অপারেশন আসাদ: সিরিয়ার স্বৈরশাসকের মূল্যবান সম্পদ পাচারের গোপন বিমান অভিযান

দামাস্কাসের চারপাশ বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলার পর ২৪ বছর ধরে সিরিয়া শাসন করা স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত জেট বিমানে করে নগদ অর্থ, মূল্যবান জিনিসপত্র এবং তার সম্পদের পেছনে থাকা জটিল করপোরেট নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত গোপন নথিপত্র সরিয়ে ফেলেন।
একাধিক সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ইয়াসার ইব্রাহিম ওই বিমান ভাড়ার ব্যবস্থা করেন। ওই বিমানে করে আসাদের মূল্যবান সম্পদ, আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠ সহকারী ও প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের কর্মীদের চারটি ফ্লাইটে করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নোটিশ, সিরিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং আসাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের এক সদস্যের মতে, প্রেসিডেন্সির অর্থনৈতিক ও আর্থিক দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইব্রাহিম বাশার আল-আসাদের জন্য এক বিস্তৃত করপোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আসাদ সিরিয়ার অর্থনীতির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেখানে ইব্রাহিম প্রায়ই এই সাবেক শাসকের ছায়া হিসেবে কাজ করতেন।
২০১১ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে দমন-পীড়নের পর পশ্চিমা দেশগুলো আসাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে সেই নিষেধাজ্ঞা ইব্রাহিমের ওপরও বাড়ানো হয়, কারণ তিনি শাসকগোষ্ঠীকে সহায়তা করেছিলেন।
রয়টার্সের ফ্লাইট ট্র্যাকিং রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা গেছে, 'এমব্রেয়ার লিগেসি ৬০০' মডেলের একটি জেট সিরিয়া আসাদের পতনের আগের ৪৮ ঘণ্টায় টানা চারবার সেখানে যাতায়াত করে। বিমানটির টেইল নম্বর ছিল সি৫-এস কেওয়াই এবং এটি গাম্বিয়ায় নিবন্ধিত।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং রেকর্ড, স্যাটেলাইট চিত্র এবং বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের এক সাবেক সদস্যের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ ফ্লাইটটি ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার লাতাকিয়ার কাছের রুশ পরিচালিত হামেইমিম সামরিক বিমানঘাঁটি থেকে ছেড়ে যায়। ওই একই দিন, একই বিমানঘাঁটি থেকে রাশিয়ায় পালিয়ে যান আসাদ।

সিরিয়া থেকে আসাদের সম্পদ উদ্ধার করার এই অপারেশনের বিষয়টি আগে প্রকাশিত হয়নি। এই পরিকল্পনার সম্পর্কে জানতেন, এরকম ১৪ জন সিরীয় সূত্রের সাথে কথা বলেছে রয়টার্স। তাদের মধ্যে বিমানবন্দর কর্মী, সাবেক গোয়েন্দা ও প্রেসিডেন্ট গার্ডের কর্মকর্তা এবং আসাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের একজন সদস্য ছিলেন।
বার্তা সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে ইব্রাহিমের সহযোগীদের মধ্যকার একটি হোয়াটসঅ্যাপ আলোচনা, ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র এবং তিনটি মহাদেশের করপোরেট ও এভিয়েশন মালিকানা রেজিস্ট্রার পর্যালোচনা করেছে। যাতে আসাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী কীভাবে বিমানটির নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করেছেন, তা তুলে ধরা সম্ভব হয়।
ওই জেট বিমানে কমপক্ষে ৫ লাখ ডলার নগদ অর্থ রাখা চিহ্নহীন কালো ব্যাগ, গোপন নথি, ল্যাপটপ ও হার্ডড্রাইভ বহন করা হয়। এসব ডিভাইসে 'দ্য গ্রুপ' নামে একটি গোপন নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল, যা আসাদ ও ইব্রাহিম টেলিকম, ব্যাংকিং, রিয়েল এস্টেট, জ্বালানি এবং অন্যান্য খাতে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করতেন।
আসাদ তার শাসনামলের শেষ ব্যস্ত দিনগুলোতে, পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের কাছ থেকেও নিজের অবস্থান গোপন রেখেছিলেন। এখন তিনি রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন।
রয়টার্স আসাদ বা ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, আসাদের পতনের আগে দেশের বাইরে পাচার হওয়া রাষ্ট্রীয় অর্থ ফেরত আনতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ নিষেধাজ্ঞা ও মুদ্রা সঙ্কটে জর্জরিত সিরিয়ার অর্থনীতিকে সহায়তা দেওয়া এখন জরুরি।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আসাদের পতনের আগেই অর্থ পাচার হয়েছে। তবে কীভাবে তা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি। তিনি জানান, অর্থ কোথায় গেছে, তা এখনো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
আসাদ এই উদ্ধার অভিযানের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না, তা রয়টার্স স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে মিশনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শাসকের অনুমতি ছাড়া এই মিশন সম্ভব ছিল না।
'আপনারা এই বিমান দেখেননি'
৬ ডিসেম্বর যখন ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন ১৩ আসনের এমব্রেয়ার জেটটি দামাস্কাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে আসে।
অপারেশনের সঙ্গে জড়িত ছয়টি সূত্র জানিয়েছে, সিরিয়ার বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের পোশাক পরা এক ডজনের বেশি সদস্য বিমানবন্দরের ভিআইপি অংশ 'হল অব সেরিমনিস' এবং সেখানকার প্রবেশপথ পাহারা দিতে মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যে চারজন বলেছে, তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, কালো কাচ লাগানো কয়েকটি বেসামরিক গাড়ি ওই এলাকায় পৌঁছায়। দুইজন বলেন, এসব গাড়ি ছিল রিপাবলিকান গার্ডের, যারা প্রেসিডেন্ট আসাদ ও প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত।
রিপাবলিকান গার্ড যুক্ত থাকার অর্থ, 'এই অভিযানের নির্দেশ বাশার আল-আসাদই দিয়েছেন'—বলেছেন গার্ডের এক সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি যোগ করেন, এই গার্ড কেবল তাদের কমান্ডার—আসাদের চাচাতো ভাই জেনারেল তালাল মাখলুফ কিংবা আসাদের আদেশ মেনে চলে।
সিরিয়ান এয়ারের গ্রাউন্ড অপারেশনের প্রধান মোহাম্মদ কাইরুত বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ঘাদির আলি কর্মীদের জানান, বিমানটি নিয়ে কাজ করবে বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা সদস্যরা।
আলি তাকে বলেন: 'এই বিমানটি নামবে, আমরা সামলাব। আপনারা এই বিমান দেখেননি।'
আলি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস থেকে বিভিন্ন নির্দেশ পেতেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, তিনজন বিমানবন্দর কর্মকর্তা ও একজন প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তবে, রয়টার্স তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
শেষ মুহূর্ত
ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবার 'সি৫-এসকেওয়াই' বিমানটি আবুধাবির আল বাতেন এক্সিকিউটিভ বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল। ভিআইপি ব্যবহারের জন্য পরিচিত এই বিমানবন্দরটি গোপনীয়তার জন্য খ্যাত।
প্রথমবার, ৬ ডিসেম্বর বিমানটি দুবাই থেকে উড়ে দুপুর নাগাদ দামাস্কাসে নামে। এরপর এটি আল বাতেনে যায় এবং রাত ১০টার কিছু পর আবার দামাস্কাসে ফিরে আসে।
বিমানবন্দরের কর্মরত পাঁচজনের একজন জানান, 'প্রতিবার যখন বিমানটি নামত, তখন কয়েকটি গাড়ি দ্রুত এসে কিছু সময় অপেক্ষা করত। তারপর বিমান ছাড়ার আগেই সরে যেত।'
ঘটনাস্থলে থাকা এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা সদস্যদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা প্রধান আলি জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের লোকজন ও আসাদের আত্মীয়রা—যাদের মধ্যে কিশোর-কিশোরীরাও ছিল—প্রথম দুটি ফ্লাইটে দামাস্কাস ত্যাগ করবে। এসব ফ্লাইটে নগদ অর্থও ছিল।
রয়টার্স চারটি ফ্লাইটের যাত্রী বা মালপত্র সংক্রান্ত কোনো তালিকা (ম্যানিফেস্ট) হাতে পায়নি। ফলে তা নিশ্চিত করা যায়নি।
উক্ত সূত্রটি আরও জানায়, দামেস্ক থেকে ছেড়ে যাওয়া দ্বিতীয় ফ্লাইটে কয়েকটি ছবি ও ছোট আকারের ভাস্কর্যও ছিল।
৭ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বিমানটি আবার দামাস্কাসে ফিরে আসে এবং এক ঘণ্টারও কম সময় পর তৃতীয়বারের মতো আল বাতেনে উড়ে যায়। এবার বিমানে নগদ অর্থের ব্যাগ ছাড়াও হার্ডড্রাইভ ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছিল, যাতে আসাদের করপোরেট নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত ছিল বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও আসাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের এক সদস্য।
তাদের মতে, এসব ডেটার মধ্যে ছিল আর্থিক নথি, বৈঠকের কার্যবিবরণী, কোম্পানি ও সম্পত্তির মালিকানা, অংশীদারত্ব, নগদ লেনদেনের বিবরণ এবং অফশোর কোম্পানি ও অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য।
সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এইবার যখন বিমানটি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত আমিরাত দূতাবাসের গাড়ি ভিআইপি এলাকায় প্রবেশ করে। এতে ধারণা করা যায়, আমিরাত সরকার এই অপারেশনের কথা জানত।
রুশ ঘাঁটিতে গন্তব্য পরিবর্তন
৮ ডিসেম্বর ভোরে বিদ্রোহীরা দামাস্কাসে প্রবেশ করলে বাশার আল-আসাদ রুশ বাহিনীর সহযোগিতায় উপকূলীয় ঘাঁটি লাতাকিয়ার দিকে পালিয়ে যান। দামাস্কাস বিমানবন্দর তখন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
সেই রাতেই, মধ্যরাতের কিছু পর 'সি৫-এসকেওয়াই' বিমানটি আল বাতেন থেকে শেষবারের মতো উড্ডয়ন করে। স্থানীয় সময় ভোর ৩টার দিকে হোমস শহরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিমানটি ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেমে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং প্রায় ছয় ঘণ্টা পর আবার হোমসের আকাশে ফিরে আসে—আবুধাবির দিকে রওনা দিয়ে।
এই সময়ের মধ্যে বিমানটি লাতাকিয়ার হামেইমিম রুশ ঘাঁটিতে নেমেছিল বলে জানান এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
৯টা ১১ মিনিটে তোলা প্ল্যানেট ল্যাবসের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, হামেইমিম ঘাঁটির রানওয়েতে ওই বিমানটি দাঁড়িয়ে আছে। এর আকার-আকৃতি ও ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা বিশ্লেষণ করে রয়টার্স নিশ্চিত করে, এটি ছিল সি৫-এসকেওয়াই। ফ্লাইট ট্র্যাকিং অনুযায়ী, ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সিরিয়ায় আসা-যাওয়া করা একমাত্র প্রাইভেট বিমান ছিল এটি।

ওই ফ্লাইটে ছিলেন আহমেদ খলিল খলিল—ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও আসাদের নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। একাধিক সূত্র জানায়, তিনি একটি সাঁজোয়া গাড়িতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাসের সহায়তায় হামেইমিম ঘাঁটিতে পৌঁছান এবং সঙ্গে করে পাঁচ লাখ ডলারের নগদ অর্থ আনেন।
এই অর্থ তিনি দুইদিন আগে সিরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে তুলেছিলেন বলে জানায় আসাদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের এক সদস্য ও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাগুলো। অ্যাকাউন্টটি দামাস্কাসভিত্তিক আল-বার্জ ইনভেস্টমেন্টসের নামে, যার ৫০ শতাংশ মালিকানা ইব্রাহিমের বলে জানিয়েছে দ্য সিরিয়া রিপোর্ট।
রয়টার্স ফেসবুকের মাধ্যমে খলিলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। আল-বার্জ ইনভেস্টমেন্টস ও এসআইআইবি-তে মন্তব্য চেয়ে পাঠানো ইমেইলের প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এক সাবেক বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও আসাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের ওই সদস্য জানান, এমব্রেয়ার বিমানটি 'ড্রাই লিজ'-এর আওতায় চালানো হচ্ছিল। অর্থাৎ মালিক শুধু বিমানটি সরবরাহ করেছেন। কিন্তু পাইলট, ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ, গ্রাউন্ড সার্ভিস বা বিমা দেননি।
তবে কে বিমানটি পরিচালনা করেছে, তা নির্ধারণ করতে পারেনি রয়টার্স।
উক্ত সূত্রটি আরও জানায়, ইব্রাহিম ১১ ডিসেম্বর আবুধাবি পৌঁছান।
রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
'লেবানিজ বিমান'
আসাদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের একজন সদস্য এবং সিরিয়ার ব্যবসায়ী শ্রেণির এক সদস্য জানিয়েছেন, ইব্রাহিম 'সি৫-এসকেওয়াই' বিমানটি লিজ নিয়েছিলেন লেবাননের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ওয়েহবের কাছ থেকে। হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে ইব্রাহিমের এক সহযোগী বিমানটিকে 'লেবানিজ বিমান' বলে উল্লেখ করেন।
মোহাম্মদ ওয়েহবে দুবাই ফ্রি জোনে নিবন্ধিত 'ফ্লাইং এয়ারলাইন এফজেড কোম্পানি' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার লিঙ্কডইন প্রোফাইলে এমনটাই বলা হয়েছে।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি লিঙ্কডইনে 'সি৫-এসকেওয়াই' বিমানের ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, 'ওয়েলকাম'। একই বছরের জানুয়ারিতে আরেকটি পোস্টে তিনি জানান, বিমানটি বিক্রির জন্য দেওয়া হয়েছে।
বিমানটি ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে গাম্বিয়ার একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান 'ফ্লাইং এয়ারলাইন কোম্পানি'-এর নামে নিবন্ধিত। ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, আসাদের পতনের আগের কয়েক মাসে বিমানটি আসাদের মিত্র রাশিয়ায় যাতায়াত করেছে। তবে, ইউক্রেনে আক্রমণের কারণে রাশিয়া পশ্চিমা বিমান নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।
রয়টার্স গাম্বিয়ার ওই কোম্পানির নিবন্ধিত যোগাযোগ রক্ষাকারী ব্যক্তি শেখ তিজান জালোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
গাম্বিয়ার নথি অনুযায়ী, ফ্লাইং এয়ারলাইন কোম্পানি-এর ৩০ শতাংশ মালিক লেবাননের ওসামা ওয়েহবে এবং ৭০ শতাংশ মালিক ইরাকের সাফা আহমেদ সালেহ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, মোহাম্মদ ওয়েহবের এক ছেলের নামও ওসামা, যিনি বিমান খাতে কাজ করেন। তবে গাম্বিয়ার রেজিস্ট্রিতে থাকা ওসামা ওই একই ব্যক্তি কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
রয়টার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মোহাম্মদ ওয়েহবে দাবি করেন, 'সি৫-সি৫-এসকেওয়াই' বিমানের সিরিয়া যাতায়াতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, বিমানটি তার মালিকানায় নেই। তিনি মাঝে মাঝে একজন দালালের মাধ্যমে এটি ভাড়া নেন। তবে ওই দালালের নাম জানাননি।
তার ছেলে এতে জড়িত ছিলেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি।
ওসামা ওয়েহবে রয়টার্সের অনুরোধের জবাবে সাড়া দেননি। সাফা আহমেদ সালেহকে খুঁজে পায়নি রয়টার্স।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়