, আর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ও নির্যাতিত শত শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে তেল আবিবকে।
যুদ্ধের কোনো আইন না মেনে, বাছবিচারহীন ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় গাজায় মৃত্যুর তাণ্ডব বয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, আধুনিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ এক গণহত্যা ঘটেছে গাজায়। ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ১ লাখ ১০ হাজার জনের বেশি আহত হয়েছে। তবে গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও প্রচুর মরদেহ চাপা পড়ে আছে। যার ফলে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।
এই অবস্থায়, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলি পুরুষ সেনা সদস্যসহ আরও বেশকিছু বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর থাকার মধ্যে এবিষয়ে আলোচনা হবে কাতারের মধ্যস্ততায়।
তবে হামাস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, স্থায়ী একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হলে, এবং গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা না হলে—-তাঁরা বাকী বন্দিদের মুক্তি দেবে না।
জর্ডান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হামদাহ সালহুত জানান, 'যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগের শেষ কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কী করে– সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। ঐতিহাসিকভাবেই যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে সর্বশক্তি নিয়ে হামলা করে ইসরায়েলিরা। ফলে (ফিলিস্তিনিদের মধ্যে) অনেক বেশি শঙ্কা আর ভীতিও রয়েছে।'