বিদ্রোহ ও ওয়াগনার সেনাদের ভবিষ্যৎ জানালেন পুতিন

বিদ্রোহের পর ওয়াগনার সেনাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসাথে বিদ্রোহে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ সেনাদের 'দেশপ্রেমিক' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
পুতিনের প্রস্তাব মতে, মস্কোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেওয়া ওয়াগনার সেনারা রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা অন্য নিরাপত্তা এজেন্সির সাথে চুক্তি করে যোগদান করতে পারবেন। অন্যদিকে বাকি সেনারা চাইলে রাশিয়ায় তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন। অথবা কেউ যদি রাশিয়ায় ফিরতে না চায় তবে প্রতিবেশী মিত্র দেশ বেলারুশেও চলে যেতে পারবেন।
গতকাল (সোমবার) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এসব প্রস্তাবের কথা জানান।
এদিকে ওয়াগনার সেনাদের বেলারুশে চলে যাওয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে আল-জাজিরাকে মস্কো ভিত্তিক সাংবাদিক ডেনিয়েল হকিন্স বলেন, "আমরা সম্ভবত এই বিষয়টি নতুন করে জানছি। কেননা চুক্তি অনুযায়ী, শুধু ওয়াগনার বস প্রিগোজিনের বেলারুশ চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সৈন্যদের বেলারুশে চলে যেতে পারার কথা সেখানে ছিল না।"
ভাষণে পুতিন বলেন, "ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা এবং কমান্ডারদের বেশিরভাগই রাশিয়ান দেশপ্রেমিক। তারা রাশিয়ার প্রতি ও জনগণের প্রতি নিবেদিত। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতা প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা সেটা প্রমাণ করেছে।"
পুতিন আরও বলেন, "ওয়াগনার বিদ্রোহের কুশীলবরা সেনাদের অন্ধকারে রেখেছিল এবং অস্ত্র হাতে সেনাদের নিজেদের ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল। অথচ এই সেনারাই দেশের জন্য ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য তাদের ভাইদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে।"
তবে শেষ সময়ে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় ও নিজেদের মধ্যে রক্তপাত এড়ানোয় পুতিন ওয়াগনার সেনা ও কমান্ডারদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একইসাথে বিদ্রোহের সময় ওয়াগনার গ্রুপকে বিচারের আওতায় না আনার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি তা রক্ষা করবেন বলেও ভাষণে জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার ওয়াগনার বস প্রিগোজিনের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে বসে মার্সেনারি গ্রুপটির সৈন্যরা। বিদ্রোহী সেনারা ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চলের রুশ শহর রোস্তভে অবস্থিত দক্ষিণ রাশিয়ার সামরিক দপ্তর দখল করে নেয়।
একইসাথে বিদ্রোহের অংশ হিসেবে রুশ শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের পতন ঘটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করে গ্রুপটির একটি বহর মস্কো অভিমুখে রওনা হয়। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মস্কো থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে এলেটস শহরে প্রিগোজিনের বাহিনীর সামরিক বহরকে দেখা গিয়েছিল।
অন্যদিকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ওয়াগনার গ্রুপের 'সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রচেষ্টা'কে 'বিশ্বাসঘাতকতা' ও জাতির জন্য 'হুমকিস্বরূপ' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন পুতিন। ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোজিনসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তবে গত শনিবার দ্রুত পট পরিবর্তন হতে থাকে। রুশ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় এক চুক্তির অধীনে বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ওয়াগনার গ্রুপ। একইসাথে রক্তক্ষয় এড়াতে মস্কোর দিকে এগোনো বন্ধ করে নিজেদের ঘাঁটিসমূহে ফিরে যেতে রাজি হয় মার্সেনারি বাহিনীটির প্রধান প্রিগোজিন।
বিদ্রোহ বন্ধের শর্তে করা ঐ চুক্তিতে বলা হয়, 'সশস্ত্র বিদ্রোহের প্ররোচনা' দেওয়ার অভিযোগে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। প্রিগোজিন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন।
আর অন্যদিকে ওয়াগনার যোদ্ধারা, যারা বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিলেন, তারাও কোনো শাস্তি বা পদক্ষেপের মুখোমুখি হবেন না বলে চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কারণ এর আগে তারা রাশিয়ার হয়ে কাজ করেছেন। সেই কাজ ও পরিষেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে এই ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রেমলিন।