২০২৬ সাল থেকে স্মার্ট প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানো শুরু করবে তিতাস

আগামী ২০২৬ সাল থেকে স্মার্ট প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন শুরু করবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক (পিএমসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, আরেকটি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, "২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।"
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়িত এ প্রকল্পে আরও একটি পিএমসি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বিশ্বব্যাংক অর্থায়িত প্রকল্পের আওতায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট লিমিটেড (ডিটিসিএল) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে।
তিতাস গ্যাস এক যুগেরও বেশি সময় আগে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় মোট ৪ লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে।
এসব মিটার জাইকার অর্থায়নে স্থাপন করা হয়।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "তবে এবারের প্রকল্পটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এবং সব মিটারই স্মার্ট প্রিপেইড হবে। আগেরগুলো শুধু প্রিপেইড ছিল, স্মার্ট ছিল না।"
তিনি জানান, প্রিপেইড ও স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের মধ্যে পার্থক্য হলো—প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করতে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট ভেন্ডর পয়েন্টে যেতে হয়, কিন্তু স্মার্ট প্রিপেইড মিটারে স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকেই রিচার্জ করা যায়। তিনি বলেন, "এটাই স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের সবচেয়ে বড় সুবিধা।"
নতুন প্রকল্পের আওতায় তিতাসের আওতাধীন এলাকায় মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বসানো হবে।
এরমধ্যে এডিবি ৬ লাখ ৫০ হাজার এবং বিশ্বব্যাংক ১১ লাখ মিটারের জন্য অর্থায়ন করবে।
তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ মাস আগে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এই সাড়ে ১৭ লাখ স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য।
প্রকল্প বাস্তবায়নে পিএমসির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "পরিকল্পনা, নকশা এবং প্রযুক্তিগত দিক তদারকিসহ প্রকল্পের মূল প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো পিএমসির হাতেই থাকে। সাধারণত এক বা দুইটি প্রতিষ্ঠানকে পিএমসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।"
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, দরপত্র প্রক্রিয়া তদারকি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও পিএমসির ওপর রয়েছে। তিনি বলেন, "দরপত্র প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগে একটি নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল। ফলে দ্বিতীয় পরামর্শক নিয়োগে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।"
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে দুটি প্রকল্পের আওতায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য তিতাস গ্যাস দুটি ঋণ চুক্তি করে।
২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর তিতাস গ্যাস 'গ্যাস সেক্টর এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড কার্বন অ্যাবেটমেন্ট প্রজেক্ট'-এর আওতায় ১১ লাখ স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
এর পাঁচ দিন পর, ২৮ নভেম্বর তিতাস গ্যাস 'স্মার্ট মিটারিং এনার্জি এফিশিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট'-এর আওতায় ৬ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য এডিবির সঙ্গে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
সরকার তিতাস গ্যাসে অতিরিক্ত সিস্টেম লস যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
অপারেশনাল এলাকা ও বিক্রির পরিমাণের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহত্তম গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস দীর্ঘদিন ধরে ৭ শতাংশ সিস্টেম লসে ভুগছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, সিস্টেম লসের কারণে তিতাস গ্যাস প্রতি মাসে প্রায় ১৫০ থেকে ১৮০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বছরে ১,৮০০ থেকে ২,১৬০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে ।
তিতাস গ্যাস এরই মধ্যে জাইকার আর্থিক সহায়তায় ঢাকায় প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করেছে। এসব মিটার মূলত গুলশান, বনানী, মোহাম্মদপুর, পল্টন, রমনা, নিউ মার্কেট, খিলগাঁও ও সেগুনবাগিচা এলাকায় বসানো হয়েছে।
নতুন প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে ঢাকা দক্ষিণ ও নারায়ণগঞ্জে। আর এডিবির অর্থায়নে স্মার্ট মিটার বসানো হবে ঢাকা উত্তর ও গাজীপুরে।
তিতাস গ্যাস বর্তমানে ২৮ লাখ ৭৮ হাজার গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার আবাসিক, ১২ হাজার ৭৮টি বাণিজ্যিক, ৫ হাজার ৪২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান, ১ হাজার ৭৫৫টি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট এবং ৩৯৬টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিতাস গ্যাস দেশের মোট গ্যাস বিতরণ বাজারের ৫৫ শতাংশ দখলে রেখেছে। বাকি ৪৫ শতাংশ বিতরণ করছে অন্য পাঁচটি কোম্পানি।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনাধীন এলাকায় রয়েছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ।
২০২১-২৩ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, তিতাস গ্যাস বার্ষিক গড়ে ১৪ হাজার ৪৫৯ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমএমসিএম) গ্যাস বিক্রি করে, যার বিপরীতে রাজস্ব আয় হয় ২৬ হাজার ৩৮৭ কোটি ১২ লাখ টাকা।