গাজায় বন্দিদের আত্মসমর্পণের ভিডিওর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক! ভিডিও কি সাজানো?
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে কিছু অস্ত্র সমর্পণ করছে আটককৃত ফিলিস্তিনিরা। এমনি একটি ভিডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এই ভিডিওটি আসলেই সত্য কি-না; সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়৷ খবর বিবিসির।
প্রাথমিকভাবে একই দৃশ্যের দুটি আলাদা ভিডিও দেখা গেছে। সেখানে একজন ব্যক্তি অন্তর্বাস পরা অবস্থায় নির্দেশনা মান্য করে অস্ত্র রাখছেন। কিন্তু ঐ দৃশ্যে সামান্য ভিন্নতা দেখা যায়।
সন্দেহের তৈরি হওয়ায় ফুটেজটি পরীক্ষা করেছে 'বিবিসি ভ্যারিফাই' (বিবিসি যাচাই-বাছাই) টিম। সেক্ষেত্রে তারা দেখতে পেয়েছে যে, উভয় ভিডিওর দৃশ্যই একটি ধারাবাহিক ক্রম থেকে এসেছে। যে ধারায় মোট তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতিটি কতটা বাস্তব এবং এই ভিডিওটির প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়।
গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ভিডিওটি কয়েকটি সেকশনে ভাগ করে ধারণ করা হয়েছে। আবার অনেকেই একই ব্যক্তি একই দৃশ্যের ভিন্ন দুই অংশে পৃথক হাতে বন্দুক ধরে আছেন বলে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভিডিও ধারনের জায়গাটি গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের উত্তরের বেইত লাহিয়া এলাকার জাতিসংঘের একটি স্কুলের সামনে বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি।
ফুটেজে আরও কয়েকজন পুরুষকে সড়কের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের পরনেও ছিল অন্তর্বাস। তাদের মধ্যে অনেকে হাত ওপরের দিকে তুলে পরিচয়পত্র ধরে আছেন।
সূর্যের অবস্থান আন্দাজ করে যে ক্লিপটি প্রথমে শ্যুট করা হয়েছিল বলে মনে হয়, সেটিতে দেখা যায়, লোকটি ফুটপাথের উপর তার ডান হাত থেকে একটি বন্দুক রাখছে। পরের ভিডিওতে লোকটি তার বাম হাতের উপরে একটি ভিন্ন বন্দুক ধরে আছেন।
ঘটনাটির ভিডিওর পাশাপাশি নানা ছবিও অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব ছবি কিছুটা ভিন্ন কোণ (অ্যাঙ্গেল) থেকে তোলা হয়েছে। সেটি থেকে বোঝা যায় যে, ঘটনাবলি একাধিক ব্যক্তি ভিডিও বা ক্যামেরায় ধারণ করেছে।
এছাড়াও ভিডিওর ফুটেজ দেখে আরও কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে লোকটিকে বন্দুকের মুখে আটকে রাখা হয়েছে এবং অফ-স্ক্রিন থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তাই এটা স্পষ্ট নয় যে, লোকটি অস্ত্র 'আত্মসমর্পণ' করছে না-কি নির্দেশ অনুসারে সেগুলি সরিয়ে দিচ্ছে। লোকটি অন্তর্বাস পরা অবস্থায় ছিল এবং অস্ত্রগুলো লুকিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। তাই ইসরায়েলি সৈন্যরা এই অস্ত্রগুলি সম্পর্কে জানত না, এমনটা ভাবারও কারন নেই।
ফলে এটি আচমকা আত্মসমর্পণ না হয়ে ক্যামেরার তোলার জন্য করা হয়ে থাকতে পারে। তবে ভিডিওতে থাকা কোনো ব্যক্তি গত ৭ অক্টোবরের হামাসের পক্ষ হয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত আছে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের আটকের এমন দৃশ্য বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে করা এমন আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রেডক্রসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সব বন্দীর সঙ্গে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আচরণ করা উচিত।
বিবিসি বলছে, যে যা-ই বলুক, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে অগ্রগতির প্রমাণ দেখাতে আগ্রহী ইসরায়েল।
গতকাল রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, "সাম্প্রতিক দিনগুলোয় হামাসের বেশ কিছু সদস্য ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। হামাসের যোদ্ধারা নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করছেন। তাঁরা ইসরায়েলের সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।"
হামাসকে নির্মূল করা পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহু আরও বলেন, "আরও সময় লাগব। যুদ্ধ পুরোদমে চলছে, তবে এই যুদ্ধ হামাসের জন্য শেষের শুরু।"
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এসব ভিডিওর ঘটনা নিয়ে করা প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেয়নি। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বিবিসির কাছে দাবি করেন, আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আচরণ করা হয়েছে।"
তিনি বলেন, "সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রায়ই তাদের শরীর থেকে পোশাক সরিয়ে নিতে হয়। যাতে করে তাদের তল্লাশি করা যায়। এটা নিশ্চিত করা যায়, তারা বিস্ফোরক বা অন্য অস্ত্র লুকিয়ে রাখছেন না।"
