মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের মাঝেই শেষ হলো পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ

সমাপ্ত হয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তবে এই পুরো সময়টাতে ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছিল। খবর বিবিসির।
এক্ষেত্রে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করতেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর ইন্টারনেট বন্ধ করাকে ইমরানের দল পিটিআই 'কাপুরুষোচিত কাজ' বলে অভিহিত করেছে।
দুই বছর আগে ইমরান খানকে সংসদে অনাস্থা ভোটের জেরে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারাতে হয়েছিল। বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি মামলায় সাজা পেয়ে জেলবন্দি রয়েছেন। যার ফলে নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না।
অন্যদিকে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। আর বহু বিশ্লেষক আবার এটিকে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম 'বিশ্বাসযোগ্য' নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন।
নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন যে, নির্বাচনে বেশ কম পরিমাণে ভোট পড়েছে। এতে করে নির্বাচনে পিটিআইয়ের জয়ের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। আর মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের কারণে বহু ভোটার নিজেদের ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত খুঁজে পায়নি।

এক্ষেত্রে ভোট শুরুর ১০ মিনিট আগে থেকেই মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে ওয়াইফাই ব্যবহার করে ঠিকই ইন্টারনেট চালানো যাচ্ছিল।
এক ভোটার বিবিসিকে বলেন, "আমরা এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে গিয়েছি। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি নয় বরং সহযোগিতা করা উচিত।"
লাহোরের অনেক ভোটার বিবিসিকে বলেন, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটে জন্য ট্যাক্সি বুক করে ভোট দিতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও অন্যরা বলেন, ভোট দিতে যাওয়ার সময় ঠিক করতে তারা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে চ্যাট করতে পারেনি।
যদিও নেটওয়ার্ক বন্ধের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, "দেশে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের ঘটনায় মূল্যবান প্রাণ হারিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এবং সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় নিরাপত্তা জোরদার অপরিহার্য।"
এক্ষেত্রে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোটের দিন শুধু কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চল ডেরা ইসমাইল খানে গাড়িতে বোমা হামলায় চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আর দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আর গতকাল (বুধবার) বেলুচিস্তানে প্রার্থীর অফিসে দুটি পৃথক বোমা হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছে।
এদিকে নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধের কঠোর সমালোচনা করেছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলওয়াল বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি অতি দ্রুত সেবাগুলো চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে সারাদেশে ভোটকেন্দ্রগুলোকে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। লাহোরের একটি স্টেশন পরিদর্শন শেষে বিবিসির সংবাদদাতা জানান, প্রবেশদ্বারে সশস্ত্র প্রহরী ছিল এবং সেনা অফিসাররা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, আফগানিস্তান ও ইরানের সাথে দেশটির সীমান্ত 'পূর্ণ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে' বন্ধ রাখা রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু মানুষই নয়, কার্গো আনা নেওয়াও বন্ধ রয়েছে।

যদিও এর আগেও তথ্যের প্রবাহ বন্ধে পাকিস্তানে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের নজির রয়েছে। তবে নির্বাচনের সময় সেটি বন্ধ করা অভূতপূর্ব ঘটনা।
এদিকে কড়া নিরাপত্তার মাঝে ভোট দিয়েছেন নওয়াজ শরীফ। এ সময় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে কি-না সেটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, "অবশ্যই সুষ্ঠু হচ্ছে।"
ভোটপ্রদান শেষে নওয়াজ শরীফ আরও বলেন, "আমি এবং আমার পরিবারকে জেলে যেতে হয়েছে। আমাদের বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এতসব কিছুর পর আমরা এই দিনটির সাক্ষী হচ্ছি। আমার দল জিতলে, মানুষের জীবন সহজ হবে, মুদ্রাস্ফীতি কমবে। জনগণ এটাই চায়, এটাই তাদের ইচ্ছা। তাদের ইচ্ছা পূরণ হোক।"
পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ৮ লাখের মতো ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ৩৫ এর নিচে। নির্বাচনে প্রায় ৫ হাজার প্রার্থী রয়েছে; যাদের মধ্যে মাত্র ৩১৩ জন নারী।
এক্ষেত্রে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) আর পাকিস্তান পিপলস পার্টি। তবে নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারছে না ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। নির্বাচন কমিশন প্রতীক বাতিল করায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান