কর্মসংস্থানের অভাবে ভারতীয়রা ইসরায়েল যাচ্ছে

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে পাওয়া রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ইসরায়েল নির্মাণ খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য চীন, ভারত এবং অন্যান্য দেশ থেকে ৭০ হাজার শ্রমিক নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল প্রায় ৮০ হাজার ফিলিস্তিনি শ্রমিকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর দেশটিতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল ভারত থেকে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক নিবে বলে জানা গেছে। উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানাতে চাকরির আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। হরিয়ানার রোহতক শহরের মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার আবেদনকারীর জন্য পরীক্ষা আয়োজন করছে।
দিল্লিতে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ভারতে চাকরি ও কর্মসংস্থান বর্তমানে মিশ্র পরিস্থিতিতে পড়েছে। 'পর্যায়ক্রমিক শ্রম শক্তি সমীক্ষা' থেকে পাওয়া সরকারি তথ্য অনুযায়ী বেকারত্বে হ্রাসের প্রবণতা দেখা যায়। এই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ সালে দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল ৬ শতাংশ কিন্তু সেখা থেকে ২০২১-২০২২ সালে এই হার কমে গিয়ে ৪ শতাংশে দাঁড়ায়।
উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ এবং বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক সন্তোষ মেহরোত্রা বলেন, সরকারি তথ্যে অবৈতনিক কাজকে চাকরি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে বেকারত্বের হার কমে দেখানো হচ্ছে।
অধ্যাপক মেহরোত্রা বলেন, "এটা এমন নয় যে চাকরি হচ্ছে না। এটা ঠিক যে চাকরির সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু একই সময়ে চাকরি খুঁজছেন এমন তরুণদের সংখ্যাও বাড়ছে।"
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ 'স্টেট অফ ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া রিপোর্ট' অনুসারে, বেকারত্ব কমতে থাকলেও এর হার এখনো বেশি। ১৯৮০-এর দশক থেকে স্থবির হওয়ার পর থেকে ২০০৪ সাল থেকে নিয়মিত মজুরি বা বেতনভুক্ত কাজের সাথে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা বাড়তে শুরু করেছিল।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পুরুষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১৮ থেকে ২৫ শতাংশ এবং নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ভারতে 'ধীর গতির উন্নয়ন এবং মহামারির' কারণে নিয়মিত মজুরির চাকরির সংখ্যা কমে যায়।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৫ শতাংশের বেশি স্নাতক এবং ২৫ বছরের কম বয়সী স্নাতকদের মধ্যে ৪২ শতাংশের জন্য মহামারির পরে ভারতে কোন চাকরি ছিল না। ।
আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রম অর্থনীতিবিদ রোজা আব্রাহাম বলেছেন, "এই গোষ্ঠীর উচ্চ আয়ের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তারা অনিরাপদ কাজ করতে চায় না। তারা উচ্চ আয়ের জন্য ইসরায়েলে যাওয়ার চরম ঝুঁকি নিচ্ছে।"
তাদের মধ্যে একজন উত্তরপ্রদেশের অঙ্কিত উপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, তিনি একজন এজেন্টকে অর্থ প্রদান করেছিলেন, ভিসা পেয়েছিলেন এবং মহামারির সময় চাকরি হারানোর আগে কুয়েতে আট বছর স্টিল ফিক্সার হিসাবে কাজ করেছিলেন।
তিনি বলেন, "আমার কোনো ভয় নেই। আমি ইসরায়েলে কাজ করতে চাই। সেখানে ঝুঁকি নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। দেশে চাকরির কোনো নিরাপত্তা নেই।"
৩১ বছর বয়সী রঞ্জিত কুমার যিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে চিত্রশিল্পী, স্টিল ফিক্সার, শ্রমিক এবং অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন, তার মতে এটি খুব ভাল সুযোগ।
কুমারের ভাষ্যমতে, দুটো ডিগ্রি নিয়ে এবং সরকারি 'বাণিজ্য পরীক্ষা' পাশ করেও কখনোই একদিনে ৭০০ টাকার বেশি উপার্জন করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাতে পাওয়া রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ইসরায়েল নির্মাণ শ্রমিকদের আবাসন এবং চিকিৎসা সুবিধা সহ প্রতি মাসে প্রায় ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা (১৬৪৮ মার্কিন ডলার) প্রদান করছে।
কুমার যিনি গত বছর পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন, তার সাত সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ইসরায়েলে স্টিল ফিক্সার হিসাবে চাকরি করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, "দেশে কোনো নিরাপদ চাকরি নেই। সবকিছুর দাম বাড়ছে। নয় বছর আগে স্নাতক পাশ করার পরও আমি আর্থিকভাবে ভালো অবস্থানে নেই।"