ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জাতিসংঘের

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মুসলমানদের ওপর চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে করা নতুন একটি রেজল্যুশন (প্রস্তাব) গৃহীত হয়েছে।
পাকিস্তান উত্থাপিত প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে ইসলামোফোবিয়া (ইসলামভীতি) মোকাবিলায় একজন বিশেষ দূত নিয়োগেরও অনুরোধ করা হয়েছে।
এ প্রস্তাবের পক্ষে ১১৩টি ভোট পড়ে। ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ৪৪টি দেশ। তবে কোনো দেশেই বিপক্ষে ভোট দেয়নি।
২০১৯ সালের ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে এক বন্দুকধারীর হামলায় ৫১ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়। এ ঘটনার পর দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক ইসলামভীতি প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে পালনের জন্য জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অনলাইন ঘৃণামূলক বক্তব্য 'বাস্তব জীবনের সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে'
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, 'বিভাজনমূলক বক্তব্য ও ভুল উপস্থাপনা সম্প্রদায়কে কলঙ্কিত করছে। অসহিষ্ণুতা, গৎবাঁধা এবং পক্ষপাতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'অনলাইন ঘৃণামূলক বক্তব্য বাস্তব জীবনের সহিংসতাকে বাড়িয়ে তুলছে।'
তিনি জোর দেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে অবশ্যই ঘৃণা ছড়ায় এমন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে হবে৷
তিনি যোগ করেন, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য ও অন্যান্য আরও কিছু বাধা মুসলিমদের মানবাধিকার ও মর্যাদা লঙ্ঘন করছে। আর এগুলোর বেশিরভাগই ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ইহুদি জনগণ, সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ অন্যান্য দুর্বল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আক্রমণের বিস্তৃত কাঠামোর একটি অংশ।
গুতেরেস বলেন, 'আমাদের অবশ্যই সব ধরনের ধর্মান্ধতা মোকাবিলা ও নির্মূল করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'নেতাদের অবশ্যই উসকানিমূলক বক্তব্যের নিন্দা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। একসঙ্গে চলুন আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার প্রচার করি, সামাজিক সংহতি গড়ে তুলতে এবং সবার জন্য শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।'
ধর্মীয় সাক্ষরতা অবশ্যই ধর্মীয়বিদ্বেষ ঠেকাতে পারে
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, সব ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতা অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, 'আজকের বার্তাটি সম্ভবত আগের চেয়ে আরও জরুরি: আমরা সবাই পুনরায় শান্তি, সহনশীলতা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য সময় ব্যয় করছি। আমরা জানি ভয় অন্যের প্রতি ঘৃণা, অজ্ঞতা এবং অবিশ্বাসের জন্ম দেয়।'
মধ্যপ্রাচ্যে চলা সংঘাতের মধ্যে ইসলামোফোবিয়ার ঘটনাগুলো ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশে এসব ঘটনা ৬০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে ভলকার তুর্ক বলেন, 'ইসলামোফোবিয়া বহু জীবন কেড়ে নিয়েছে, সমগ্র সম্প্রদায়কে অমানবিক করে তুলছে।'
তিনি বলেন, 'ধর্মীয় সাক্ষরতা- অন্য কথায় প্রতিটি ধর্ম ও বিশ্বাসের মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান ও বোঝাপড়াও এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি ধর্মীয় বিদ্বেষ মোকাবিলায় ধর্মীয় সাক্ষরতাকে বিস্তৃত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
মুসলিমবিদ্বেষ বাড়ছে
এদিকে জেনেভায় শুক্রবার এক স্মরণসভায় অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) স্থায়ী পর্যবেক্ষক নাসিমা বাঘলি বলেন, 'গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর থেকে ইসলামোফোবিয়া বাড়ছে।'
এ সময় তিনি সাম্প্রতিক মুসলিমবিরোধী ঘটনাগুলোর পাশাপাশি কয়েক মাস আগে কোরআন অবমাননার ঘটনার কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'ধর্ম বা বিশ্বাসকে ভিত্তি করে বিদ্যমান বৈষম্য ও গৎবাধা ধারণা প্রচুর ক্ষতি করছে, কারণ তারা মানুষকে অমানবিক করে তোলে এবং তাদের অধিকার ভোগে বাধা দেয়। আমাদের কাছে যা আছে তা দিয়েই অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এই অভিশাপের মোকাবিলা করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সকলের জন্য শ্রদ্ধা প্রচার করা।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক