নেপাল-ভুটানে বাংলাদেশের রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে না: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার (৯ এপ্রিল) স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় ভূখণ্ড হয়ে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।
সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, 'বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আমাদের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে তীব্র পণ্যজট তৈরি করছিল। এতে লজিস্টিকস সমস্যা ও অতিরিক্ত ব্যয় আমাদের নিজস্ব রপ্তানি কার্যক্রমকে ব্যাহত করছিল। এসব কারণেই ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সুবিধাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না।'
গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অভ ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) একটি সার্কুলার জারি করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির যে অনুমতি ছিল, তা প্রত্যাহার করা হয়।
পূর্ববর্তী নীতিমালায় ভারতীয় ভূমি শুল্ক স্টেশন (এলসিএস) ব্যবহার করে বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে রপ্তানির জন্য পণ্য পরিবহন করতে পারত। এ প্রক্রিয়ায় শুল্ক স্টেশন থেকে এসব পণ্য পরবর্তীসময়ে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরে পাঠানো হতো।
ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) জানিয়েছে, নতুন সার্কুলার কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
তবে, পূর্ববর্তী ব্যবস্থার আওতায় ইতোমধ্যে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করা পণ্যগুলোকে আগের নিয়ম অনুযায়ী গন্তব্যে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর খবরে বলা হয়েছে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারত অঞ্চলে চীনা অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ছে—এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাসহ একাধিক ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষক বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার এক মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা ওই মন্তব্যকে 'আপত্তিকর, নিন্দনীয় ও উসকানিমূলক' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
খবরে আরও বলা হয়েছে, 'চীনের সহায়তায় "চিকেন'স নেক" এলাকার কাছাকাছি একটি কৌশলগত ঘাঁটি গড়ে তোলার বাংলাদেশের পরিকল্পনাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রভাব ফেলতে পারে। শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগ আহ্বান করেছে।'
এই তথ্য গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রধান ও সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তবের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।