রাশিয়া স্যাটেলাইট বিরোধী নতুন অস্ত্র তৈরি করছে, দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

রাশিয়া স্যাটেলাইট বিরোধী নতুন অস্ত্র তৈরি করছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মস্কো এখনও অস্ত্রটি মোতায়েন করেনি বলেও জোর দিয়েছে দেশটি। খবর বিবিসির।
হাউস রিপাবলিকানের এক জ্যেষ্ঠ সদস্য 'জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে মারাত্মক হুমকি' নিয়ে গত বুধবার সতর্কতা জারির পরদিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি এ দাবি করলেন।
বিবিসির মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, স্যাটেলাইটকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য মহাকাশভিত্তিক এ অস্ত্রটিতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র সুবিধা।
তবে জন কিরবি এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানাননি। এছাড়াও হুমকির বিষয়েও বিস্তারিত কিছুই বলেননি তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে মস্কো। সেই সঙ্গে এটি এও বলছে যে, রাশিয়ার এই অস্ত্রের বিষয়টি কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে ইউক্রেনের সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়টি 'যেকোনো মূল্যে' পাস করানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
কিরবি সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য তাৎক্ষণিক কোনো হুমকি নেই। তিনি বলেন, 'আমরা এমন কোনো অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা করছি না যা পৃথিবীতে মানুষের বিরুদ্ধে আক্রমণ কিংবা অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।'
কিবরি জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তার প্রশাসন এ অস্ত্রের বিষয়টি 'খুবই গুরুত্বের' সঙ্গে বিবেচনা করছে।
তিনি যোগ করেন, হুমকির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইতোমধ্যেই 'রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি কূটনৈতিক যোগাযোগের' নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বুধবার হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মাইক টার্নার জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্ট সতর্কতা জারি করেন। এ নিয়ে রাজধানীজুড়ে আকস্মিক গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
পরদিন বৃহস্পতিবার টার্নার এবং কমিটির অন্য সদস্যরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর টার্নার বলেন, 'আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস প্রশাসন হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং তাদের এ বিষয়ে অবশ্যই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে আমরা তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি।'
মহাকাশ অস্ত্রের বিষয়টি সুপারম্যান ২ বা জেমস বন্ডের গোল্ডেনআই সিনেমার কাহিনির মতো শোনালেও সামরিক বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে মহাকাশই হয়ত পরবর্তী সম্মুখযুদ্ধের ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।
হুমকির বিষয়ে যা জানা গেল
হুমকির বিষয়ে কিবরির বক্তব্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
তবে এই নীরবতা ইচ্ছাকৃত বা পরিকল্পিত বলে জানিয়েছেন জ্যাক সুলিভান। তিনি বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যে 'সূত্র ও পদ্ধতি' ব্যবহার করে এ হুমকির বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সেই সূত্র ও পদ্ধতিকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, এবিসি ও সিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুমকিটি রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র সম্বলিত মহাকাশ অস্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যেই অস্ত্র মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হবে।
কিবরি এ বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের অস্ত্র স্থাপনের কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্র এই হুমকি 'অত্যন্ত গুরুত্বের' সঙ্গে দেখছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ও মহাকাশ বিশেষজ্ঞরা কয়েক বছর ধরে সতর্ক করে আসছেন যে যুক্তরাষ্ট্রকে ধরার জন্য রাশিয়া এবং চীন মহাকাশে ধীরে ধীরে তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
গত বছর ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিশেষ ধরনের স্যাটেলাইট বিরোধী (এএসএটি) অস্ত্র তৈরি করছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে সোভিয়েত আমলে অকার্যকর একটি স্যাটেলাইটের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল পরীক্ষাও চালিয়েছে তারা।
এ প্রতিবেদন অন্যতম লেখক ও পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ক্যারি বিনজেন বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে স্যাটেলাইট যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত করতে রাশিয়া ইতোমধ্যেই সাইবার হামলা ও জ্যামিংয়ের মতো বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার করেছে।
জনগণের কি এতে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
হাউস স্পিকার মাইক জনসনসহ জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতারা বলেছেন, এ নিয়ে জনসচেতনতার প্রয়োজন নেই।
এদিকে মাইক টার্নারও হুমকির বিষয়ে কথা বলায় সমালোচনার শিকার হয়েছেন। রিপাবলিকান নেতা অ্যান্ডি ওগলেস তার এই মন্তব্যকে 'মার্কিন জনগণের কল্যাণ ও চেতনার' জন্য 'বেপরোয়া অবহেলা' বলে অভিযুক্ত করেছেন।
বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক কর্মকর্তারা অবশ্য সতর্ক করেছেন যে মার্কিন স্যাটেলাইটের জন্য যেকোনো হুমকি সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
মহাকাশ অস্ত্রের বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে কি?
তাত্ত্বিকভাবে মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারলেও যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের স্যাটেলাইটে হামলা চালানোর সক্ষমতা রয়েছে।
তিনটি দেশই ১৯৬৭ সালের আউটার স্পেস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী। চুক্তি অনুযায়ী- পারমাণবিক কিংবা যেকোনো ধরনের অস্ত্রবহনকারী কোনো বস্তু মহকাশে পাঠানো নিষিদ্ধ।
তবে সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার বিষয়ে এ চুক্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, রাশিয়া চুক্তির প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা দেখিয়েছে…সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতির বিপরীতে। তারা তাদের কথা রাখে না কিংবা তাদের চুক্তির বাধ্যবাধকতায় অটল থাকে না।'
অনুবাদ: জেনিফার এহসান