Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ঔপনিবেশিক ভারতে বাঘেরা যেমন ছিল

বাঘেরা রীতিমত সেলিব্রিটি আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। কখনও তারা রেলগেটের পাশে প্রহরীর মতো বসে থাকত, কখনও আবার দারোয়ানের মতো রাতের শিফট সামলাত। এই বাঘেরা ভারতবাসীদের তো বটেই, ইংরেজ মেম সাহেবদেরও বিব্রত করে দিত উদ্ভট সব কাণ্ডকারখানায়। 
ঔপনিবেশিক ভারতে বাঘেরা যেমন ছিল

ফিচার

অনুস্কা ব্যানার্জী
20 November, 2025, 08:20 am
Last modified: 23 November, 2025, 11:40 am

Related News

  • প্রতি মাসে গড়ে ৯টি বাঘ উদ্ধার; বিশ্বজুড়ে তীব্র হচ্ছে বাঘ পাচার সংকট
  • বাঘের দেখা মিলল সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া পর্যটন কেন্দ্রের ফুট ট্রেইলে
  • সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১২৫, এক দশকে বেড়েছে ১৯টি
  • বিশ্ব বাঘ দিবস: সুন্দরবনে গত ১০ বছরে বাঘ বেড়েছে ১৯টি 
  • আড়াই হাজার বছরের তক্ষশীলা: ইতিহাসের অতলে হারানো এক আধুনিক নগর

ঔপনিবেশিক ভারতে বাঘেরা যেমন ছিল

বাঘেরা রীতিমত সেলিব্রিটি আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। কখনও তারা রেলগেটের পাশে প্রহরীর মতো বসে থাকত, কখনও আবার দারোয়ানের মতো রাতের শিফট সামলাত। এই বাঘেরা ভারতবাসীদের তো বটেই, ইংরেজ মেম সাহেবদেরও বিব্রত করে দিত উদ্ভট সব কাণ্ডকারখানায়। 
অনুস্কা ব্যানার্জী
20 November, 2025, 08:20 am
Last modified: 23 November, 2025, 11:40 am

ঔপনিবেশিক ভারতে বাঘ কেবল জঙ্গলের ভয় ছিল না। রীতিমত সেলিব্রিটি আতঙ্ক ছিল বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না। সে কখনও রেলগেটের পাশে প্রহরীর মতো বসে থাকত, কখনও আবার দারোয়ানের মতো রাতের শিফট সামলাত। এই বাঘেরা ভারতবাসীদের তো বটেই, ইংরেজ মেম সাহেবদেরও বিব্রত করে দিত উদ্ভট সব কাণ্ডকারখানায়। 

তবে যা-ই হোক না কেন, বাঘ তো আর ভিআইপি বোঝে না! তাই সাহেব কিংবা মেঠো চাষা, সবাইকেই বাঘের ভয়ে গর্তে লুকোতে হতো বৈ কী! পুরোনো সাময়িকীর ভিন্টেজ ছবিগুলো উল্টেপাল্টে দেখলে বোঝা যায় বাঘ ছিল তখনকার খবরের কাগজের নিত্য তারকা। নিত্যদিনের পত্রিকায় বাঘের গল্প একেবারে অবশ্যপাঠ্য কলাম। সেইসব রোমাঞ্চ, ভয় আর হাসির জগাখিচুড়ি গল্প নিয়েই আমাদের আজকের বাঘযাত্রা। 

এই বাঘযাত্রা শুরু করবার আগে একটু গৌরচন্দ্রিকা না করলেই নয়। ছেলেবেলায় 'হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও' ছড়াখানা শুনলেই মনে হত বাঘ যেন ঠিক পাশের বনেই বসে আছে ওত পেতে। তবে ওই মনে হওয়া পর্যন্তই। বাঘ মামাকে খুঁজতে বসলে তখনও হ্যারিকেন জ্বালাতে হতো। আর এখন তো বাঘশুমারি করে কয়খানা জীবিত আছে, তার হিসাব রাখতে হয়। 

কিন্তু এ তো আজকের কথা। ঔপনিবেশিক ভারতে বাঘ ছিল অনেক। সেই বাঘের দল নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে বাঘশুমারির থোড়াই কেয়ার করত। প্রায়ই লোকালয়ে এসে হাজির হতো ক্লাসের সবচেয়ে বাধ্য ছেলেটার মতন। তখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বাঘের ঢুকে পড়া যতখানি ভয়ংকর ছিল, ঠিক ততখানি ছিল সাধারণ। সেই বাঘ-মানুষ মোলাকাতের অদ্ভুত সব দৃশ্যই ছড়িয়ে পড়েছিল ব্রিট্রিশ ভারতের পত্রপত্রিকায়, আলোকচিত্রে, ম্যাগাজিনে এমনকি নিত্য নৈমিত্তিক রসিকতাতেও। ঔপনিবেশিক যুগের আলোকচিত্রী এবং ব্রিটিশ ভারতের পুরোনো ছবির পুনরুদ্ধারকারী ফিলিপ থর্নটন বাঘযাত্রার এমন সব অদ্ভুত, আগ্রহ জাগানিয়া, আকর্ষণীয় এবং রীতিমত গা শিউরে ওঠা কিছু ছবি খুঁজে বের করেছেন।

রেলওয়ের যত বাঘযাত্রা

১৮৯০ সালের ১৮ জানুয়ারি লন্ডনের দ্য গ্রাফিক ইলাস্ট্রেটেড উইকলি'র প্রথম পাতাজুড়ে ছাপা হলো এক রেলওয়ে প্রকৌশলীর সংকটময় অবস্থার অপ্রত্যাশিত বিপদের ছবি। ব্যাপারখানা এই যে, রেললাইনের কোনো গোলোযোগ সংক্রান্ত কাজ দেখছিলেন প্রকৌশলী। সাথে দুজন কর্মচারীও ছিলেন। এমন সময় বাচ্চাকাচ্চা সমেত বাঘের আবির্ভাব, যেন পুরো পরিবার নিয়ে ভ্রমণ বিলাসে বেরিয়েছে। বাঘ দম্পতি ও তাদের ছানাদের দেখে কর্মচারীরা তখন পালাচ্ছেন। এদিকে, বসে থাকা রেলওয়ে প্রকৌশলীর পরিস্থিতি তো লিখে বোঝানো সম্ভব না। তার চেয়ে দেখে নিন।

সালটা ১৮৯২। ব্রিটিশ ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলের একটি রেলওয়ে স্টেশনে এক অনাহুত অতিথির দেখা মিলল। তার রাজকীয় ভঙ্গি, ভারিক্কি চাল দেখে অবশ্য বোঝবার উপায় নেই, তিনি বিনা নিমন্ত্রণেই চলে এসেছেন। যাইহোক, বাঘমামার আগমনে তখন স্টেশনের মানুষজন প্লাটফর্মের ছাউনির ছাদে বসে কাঁপছে। তখন রেলওয়ে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে একটি টেলিগ্রাম এসে পৌঁছাল যাতে লেখা ছিল 'বাঘ প্ল্যাটফর্মে লাফালাফি করছে। লোকজন কাজ করছে না, অনুগ্রহ করে ব্যবস্থা করুন।' 

ঘটনাখানা লন্ডনের দ্য গ্রাফিক ইলাস্ট্রেটেড উইকলিতে একই বছরের ১৮ জুন ছাপা হয়েছিল সচিত্র উপস্থাপনা আকারে।

সিগন্যাল পোস্টের নতুন ব্যবহার

এবারে বলব উত্তর ভারতের এক রেলওয়ে স্টেশনের কাহিনি। স্টেশনের কাছাকাছি জায়গায় সিগন্যাল পোস্টে  সিগন্যাল লাইট জ্বালাতে যাওয়ার মুহূর্তে সিগন্যাল ম্যান একখানা বাঘের মুখোমুখি হয়ে যান। তবে তার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। তৎক্ষণাৎ সিগন্যাল পোস্টের মাথায় উঠে যান সেই সিগন্যাল ম্যান। অনেকক্ষণ ঝুলে ছিলেন সেখানেই। অবশেষে একটি ট্রেনের হুইসেল ও আগমনে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় বাঘটি। আর এভাবেই প্রাণে বাঁচেন সেই সিগন্যাল ম্যান। 

ঘটনার বিবরণ লেখা যে চিঠিটি স্থানীয় স্টেশন মাস্টার পাঠিয়েছিলেন ট্রাফিক সুপারিন্টেনডেন্টকে তা ছিল অত্যন্ত রসিকতাপূর্ণ এবং বাঙালি বাবুর স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় লেখা। এই ঘটনার স্কেচটি মেজর জে. আর. ডড্‌ আঁকেন। ১৮৯৫ সালের ৫ জানুয়ারি দ্য গ্রাফিক ইলাস্ট্রেটেড সংবাদপত্রে ছাপা হয় সেই ইলাস্ট্রেশন।

ভারতের গভীর জঙ্গলে, রেললাইনের কাছেই এক ব্যক্তি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি তখনও জানতেন না তার অদৃষ্টে সেদিন কী অপেক্ষা করছে! হঠাৎই এক পাইথন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেহ জড়িয়ে শক্ত প্যাঁচে চেপে ধরে। ঠিক তখনই আরেক দিক থেকে এক বাঘ এসে সেই সাপের ওপর আক্রমণ করে। সাপটিও এবার বাঘটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। 

এদিকে ট্রেন তখন প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসছে এই ভয়ংকর জটলার দিকে। ট্রেনের চাকার নিচে রক্তাক্তভাবে এই জটলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর আশিলে বেলত্রামের আঁকা ছবিটি বেরোলো ইতালির দ্য কুরিয়ের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।

বাঘ বিভ্রাট

দ্য বয়েজ ওন পেপার নামক গল্প পত্রিকায় ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত বাঘ সংক্রান্ত একখানা গল্পের কথা না বললেই নয়। উত্তমপুরুষের জবানিতে লেখক যেভাবে লিখেছেন তার সারমর্ম এই যে, লন্ডনের পশুশালায় সেদিন প্রাণী নামানোর বড়সড় আয়োজন। কিন্তু বেঙ্গল বাঘমশাই এসব আয়োজনকে পাত্তা না দিয়ে খাঁচার পেছনটা নিজ উদ্যোগে ভেঙে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়। দর্শকেরা ভাবল, এ বুঝি নতুন ধরনের শো। এরই মধ্যেই এক কৌতূহলী শিশু বাঘের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। বাঘও সৌজন্য রক্ষা করল। সরাসরি শিশুটিকে মুখে ধরে দিল দৌড়। লেখক প্রাণপণে পেছনে ছুটে গিয়ে বাঘের ঘাড় চেপে ধরলেন। লোহার লাঠি দিয়ে এক নাগাড়ে কড়া শাসন করতে হলো তাকে। উত্তম মধ্যম খেয়ে বাঘটি তখনই শিশুটিকে ছেড়ে দেয়।

ছেলেটি বেঁচে গেল, কিন্তু লেখক বাঁচলেন না! শিশুটির দর্জি বাবা মামলা ঠুকে বসলেন আর লেখককে দিতে হলো ৩০০ পাউন্ড। যদিও মামলা না করবার অনুরোধে তিনি ৫০ পাউন্ড আর্থিক ক্ষতিপূরণ তাকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৩০০ পাউন্ড পাওয়া সত্ত্বেও শিশুর বাবাকে মামলার ব্যয়ভার দরুন ২৪০ পাউন্ড গুণতে হলো। অর্থাৎ, সেরকম লাভবান হতে পারলেন না কিছুই, বরং হয়রানি।

এই অবস্থায় লেখক যখন বাঘটিকে বিক্রি করে ঝামেলামুক্ত হতে চাইছেন, তখনই মেনাজারির মালিকের দেখা মিলল। ঠিক ওই দামে (৩০০ পাউন্ড) বাঘটিকে কিনে নিয়ে গেলেন মেনাজারির মালিক। ভাগ্যের কী অদ্ভুত পরিহাস! নতুন মালিক বাঘটির নাম দিলেন শিশুখাদক বাঘ। এই নামের সদ্ব্যবহার করে তিনি বিরাট রোজগার করলেন।

ভারতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্রিটিশ মেমসাহেব। তিনি একেবারেই জানতেন না যে তার গাড়িতে ২২০ কিলোগ্রাম ওজনের এক অনাহুত অতিথি চড়ে বসেছে। সে দানবটি নখ দিয়ে গাড়ির পেছনে উঠল এবং সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার পেছনের পা অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা মেজরের বুকের ওপর আর সামনের পা দুটি মেমসাহেবের আসনের পেছনে শক্ত করে ধরা। মেমসাহেব দুই হাতে স্টিয়ারিং আঁকড়ে ধরে গাড়ি চালানোয় এতই মনোনিবেশ করেছিলেন যে নতুন যাত্রীর অস্তিত্ব টেরই পাননি। ১৯০৭ সালের ৪ মে তারিখে দ্য গ্রাফিক সংবাদপত্রে ছাপা হয় ছবি। চিত্রটির শিল্পী জন চার্লটন এবং ঘটনার বিবরণ জানা যায় লেখক অ্যামব্রোজ প্র্যাটের সৌজন্যে।

ডাকযাত্রা এবং বাঘযাত্রা

কাদা ভরা জঙ্গলপথ ধরে পালকি এগোচ্ছে। ঠিক সেই সময় রাস্তার ডানদিকে ঝোপে ওঁত পেতে থাকা একটি বিশাল বাঘ হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়—দুই পালকি-বাহক প্রাণ ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়, আর ভেতরে বসা যাত্রী হতভম্ব হয়ে পড়ে। 

১৮৫০–১৮৮০ সালের দিকে এমন ঘটনা এতটাই সাধারণ ছিল যে, দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ, দ্য গ্রাফিকের মতো পত্রিকায় নিয়মিত এ ধরনের ইলাস্ট্রেশন ছাপা হতো।

জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ

সূর্য উঠতেই সোনালি আলোয় জেগে ওঠে জঙ্গল। পাখিরা ডানা ঝাপটে শিশির ঝেড়ে গান তোলে। এদিকে রাতের শিকারে ক্লান্ত বাঘ-দম্পতি নদীর দিকে এগোয় তৃষ্ণা মেটাতে। চারপাশের কোলাহল উপেক্ষা করে তারা পরিচিত পথে এগিয়ে যায়। নদীর ধারে পৌঁছে বাঘিনী সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশ দেখে। কিন্তু বাঘটি দ্বিধা না করে সামনে ঝুঁকে জল পান করে। ঠিক সেই মুহূর্তে জলের নিচে ওঁত পেতে থাকা কুমির চোখের পলকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

তার পাথুরে চোয়াল চেপে ধরে বাঘের মাথা। শুরু হয় মরিয়া লড়াই, কিন্তু গভীর জলে কুমিরই প্রকৃত রাজা। কয়েকটি শক্তিশালী টানে সে বাঘটিকে জলের তলায় টেনে নেয়। তীরে ভেসে ওঠা কিছু বুদবুদ আর লালচে দাগই কেবল সাক্ষ্য দেয় এইমাত্র ঘটে যাওয়া ভয়াবহ, নৃশংস সংঘর্ষের। 

বন্যপ্রাণী বিষয়ক বই 'The Life and Habits of Wild Animals' (১৮৭৪) এ এই নাটকীয় চিত্রণটি অত্যন্ত জীবন্তভাবে তুলে ধরা হয়। ছবি এঁকেছিলেন চিত্রশিল্পী জোসেফ উলফ এবং এফ. ডব্লিউ. ও এডওয়ার্ড হুইম্পার সেগুলোকে কাঠের ওপর খোদাই করে ছাপার উপযোগী করতেন।

১৮৭৫ সালের পুরোনো দিনের ভিনটেজ চিত্রে এক ভয়াবহ দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

মৌসুমি বর্ষার তীব্র বন্যায় ব্যাক্সটার পরিবারের দুই শিশু অ্যামব্রোজ ও ফ্রান্সেস্কা ভেসে যায়। একসময় তারা একখানা ভেলা আকড়ে ধরে। খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই দেখে দম বন্ধ করা এক পরিস্থিতি। তারা নিজেদেরকে আবিষ্কার করল একটি ২৫০ কেজি ওজনের বেঙ্গল টাইগারের সঙ্গে একই ভেলায় ভেসে বেড়াতে।

টিকে থাকার লড়াই

বিশ শতকের শুরুর দিকের কথা। বোম্বের কাছের কোনো এক জঙ্গলে এক ভারতীয় কাঠুরে কাঠ কাটছিলেন। সেই জঙ্গলেরই এক বাঘ মানুষের মাংসের গন্ধ পেয়ে আচমকা কাঠুরেকে আক্রমণ করে বসে। বাঘের মুখোমুখি হয়ে কাঠুরে প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আত্মরক্ষায় তিনি তার কুঠার ব্যবহার শুরু করেন। কয়েকটি আঘাত হানার পর যখন তিনি যখন প্রায় পরাস্ত, তখন প্রবল ধৈর্য ও আত্মসংযমে কাঠুরে এক ভয়ংকর প্রত্যাঘ্যাত করেন। এতে বাঘর খুলি দ্বিখণ্ডিত হয়ে সে তৎক্ষণাৎ মারা যায়। 

সে সময়ে প্রকৃতি ও বন্য জন্তুর সঙ্গে লড়াই করে মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের ছবিটি শিল্পী আশিলে বেলত্রামের আঁকা।

বাঘের কবলে

একখানা পুরোনো জার্মান মুদ্রণচিত্রে এক ব্রিটিশ অফিসারকে ভারতে বাঘের আক্রমণের দৃশ্যে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটি দেখে অনুমান করা সহজ, এটি কোনো ধানক্ষেতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। তবে চিত্রণের সময়টি অজানা। 

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবির কথা না বললেই নয়। এই ছবিটিতে একজন মেমসাহেব পড়ে আছেন মেঝেতে। বাঘ তার বুকে থাবা বসিয়ে শিকারীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের মানুষজন আতঙ্কিত। ছবির পেছনের পটভূমিতে যে চূড়াটি দেখা যাচ্ছে তা সম্ভবত দিল্লির তাজমহলের।

'কলোনেল পিকারিং বুঝতে পারলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করার সিদ্ধান্তটি সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে অনুশোচনাময় সিদ্ধান্ত।' এই ক্যাপশনের ছবিটি শিল্পী সি. এল. ডাউটির আঁকা। 

উনিশ এবং বিশ শতকের ভারতে বিশাল অংশ জুড়ে ছিল ঘন জঙ্গল। সাঁওতাল পরগনা থেকে মধ্যপ্রদেশ, সেন্ট্রাল প্রভিন্সেস, রাজপুতানা, পূর্ববঙ্গ, সুন্দরবনসহ অনেক জায়গাতেই বাঘ ছিল খুবই সাধারণ প্রাণী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনা ক্যান্টনমেন্ট, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, বন, রাজস্ব ও জরিপ দপ্তর, সীমান্ত ফোর্ট ও আউটপোস্ট যেসব এলাকায় ছিল সেখানে বাঘ, চিতা, ভালুক, নেকড়ে বেশ সচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করত। ফলে কোম্পানির অফিসার, সার্ভেয়ার, ম্যাজিস্ট্রেট, ডাকবাহক, সৈন্য অনেকেই সরাসরি বন্যপ্রাণীর ঝুঁকির মধ্যে থাকতেন। 

১৮৫০ এর দশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনেক কর্মচারী বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। সে বিষয়টিকে শিল্পী তার চিত্রণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে কলোনেল পিকারিং কোনো বাস্তব চরিত্র নন। জজ বার্নাড শ এর নাটক Pygmalion এর একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র তিনি।

ব্রিগেডিয়ার এভারাড চ্যাম্পনি সেদিন সকালে একা ঘোড়ায় চড়ে জঙ্গলের পাহাড়ি পথে এগোচ্ছিলেন। দিনটা ছিল একেবারে সাধারণ। হালকা রোদ, চারপাশে শান্ত নীরব জঙ্গল। হঠাৎ কোনো শব্দ না করেই ঝোপের আড়াল থেকে একটা বিশাল বাঘ লাফিয়ে পড়ে তার ওপর। চোখের পলকে বাঘের দাঁত আর নখ তাঁর কাঁধে পিঠে গেঁথে যায়। চ্যাম্পনি ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়ে পাথুরে ঢাল বেয়ে নিচের দিকে গড়াতে থাকেন। বাঘও তাকে চেপে ধরে সেই গড়াগড়িতে নেমে আসে।

গড়িয়ে পড়তে পড়তে তিনি বুঝতেই পারেন না কতটা আঘাত পেয়েছেন। নিচে এসে থামতেই দেখা যায় তার এক পা একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মাংস, পেশি সব নষ্ট, হাড় প্রায় বেরিয়ে এসেছে। তবুও ঢালের ধাক্কায় বাঘটা একটা সময় তাল হারিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। 

কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গীরা এসে তাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ক্যাম্পের চিকিৎসকরা দেখে ভয় পেয়ে যান। বাঘের কামড়, নখের ক্ষত আর গড়িয়ে পড়ার ধাক্কায় পা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পা কাটতে হবে। 

সেখানে অস্ত্রোপচারের পর কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হন। এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বহু বছর পর চ্যাম্পনি নিজের গল্প লিখে প্রকাশ করেন 'How I Lost a Leg in India'।  এখানা শুধু তার অঙ্গ হারানোর গল্প নয়, পাশাপাশি ব্রিটিশ ভারতের জঙ্গল জীবনের এক বাস্তব ছবি। 

১৯০০ সালে লন্ডনের কলিন্স থেকে 'লেফটেন্যান্ট ফ্র্যাম্পটনের সকালের হাঁটাহাঁটি হঠাৎই নিষ্ঠুরভাবে বাধাগ্রস্ত' ক্যাপশনে এই ইলাস্ট্রেশনটি প্রকাশিত হয়।

১৮০৫ সালে অঙ্কিত 'ক্যাপ্টেন ক্যামেরন, বাঘ শিকারি' ক্যাপশনে ছবিটিতে ভারতীয় চিত্রকলার ছাপ স্পষ্ট। এই ছবিতে একজন ইংরেজ সাহেব গর্বিত ভঙ্গিতে হাতির পিঠে চেপে বসে আছেন। তার সিংহাসনের নিচেই শোভা পাচ্ছে শিকার করা রক্তাক্ত বাঘ। ছবিটির সম্ভাব্য শিল্পী হিসেবে থর্নটর্ন  শিল্পী  রাম দত্তের নাম উল্লেখ করেছেন। 

পোষা প্রাণী হিসেবে বাঘ

টিপ্পু নামের বাঘশিশুটি ডক্টর ডিলানের দাড়ি একেবারেই পছন্দ করল না। সুতরাং সেটিকে টেনে উপড়ে ফেলাই সাব্যস্ত করলো। পেছন থেকে মেম সাহেব তাকে নিরস্ত করবার ব্যর্থ চেষ্টায় রত। ১৮৮৬ সালে উইলিয়াম র‍্যালস্টন এবং সি. ডব্লিউ. কোলের লেখা 'Tippoo. A Tale of a Tiger' শিরোনামের বাচ্চাদের বইতে ছাপা হয় এই মজার ছবিটি। 

ঔপনিবেশিক ভারতে বাঘ-চিতার উপস্থিতি কখন বাস্তবতা ছিল আর কখন ই বা কিংবদন্তি হয়ে উঠত তা বোঝা ছিল দুষ্কর। মানুষের মুখে মুখে এসব গল্প ছিল, ছড়িয়ে পড়ত দূর-দূরান্তে। ফিলিপ থর্নটনের পুনরুদ্ধার করা পুরোনো এসব ইলাস্ট্রেশনে শুধু সে সময়ের ঘটনা ই নেই, আছে এক যুগের মনস্তত্ত্ব। বাঘের সঙ্গে মানুষের সেই নিবিড় দ্বন্দ্ব কোথাও ভয়াবহ, কোথাও নিছক হাস্যকর আর কোথাও একেবারে ট্র্যাজিক। 

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত দৃশ্য অতিরঞ্জিত, কল্পনাপ্রসূত কিংবা নাটকীয় মনে হতে পারে। কিন্তু সেই সময়ে বাঘের আচমকা আগমন ছিল একেবারে সত্যি ঘটনা। আজকের দিনে বাঘমামা এতটাই দুর্লভ হয়ে গেছে যে, তাদের দেখতে হলে ন্যাশনাল পার্কে টিকিট কেটে, সাফারিতে চড়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জঙ্গলে ঘুরতে হয়। তবু যে দেখা মিলবে সে আশাও খানিকটা দুরাশা। আজকের মতন বাঘের কথাটি ফুরোলো, নটে গাছটি মুড়োলো।


ছবি: সংগৃহীত

Related Topics

টপ নিউজ

বাঘ / ভারতবর্ষ / বাঘ আতঙ্ক / ব্রিটিশ আমল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ছবি: সংগৃহীত
    মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কামাল ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
    ‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও
  • রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    ‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স 
  • ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
    ডাকসু নেতার ধাওয়া: দৌড়ে পালালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আ ক ম জামাল
  • ছবি: আনস্প্ল্যাশ
    বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট চালু, আকাশে উড়বে টানা ২৯ ঘণ্টা
  • ছবি: টিবিএস
    মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গলার পোড়া দাগের সূত্র ধরে যেভাবে ধরা পড়লেন আয়েশা

Related News

  • প্রতি মাসে গড়ে ৯টি বাঘ উদ্ধার; বিশ্বজুড়ে তীব্র হচ্ছে বাঘ পাচার সংকট
  • বাঘের দেখা মিলল সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া পর্যটন কেন্দ্রের ফুট ট্রেইলে
  • সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১২৫, এক দশকে বেড়েছে ১৯টি
  • বিশ্ব বাঘ দিবস: সুন্দরবনে গত ১০ বছরে বাঘ বেড়েছে ১৯টি 
  • আড়াই হাজার বছরের তক্ষশীলা: ইতিহাসের অতলে হারানো এক আধুনিক নগর

Most Read

1
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া কামাল ও তার পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

2
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও

3
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

‘অপমানবোধ’ করছেন, ভোটের পরে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি: রয়টার্স 

4
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
বাংলাদেশ

ডাকসু নেতার ধাওয়া: দৌড়ে পালালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আ ক ম জামাল

5
ছবি: আনস্প্ল্যাশ
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট চালু, আকাশে উড়বে টানা ২৯ ঘণ্টা

6
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গলার পোড়া দাগের সূত্র ধরে যেভাবে ধরা পড়লেন আয়েশা

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab