বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন পশ্চিমাদের জন্য সতর্কবার্তা: পুতিন

বেলারুশে মস্কোর কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনকে পশ্চিমাদের জন্য সতর্কবর্তা বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে শুক্রবার (১৬ জুন) রাশিয়ার ফ্ল্যাগশিপ ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় প্রথমবার বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
স্বল্প দূরত্বে হামলার জন্য কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড ইতোমধ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এখনই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই বলেও জানান পুতিন।
তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, আমরা আমাদের মিত্র লুকাশেঙ্কোর (বেলারুশের প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের কিছু অংশ বেলারুশের ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। আর সেটিই হয়েছে। প্রথম দফায় পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলোর প্রথম অংশ বেলারুশের ভূখণ্ডে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মের শেষের দিকে বা বছরের শেষ নাগাদ আমরা বাকি কাজ সম্পন্ন করব।'
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে প্রথমবার রাশিয়া নিজ ভূখণ্ডের বাইরে ওয়ারহেড স্থাপন করেছে। পুতিন বলেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সমর্থন দেওয়ায় পশ্চিমাদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে এসব অস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে।
বিশ্ব মঞ্চে রাশিয়ার দাপট কয়েক দশক ধরে কম থাকবে—এমন প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে পুতিন বলেন, 'যারা আমাদের কৌশলগত পরাজয়ের কথা ভাবছে, তারা যে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নয়, তা প্রমাণ করার মাধ্যম হলো এই পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন।'
পুতিনের মিত্র লুকাশেঙ্কো এর আগে জানান, বেলারুশে রুশ পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন শুরু হয়েছে। যেগুলো ১৯৪৫ সালে জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের আঘাত হানা পারমাণবিক বোমার চেয়ে তিনগুণ বেশি শক্তিশালী।
গত মার্চে বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ঘোষণার সময় ৃকয়েক দশক ধরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের প্রতিও ইঙ্গিত করেন তিনি।
'রাশিয়ার পরাজয় দেখাতে চায় পশ্চিমারা'
যুক্তরাষ্ট্র পুতিনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে নিজেদের অবস্থান অপরিবর্তিত রাখার কথা জানায়। মস্কো এসব অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, এমন কোন লক্ষণ দেখা যায়নি বলেও জানায় ওয়াশিংটন।
শুক্রবার পুতিন বলেন, রাশিয়া কৌশলগতভাবে পরাজিত হয়েছে এ দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করছে পশ্চিমারা।
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এখনই এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তিনি দেখছেন না। তিনি বলেন, রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার অস্তিত্ব রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করা হয়েছে।
পুতিন আরো বলেন, 'ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর চেয়ে আমাদের হাতে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। আর তারা আমাদের (অস্ত্রের) সংখ্যা কমাতে চায়।'
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের উদ্দেশে তিনি দাবি করেন, রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত বলার মতো কোন সাফল্য পায়নি ইউক্রেন। কিয়েভ বাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের (জয়ের) কোনো সুযোগ নেই। দ্রুত ইউক্রেনের নিজস্ব অস্ত্রের মজুত ফুরিয়ে যাবে এবং তারা পুরোপুরি পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। যা দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে তাদের প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠবে।
পুতিন আরও বলেন, লেপার্ড ট্যাংকের মতো পশ্চিমা অস্ত্র নিয়মিত ধ্বংস করা হচ্ছে। আর ইউক্রেন সেনাবাহিনী যদি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পায় সেগুলোও আগুনে জ্বলবে।