জলবায়ু পরিবর্তনে পাহাড়ি ছাগল হয়ে যাচ্ছে নিশাচর, ভয় পাচ্ছে না নেকড়েকেও!

জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পাহাড়ি ছাগল, বিশেষত ইতালির আলপাইন আইবেক্সগুলো তাদের আচরণ পরিবর্তন করছে। সাধারণত দিনের বেলা সক্রিয় থাকলেও এই ছাগলগুলো এখন রাতেও (নিশাচর) জেগে থাকছে। এই পরিবর্তনটি তাদের শিকারিদের কাছে আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
সাসারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফেরারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আচরণের এই পরিবর্তনটি পর্যবেক্ষণ করতে জিপিএস কলার ব্যবহার করে ১৪ বছর ধরে ৪৭টি আলপাইন আইবেক্স ট্র্যাক করেছেন, যা বন্যপ্রাণীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরে।
গবেষণার সহ-লেখকদের একজন ফ্রান্সেসকা ব্রিভিও সিএনএনকে বলেন, আচরণের পরিবর্তনটিকে 'হিট স্ট্রেস' বা অতিরিক্ত তাপের কারণে অনুভূত মানসিক চাপের জন্য দায়ী করা যেতে পারে। এছাড়া, দিনের বেলা উষ্ণ তাপমাত্রায় তাদের খাবারের জন্য আরও বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়।
ব্রিভিও বলেন, "এটি মানুষের ক্ষেত্রেও সত্য। যখন খুব গরম থাকে তখন আমরাও কাজ বন্ধ করে দিই। সূর্যের আলো এড়াতে আমরা বাড়ির ভেতরে অবস্থান করি।"
মানুষ যেমন গরম আবহাওয়ায় ছায়া খোঁজে, তেমনি ছাগলও শক্তি সংরক্ষণের জন্য রাতে জেগে থাকছে।
ইতালির গ্রান পারাদিসো ন্যাশনাল পার্ক ও সুইজারল্যান্ডের সুইস ন্যাশনাল পার্কে চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে নেকড়ের মতো নিশাচর শিকারির উপস্থিতি সত্ত্বেও ছাগল রাতে সক্রিয় থাকে। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, শিকারের ঝুঁকি এড়ানোর চেয়ে ছাগলের জন্য তাপের প্রভাব এড়ানো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিভিও বলেন, "আমরা অনুমান করি যে আইবেক্সের জন্য, শিকারের ঝুঁকি এড়ানোর চেয়ে 'হিট স্ট্রেস' এড়ানো আরও গুরুত্বপূর্ণ।"
নিশাচর আচরণের এ পরিবর্তন আলপাইন আইবেক্সের মত পাহাড়ি ছাগল যারা প্রাকৃতিকভাবে দিনের বেলা সক্রিয় থাকে তাদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। কারণ সীমিতি দৃষ্টিশক্তির কারণে তাদের রাতের অন্ধকারে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় এবং শিকারিদেরকে আলাদা করার ক্ষমতাও বাধাগ্রস্ত হয়। তাই পাথুরে ঢালে বাস করা এই আইবক্সগুলোদের রাতের বেলা চলাফেরা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সমীক্ষাটি ইঙ্গিত দেয় যে, আচরণের এই পরিবর্তন আইবেক্স ছাগলের প্রজনন ও বেঁচে থাকার হার হ্রাসের কারণ হতে পারে।
ব্রিভিও বলেন, "অভ্যাস পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু এই মুহূর্তে, এই ফলাফলগুলো ভবিষ্যতের জন্য আইবেক্সকে কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে বলে মনে হচ্ছে।"
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে প্রাণীরা কীভাবে তাদের আচরণ খাপ খাইয়ে নিচ্ছে তা শনাক্ত করার জন্য এই গবেষণাই প্রথম নয়। তিনি বলেন, "বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দিবাচর থেকে নিশাচর কার্যকলাপের এই পরিবর্তন আরও বাড়বে।"
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নির্দিষ্ট প্রাণীকে নিশাচর হতে বাধ্য করছে। এজন্য গবেষণার লেখকরা বর্তমান ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের জন্য জরুরি পরিবর্তন আনার উপর জোর দিয়েছেন।
সুরক্ষিত অঞ্চলে সাধারণত সন্ধ্যা এবং ভোরে আইবেক্স গণনা করা হয়। যেহেতু এই ছাগলগুলো এখন রাতে বেশি সক্রিয় তাই রাতেও গণনা করা প্রয়োজন বলে গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন।
আইবেক্সের বিচরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে তাদের সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করাও অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।