সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ১২৫, এক দশকে বেড়েছে ১৯টি

সর্বশেষ বাঘ জরিপ অনুযায়ী, গত এক দশকে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১৯টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫-এ।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বন অধিদপ্তরের আগারগাঁও সদর দপ্তরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, "২০১৪ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ ছিল। ২০১৮ সালের জরিপে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪-এ। আর সর্বশেষ ২০২৪ সালের জরিপে দেখা যায়, সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা ১২৫টি।"
এ বছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে 'মানুষ-বাঘের সুরেলা সহাবস্থান' প্রতিপাদ্য নিয়ে।
সংখ্যায় এই সামান্য বৃদ্ধির পরও অনুষ্ঠানে বক্তারা সতর্ক করে বলেন, চোরাশিকার এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে সুন্দরবনের বাঘ এখনো চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও দুবাই সাফারি পার্কের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আলী রেজা খান বলেন, বাঘ সংরক্ষণে তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা জরুরি, পাশাপাশি তাদের প্রধান শিকার হরিণের একটি স্থিতিশীল জনসংখ্যাও নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বন্যপ্রাণী পাচারকারী ও চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, "বাঘ শুধু একটি বন্যপ্রাণী নয়, এটি সাহস ও গর্বের জাতীয় প্রতীক। আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলকে 'টাইগার' নামে ডাকা হয়—এটি জাতি হিসেবে বাঘের সঙ্গে আমাদের গভীর আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ।"
সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি অবৈধ হরিণ শিকার বন্ধ, বারবার অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ এবং চোরা শিকার রোধে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, মানুষ-বাঘ দ্বন্দ্ব বেড়ে চলেছে। তাই সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা বনসম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিকল্প জীবিকার সুযোগ পায়।
তিনি আরও বলেন, বন সংশ্লিষ্ট অপরাধ বেড়েছে। এজন্য প্রকৃত পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে হবে এবং যারা জীবিকার তাগিদে বননির্ভর হয়ে পড়ছে, তাদের জন্য বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।
আলোচনায় অংশ নেন ওয়াইল্ডটিমের প্রধান নির্বাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ বিপাশা হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ এবং বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী।
অনুষ্ঠানে 'সুন্দরবনে সংঘাতপ্রবণ বাঘ ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা' এবং 'টাইগারস্ অব দ্য সুন্দরবনস' শীর্ষক দুটি নতুন প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
পাশাপাশি, সুন্দরবন ও এর বন্যপ্রাণীকে ঘিরে স্থানীয় শিল্পীরা পরিবেশন করেন ঐতিহ্যবাহী পটের গান।