ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দামেস্ক থেকে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ: রয়টার্স

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জ্যেষ্ঠ দুজন সরকারি কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে রাজধানী ছাড়লেও তিনি কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এর আগে খবর পাওয়া যায়, সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন। শহরটির বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে লন্ডনভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, "দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ছেড়ে গেছে। সেটায় বাশার আল-আসাদ থাকতে পারেন। ওই উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের পর বিমানবন্দর থেকে সরকারি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।"
এদিকে বিদ্রোহীরা জানান, তারা দামেস্কে ঢুকে পড়েছেন। সেখানে কোনো সেনা মোতায়েন নেই।
সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহী কমান্ডার হাসান আবদুল ঘানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, "হোমস শহর 'পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন' করা হয়েছে। দামেস্কের সেদনায়া কারাগার থেকে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।"
গত ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল অভিযান শুরু করে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে তারা মাত্র ১২ দিনে দামেস্ক পৌঁছে গেছে। দ্রুত গতির এই অভিযানে বিদ্রোহীরা দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, তার মিত্র এবং বাকি বিশ্বকে হতবাক করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেছেন, "এর মাধ্যমে ১৯৭০-এর দশকে শুরু হওয়া আসাদের পরিবারের ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "আমরা খুব সম্ভবত সিরিয়ায় আসাদের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের শেষ ঘণ্টা, এমনকি হয়ত শেষ মিনিটের সাক্ষী হচ্ছি।"
তিনি বলেন, "এই পরিস্থিতি একাধিক কারণের ফল। আসাদের মিত্র ইরান ও রাশিয়া বৈশ্বিক ঘটনাবলীর চাপে দুর্বল ও মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে, এবং অনেকেই উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।"
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের শাসনের শুরু হয় ১৯৭০ সালে হাফেজ আল-আসাদের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে। ৫৪ বছর ধরে এই পরিবার দেশটির রাজনীতিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। তাদের শাসনামল চিহ্নিত হয়েছে গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য।
হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭০ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ার বাথ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং সামরিক বাহিনীতে তার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। তার শাসন ছিল কেন্দ্রীয়করণ এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রতীক।
১৯৮২ সালে হামা শহরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিদ্রোহ দমনে তার আদেশে যে গণহত্যা চালানো হয়, তাতে ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনা তার শাসনের এক কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে লেখা রয়েছে।
২০০০ সালে হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন। পেশায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বাশারকে প্রথমে একজন সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে দেখা হলেও, ক্ষমতায় আসার পর তিনি তার পিতার মতোই কঠোর নীতি অনুসরণ করেন।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে, যা আসাদের শাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
তবে, আসাদ সংলাপের পরিবর্তে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক অভিযান, বোমাবর্ষণ এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে দেশটি ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের মধ্যে ডুবে যায়।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান