ঢাকা শহরের পাখি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
রাত তখন দেড়টা, বৃষ্টির পর ঠান্ডা বাতাস। নিশ্চুপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল একটি লক্ষ্মী প্যাঁচা। অন্ধকারে তার শরীরের শুভ্র পালক এক অপূর্ব সৌন্দর্য ছড়িয়েছে চারিদিকে। কিন্তু আজকে থেকে সাত কিংবা আট বছর আগেও এই প্যাঁচাদের আধিক্য ছিল ক্যাম্পাসে। আমি নিজে চারবার আমার প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও এর চারপাশে আবিষ্কার করেছি এই প্যাঁচার অস্তিত্ব। চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সময় মিরপুর থাকতাম, তখনও নিয়মিত দেখতাম এই পাখি।
চলুন, একটু দিনের আলোর কথা বলি। ২০১৬ সালে আমি যখন প্রথম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যাই, তখন তাদের উপস্থিতি মেলে বাগানের বেশ কয়েকটি জায়গায়। সংখ্যায়ও তারা ছিল বেশ ভালো। কিন্তু এখন দেখা মেলে কালেভদ্রে।
আমার ঢাকা শহরে পাখি দেখার অভিজ্ঞতা গত এক দশক ধরে এবং বলতে গেলে নিয়মিতই। নিজের চোখে দেখা এই পরিবর্তন ছিল অস্বাভাবিক। চালুন, সময়ের সাথে সাথে ঘুরে আসি ঢাকা শহরের পাখিদের গল্পে।
তবে সবার আগে বলি ঢাকার পাখিদের অতীত ইতিহাস।
এই শহরের জন্ম ১৭ শতকের দিকে। তখন বুড়িগঙ্গার তীরে কিছু বসতি ছাড়া উত্তর দিকের মিরপুর, পল্টন, তেজগাঁও, কুর্মিটোলা ছিল বিশাল জঙ্গল, আর দক্ষিণের কামরাঙ্গীরচর ছিল বিশাল বাদাবন। এবং এই এলাকাগুলোতে বাঘ, বিশাল অজগর, বুনো শূকর, বনবিড়াল, মেছোবিড়াল, সোনালি বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণীর আনাগোনাও ছিল। ৫০ বছর আগেও ঢাকা ছিল আবাসস্থল, অফিস, দোকান আর রাস্তার চেয়ে জলা, বনজঙ্গল, তৃণভূমির সমন্বয়ে গঠিত এক অপূর্ব ক্যানভাস। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, তখন ঢাকার বর্তমান ব্যস্ত এলাকাগুলোতেও আনাগোনা ছিল বন্যপ্রাণীদের। ছিল তাদের অবাধ বিচরণ। কাঁটাবন থেকেও পাওয়া যেত শিয়ালের ডাক। একসময়কার দেশি ময়ূর, লাল বনমোরগ, মেটে তিতির, কালো তিতিরদের বিচরণের এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে ইটকাঠ আর জঞ্জালের স্তূপে। আর তারা হয়েছে ঢাকা থেকে বিলুপ্ত। বুনোহাঁস, সারসদের জলাশয়গুলো প্রাণ হারিয়ে পচা ডোবা আর বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধির মূল উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতি ধ্বংস করে মানুষ নিজেই তৈরি করছে তার মৃত্যুকফিন। প্রকৃতি হারিয়ে ফেলছে তার ভারসাম্য। চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু যেন প্রতিদিনের ঘটনা।
চলুন, দেখে আসি ঢাকা শহর থেকে হারিয়ে যাওয়া পাখিরা মূলত কারা এবং তাদের ধরন।
একটু ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাদাবন, জলা, নলখাগড়ার বন, জলাভূমি, বিল, ঘাসবন-জাতীয় আবাসস্থলগুলো যখন থেকে ঢাকা শহরে মানুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তারপর থেকেই মূলত এই আবাসস্থলকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা পাখিদের বৈচিত্র্য কমতে শুরু করেছে। ইতিহাস বলে, উনিশ শতকের শেষের দিকে এসে ঢাকার জলাভূমি থেকে বিদায় নিয়েছে গগনবেড়। এরপর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যখন থেকে ঘাসবন, শালবন কমতে শুরু করল, শালবনে মানুষের পদচারণা বাড়ল, কৃষিজমির সম্প্রসারণ হলো, তখন ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল ময়ূর এই ঢাকা থেকে এবং একসময় বাংলাদেশ থেকেই হারিয়ে গেল এই ময়ূর। পাশাপাশি অবৈধ আহরণ, চোরাশিকারের কারণে হারিয়েছে এই পাখি। একই অবস্থা বনমোরগ, কোয়েল আর তিতির-জাতীয় পাখির জন্য, যারা একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই হারিয়ে গেছে।
একসময় জলজ আবাসস্থলে পরিপূর্ণ ঢাকা কত যে গুরুত্বপূর্ণ ও বিপন্ন পাখিতে পরিপূর্ণ ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় কিছুদিন আগে, ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে একটি রাঙা মানিকজোড়ের উপস্থিতি দেখে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে এই পাখিরা। সারস, কালা মানিকজোড়, ধলা গলা মানিকজোড়, রাঙা মানিকজোড়, কাস্তেচরা, বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ও পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, বুনোহাঁস হারিয়ে গেছে একবিংশ শতাব্দীর আগেই। এই শহরেও একসময় দেখা মিলত শকুনের ঝাঁকের; তারাও আজ হারিয়ে গেছে সময়ের সাথে সাথে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির শিকারি পাখি ছিল এই এলাকায়, যারা কালের স্রোতে আর নেই।
ঢাকার পাখিদের সোনালি সেই দিনগুলো থেকে ফিরে আসি বর্তমানে। গত দশ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি, ঢাকার পাখিবৈচিত্র্য বদলে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত। এত দ্রুত নগরায়নের ছোঁয়া ক্রমশ পরিবর্তন করছে আবাসস্থল একইসাথে পরিবর্তন করছে পাখিদের জনসংখ্যা ও সম্প্রদায়ের গঠন। গত দশ বছরে আমার নিজের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে মোট পাখির প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ২০০-র কাছাকাছি। শুনতে অবাক লাগলেও, কাক, চিল, ময়না, শালিকের এই শহরে টিকে আছে এত প্রজাতির পাখি; তবে গুনছে বিলুপ্তির প্রহর।
ভোরের হিমেল বাতাস আর সূর্যের সোনারোদের সাথে অপূর্ব এক স্নিগ্ধতা যুক্ত করে দোয়েলের মিষ্টি শিস। ৭-৮ বছর আগেও ঢাকা শহরে নিয়মিত দেখা যেত এই পাখি, কিন্তু বর্তমানে এদের দর্শন কিছুটা অনিয়মিত।
ঢাকা শহরে গত দশ বছরে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন দেখা গেছে জলাভূমি ও জলাভূমিকেন্দ্রিক পাখির জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন। ঢাকা বাংলাদেশের ২২টি জীব-পরিবেশীয় এলাকার মধ্যে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিতে অবস্থিত, যা জলাভূমিকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক সম্পদ আর পাখির উপস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দেশের মধ্যস্থান হওয়ায় আরও পেয়েছে বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চলের মিলনাস্থল ও পরিযায়ী পাখিদের পথের প্রভাব। ২০১০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্য ও স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৬০ সালে ঢাকার জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৫২ হেক্টর ও নিম্নভূমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৫২৭ হেক্টর, যা ২০০৮ সালে এসে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৯৯০ হেক্টর ও ৬ হাজার ৪১৪ হেক্টরে। ইনস্টিটিউট অভ ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। এমনকি ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরের মোট আয়তনের ২০ শতাংশের বেশি ছিল জলাভূমি। একটি শহরের মোট আয়তনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয় থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় এখন টিকে আছে মাত্র ৩ শতাংশ।
আর ঢাকায় যে বর্তমানে জলাশয়গুলো টিকে আছে, সেগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও গুণগত মান কি ঠিক আছে? এর উত্তর হলো, না। ক্রমাগত দূষণের ফলে বেশিরভাগ জলাশয়ের পানি এখন বিষাক্ত। পানির বিভিন্ন নিয়ামক যেমন দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদিতে এসেছে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন, যা পরিবর্তন ঘটিয়েছে জলজ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনায়। তাই তো পরিবর্তন ঘটেছে উৎপাদক থেকে সর্বোচ্চ খাদকের স্তর পর্যন্ত।
খাদ্যশৃঙ্খলে ঘটে গেছে এক বিশাল পরিবর্তন। আর এর ফলেই লক্ষ করবেন, কিছু কিছু জলাশয় ঠিকই আছে, জলাশয়ে পানিও আছে, কিন্তু সেখানে জীবের বৈচিত্র্য নেই। নেই পাখিবৈচিত্র্য।
দশ বছর আগেও সরালি হাঁস, বড় সরালি, বালিহাঁস, পিয়াং হাঁসসহ পাঁচ থেকে সাত প্রজাতির বুনোহাঁসের দেখা মিলত। দেখা মিলত কালেম, কোড়া, ডাহুক, পানমুরগিসহ বিভিন্ন জলজ পাখির। সহজে দেখা মিলত ডুবুরি পাখির। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের লেক, আফতাবনগর, দিয়াবাড়ি, খিলখেত ছিল এই জলাভূমিকেন্দ্রিক পাখিদের স্বর্গ আর অভয়ারণ্য।
কিন্তু গত দশ বছরে উন্নয়ন কার্যক্রমের বিপরীতে হারিয়ে গেছে এই আবাসস্থলগুলো। ২০১৭ সালে আফতাবনগরে যে জলাভূমিকেন্দ্রিক পাখিদের যে জীববৈচিত্র্য ছিল আজ তা কিছুই নেই। বিশেষ করে ধূসর বক, লালচে বক, বিভিন্ন প্রজাতির বগা বগলা, বাটান জিরিয়া, চ্যাঁগা টিটি ইত্যাদি। দিয়াবাড়ির লেকগুলো হাঁসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে মৃতপ্রায়। এই এলাকাগুলোতে একসময় পরিযায়ী পানকৌড়ির বড় ঝাঁক দেখা যেত। এছাড়া ছিল বিভিন্ন প্রকার শিকারি পাখি, যেমন ঈগল, শাহীন, শিকরা, প্যাঁচা-জাতীয় পাখিরা। দেশের একমাত্র পরিযায়ী প্যাঁচা, ছোটকান প্যাঁচার দেখা পেয়েছিলাম এই এলাকাগুলো থেকে। আমুর ও লাল ঘাড় শাহীন ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ঈগলদের মধ্যে তিলা নাগ ঈগল ও মেটে মাথা কুড়া ঈগল গুরুত্বপূর্ণ।
জলাভূমিগুলোকে কেন্দ্র করে মাছরাঙা-জাতীয় পাখিদের উপস্থিতি ঢাকা শহরে গুরুত্বপূর্ণ। ধলাগলা, পাতি, পাকড়া, মেঘহও মাছরাঙা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে এসে ব্যাপকভাবে কমে গেছে এই পাখিদের জনসংখ্যা। কালেভদ্রে কিছু পাখির দেখা মিললেও সংখ্যায় কম।
ঢাকা ও এর চারপাশের ঘাসবন, বাদাবনগুলো এই জলাভূমির সাথে সংযুক্ত ছিল। এই বনগুলো ঢাকার যে পাখিটির জন্য সবথেকে পরিচিত, তা হলো লাল মুনিয়া।
ঢাকায় বছর দশেক আগেও দিয়াবাড়ি, পূর্বাচল, আফতাবনগরে ঝাঁকে, ঝাঁকে লাল মুনিয়ার দেখা মিলত। কিন্তু ক্রমেই এরা হারিয়ে যাচ্ছে শহর থেকে। বিশেষ করে এই প্রজাতির পাখি অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া অন্যান্য মুনিয়াদের অবস্থাও একই।
বিভিন্ন প্রজাতির ঘুঘু আর হরিয়াল এই শহরের পাখিদের অন্যতম সৌন্দর্য। আর এই শহরের সবচেয়ে সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ঘুঘুটি বোধহয় পাতি শ্যামা ঘুঘু। এছাড়া আছে তিলা ঘুঘু, ইউরেশীয় কণ্ঠি ঘুঘু, লালচে ঘুঘু।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেই একমাত্র দেখা মেলে এখন পাতি শ্যামা ঘুঘু। তিলা ঘুঘুর দেখা ঢাকা শহরে সর্বত্র হলেও লালচে ঘুঘু এবং কন্ঠিঘুঘুর দেখা মূলত ঘাসবনগুলোতেই।
বিভিন্ন বট বা বুনো ফলদায়ী গাছকে কেন্দ্র করে দেখা মেলে নানা প্রজাতির হরিয়ালের। তবে দুঃখজনকভাবে এই হরিয়ালগুলোর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। কারণ ঢাকা শহরে কমেছে বট গাছ এবং বুনো ফলজ গাছের পরিমাণ।
আফতাবনগর, দিয়াবাড়ি কিংবা খিলখেতে বছর দশক আগেও গ্রীষ্মে চাতক পাখির দেখা মিলত। কিন্তু এখন তা একেবারে নেই। পাশাপাশি একেবারে কমে গেছে খয়রা পাখ পাপিয়া, কমন কুক্কু, ধূসর পেট পাপিয়ার।
আগে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গেলে নিয়মিত দেখা মিলত সবুজ ঠোঁট মালকোহার। কিন্তু বর্তমানে তা একেবারেই অনুপস্থিত বা কালেভদ্রে দেখা মেলে। পাশাপাশি করুণ পাপিয়া, বউকথা কও, বড় ও ছোট কুবো, পাতি চোখ গেলোর সংখ্যাও অনেকটা হারিয়েছে এই শহর থেকে।
কয়েক বছর আগেও দিয়াবাড়িতে, খিলখেতে গেলে বা আফতাবনগরে গেলে হরহামেশা দেখা মিলত অনিন্দ্য সুন্দর হুদহুদ নামক পাখি বা সুলাইমানি পাখির। পাশাপাশি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও দেখা মিলত কালেভদ্রে। এই পাখিটির অনন্য সুন্দর ঝুঁটির গঠন আকৃষ্ট করত সবাইকে। তবে আজ আর এই পাখিটির সচরাচর দেখা মেলে না।
২০১৬ সালের শীতে হঠাৎ আবিষ্কার করলাম কার্জন হলের চারপাশে বেশ কিছু সবুজ সুইচোরা। এরা শীতকালের দিকে কার্জনে আসে, আবার চলে যায় দেশের অন্য কোথাও। তবে সারা বছর দেখা মিলত শহরে। বিশেষ করে উদ্যান, ঘাসবন ও প্রান্তরগুলোতে। পাশাপাশি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও আফতাব নগরে একটা সময় দেখেছিলাম খয়রামাথা সুইচোরাটাকে, যা এখন একেবারে নেই। আর গ্রীষ্ম পরিযায়ী নীললেজ সুইচোরার দেখা মিলত উদ্ভিদ উদ্যান, আফতাব নগরকে কেন্দ্র করে। তাদেরও আগের মতো দেখা যায় না আর।
বসন্ত বাউরিগুলো চার-পাঁচ বছর আগেও ছিল এই শহরের অনন্য সুন্দর পাখি। তাদের ডাক যেকোনো বন বা আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দিত। সেকরা বসন্ত আর দাগী বসন্ত ঢাকার সব উদ্যানে দেখা যেত। আর খিলখেত, উত্তরা, উদ্ভিদ উদ্যান ও দিয়াবাড়িতে পাওয়া যেত নীল গলা বসন্ত বাউরির। তবে বর্তমানে তাদেরও আর আগের মতো দেখা মেলে না।
২০২০ সালেও যখন উদ্ভিদ উদ্যানে হঁটতাম, দেখা পেতাম রাতচোরার। পাশাপাশি আফতাব নগর, খিলখেত থেকে প্রায়ই সন্ধ্যার পর ডাক পেতাম এই পাখিটির। এখন কালেভদ্রে দু-একটি রাতচোরার দেখা মেলে। পাশাপাশি প্যাঁচা ছিল এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ এক পাখি। লক্ষ্মী প্যাঁচা, খুঁড়ুলে প্যাঁচা কিংবা শিকরে প্যাঁচা ছিল অনেক। আর নিম প্যাঁচা ও খয়রা মেছো প্যাঁচা দেখা যেত কালেভদ্রে।
কিন্তু এখন লক্ষ্মী প্যাঁচা, খুঁড়ুলে প্যাঁচা আর খয়রা শিকড়ে প্যাঁচার দেখাই পাওয়া যায় না। অনেক বছর ধরে হদিস নেই খয়রা মেছো প্যাঁচার, আর নিম প্যাঁচা শুধু জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে দেখা যায়।
একসময় শকুন ছিল ঢাকার নিয়মিত পাখি। নব্বইয়ের দশকের দিকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছগুলোতে নিয়মিত দেখা মিলত শকুনের। কিন্তু এখন তো শকুন গোটা বাংলাদেশ থেকেই বিপন্ন। কিন্তু ২০১৫-২০ এর মধে দু-একবার কার্জন হলে দেখা মিলেছে পাখিটির।
বাগান, বাগিচা, আবাসিক এলাকায় প্রায়ই শোনা যায় কাঠঠোকরার ডাক। তবে কমেছে বাতাবী কাঠঠোকরার সংখ্যা। খিলখেত থেকে গত দশ বছরের মধ্যে নেই হয়ে গেছে বড় কাঠঠোকরা।
নীলকান্ত ঢাকা শহরের পাখিদের সৌন্দর্যের এক অনন্য অংশ। গত দশ বছরের মধ্যে আফতাবনগর, দিয়াবাড়ি, খিলখেত, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত দেখা মিলত পাখিটির। কিন্তু নগরায়ন এই পাখিটির সংখ্যাও অনেক কমিয়ে দিয়েছ।
করোনা মহামারির আগেও চার প্রজাতির টিয়ার দেখা মিলত এই শহরে, যার মধ্যে হিরামন টিয়া বা Plum-headed Parakeet, মদনা টিয়া, চন্দনা টিয়া বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিল হাজার হাজার সবুজ টিয়ার অসংখ্য বড় বড় ঝাঁক। গত দশ বছরে হয়তো সবথেকে বেশি কমেছে এই পাখিদের সংখ্যা ঢাকা শহর থেকে।
ঢাকা শহরের গত দশ বছরে বিপন্নতার ঝুঁকিতে যাওয়া আরও একটি পাখির গ্রুপ হলো বিভিন্ন প্রজাতির গায়ক পাখি। বিশেষ করে আবাসস্থল ভিত্তিক বিশেষায়িত পাখিরা অনেক বেশি হারিয়ে গেছে। যারা বিভিন্ন বিশেষায়িত দেশি বৃক্ষকে কেন্দ্র করে বাঁচত, কিংবা নির্দিষ্ট আবাসস্থলকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকতো তাদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
বেনেবউ বা হলদে পাখি নামক পাখিটি ঢাকা শহরের সর্বোত্র, বিভিন্ন গাছ বা ঝোপঝাড়ে দেখা যেত। পাশাপাশি সোনাবউ আর কালোমাথা বেনেবউয়ের কালেভদ্রে দেখা মিলত শীতকালে, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, দিয়াবাড়ি ও খিলখেতে। অনেক বছর আর এই দুই প্রজাতির দেখা পাইনি। তবে বেনেবউয়ের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
বন সুন্দরী নামক অপূর্ব সুন্দর পাখিটিকে কালে ভদ্রে দেখামেলে ঢাকা শহরে। গ্রীষ্ম পরিযায়ী এই পাখিটিকে শুধু মাত্র গ্রীষ্ম কালে উদ্যানগুলোতে দেখা মেলে।
গোলাপি সাহেলী, সুইনহোস সাহেলী সহ সাহেলীর বড় বড় ঝাকের দেখা মিলতো ঢাকা শহরে এই গত দশবছরের মধ্যেই। কিন্তু বর্তমানে কালে ভদ্রে ছোট সাত-সাহেলী ছাড়া কারও দেখাই তেমন ঢাকা শহরে মেলে না। আর বন আবাবিলের সংখ্যাও কমে গেছে দিয়াবাড়ি আফতাবনগর থেকে।
ফটিকজল এই শহরের বিভিন্ন বন, ঝোপঝাড়ের অতি পরিচিত পাখি হিসাবে পরিচিত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে বড় উদ্যান ছাড়া এদের দেখা খুব একটা পাওয়া যায় না। আর একই অবস্থা ছাতি ঘুরানি পাখিটির ক্ষেত্রেও।
কালে ফিঙে, ধূসর ফিঙে, কেশরী ফিঙে, ব্রোঞ্জ ফিঙে, ছোট ভীমরাজের দেখা গত দশ বছরেই পেয়েছি ঢাকা শহরে। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, দিয়া বাড়ি, খিলখেতে। তবে সবথেকে বেশি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে। এখানে বিরল প্রজাতিগুলোর উপস্থিতি তূলনামূলক বেশি। কালোফিঙে সারা ঢাকাতেই পাওয়া যায়, কিন্তু বর্তমানে বাকি প্রজাতিগুলো আর সহজে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের বাইরে দেখা মেলে না।
কষাই, লটেরো এই শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাখি। শহরের আবাসিক এলাকা এবং বনগুলোতে এখনও এদের দেখা মেলে। তবে মেটে পিঠ কষাইয়ের সংখ্যা কমেছে।
এই শহরের অন্যতম এক পাখি হলো বুলবুলি। বাংলা বুলবুলি এই শহরের সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া পাখিদের একটি। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে এই পাখির সংখ্যা অনেকটা কমেছে। পাশাপাশি একটা সময়ে এই শহরে সিপাহি বুলবুলি সচারাচর দেখতে পাওয়া গেলেও এখন শুধুমাত্র গুলশান এলাকায় পাওয়া যায়। এই পাখিটি একটা সময় বিভিন্ন এলাকা, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ওসমানী উদ্যানে গত দশ বছর আগে দেখা গেলেও এখন একেবারে নেই।
ঢাকা শহরে শাহ বুলবুলিও ধীরে ধীরে কমেছে। গতকয়েকবছরে আমার চোখে পড়েনি, তবে গত দশবছরের মধ্যে ওসমানী উদ্যান, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, খিলখেত আর দিয়াবাড়িতে ছিল পাখিটি।
ঢাকা শহরে অনেকে বলে কাকের সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু ঢাকা শহর থেকে ময়লার ভাগাড়গুলো ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে চলে গেছে। আর ঢাকার চারপাশ দিয়ে তৈরী হয়েছে বেশ বড় বড় কিছু ভাগাড়। তাই শহরের মধ্যে তূলনামূলকভাবে কম কাক দেখা যায়।
তবে শহর থেকে অনেকটা কমেছে কাকের সহোদর হাঁড়িচাচা নামক পাখিটির। আগে হর হামেশাই আবাসিক এলাকাগুলোতে দেখা মিললেও এখন আর দেখা মেলে না পাখিটির।
বনচড়ুই বা তিত পাখিরা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা এবং উদ্যানকে কেন্দ্র করে থাকলেও এখন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, খিলখেত, দিয়াবাড়ি ছাড়া দেখতে পাওয়া কিছুটা দুষ্কর।
ভরত ছিল গত দশ বছরে ঢাকার ঘাসবনে অনন্য এক পাখি। বিশেষ করে দিয়াবাড়ি, আফতাবনগর, খিলখেতে এই পাখিটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল।
সাত-আট বছর আগেও দিয়াবাড়ি, আফতাবনগর গেলে ভোমরা ছোটন, প্রিনিয়া, ঘাসপাখি, বিভিন্ন প্রকার ফুটকি, চুটকির দেখা মিলতো ঘাসবনে খুব সহজে। শরতের কাশবনের মাঝে এই পাখিগুলো আর এদের শ্রুতিমধুর কলকাকলি অন্যরকম এক আবাহ তৈরি করত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এদের সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে।
খিলখেত এলাকায় তুরাগের তীর ঘেঁষে বনগুলোতে একসময় নিয়মিত দেখা দিত উদয়ী ধলা চোখের। কিন্তু এখন সেই বনগুলোই চলে গেছে হাউজিং কোম্পানির গ্রাসে।
বন ছাতারে এখনও ঢাকার উদ্যান, বাগানগুলোর পরিচিত এক পাখি। এখনও দেখা মেলে এই পাখিটির, উদ্যানে গেলে কিচিরমিচির আওয়াজে। তবে একটা সময় মেঠো ছাতারের দেখা পাওয়া গেলেও ঘাসবন থেকে এখন বলতে গেলে হারিয়ে গেছে এই পাখি।
২০১৬ সালের দিকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যখন প্রথম প্রথম যেতাম তখন শীতে অসংখ্য ফুটফুটি চটক দেখতে পেতাম। এই পাখিটি পরিযায়ী। তবে সময়ের সাথে সাথে এখন আর আগের মতো দেখা মেলে না পাখিটির। ঢাকার ঝোপঝাড়, বাগান, খিলখেতে বাড়ির পাশের আঙিনার অপূর্ব সুন্দর একটি পাখি হলো কমলা বৌ বা কমলা দামা। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে খুব সহজেই দেখা মেলে পাখিটির। লাফিয়ে লাফিয়ে নানা ধরনের পতঙ্গ, কীট খায়। এখনও দেখা মেলে। কিন্তু অনেকটা কমে গেছে আঁশটে দামার দেখা। কালেভদ্রে টিকেলস দামার দেখা মেলে। রুবি থ্রোট, ব্লু থ্রোট, অম্বর চুটকি, নীল শীশ দামা, তুলিকা, লাল গির্দি, পাতি স্টোনচ্যাট, সাদালেজ স্টোনচ্যাট ঘাসবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির পাখি ছিল বিগত এক দশকে। কিন্তু এদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে।
তবে ফুলঝুরি পাখিদের দেখা এখন একেবারে নেই বললেই চলে ঢাকায়। মৌটুসীদের দেখা খুব সহজেই মেলে বাগানগুলোতে। শহরের চারপাশকে কেন্দ্র করে আছে বাবুই পাখিদের ঝাঁক। আর চড়ুই তো শহরের নিয়মিত বাসিন্দা।
নানা প্রজাতির খঞ্জনের দেখা খুব সহজে মেলে ঢাকার বিভিন্ন জলাভূমিগুলোকে কেন্দ্র করে। সাদা খঞ্জন, ধলাভ্রু খঞ্জন, সিট্রিন খঞ্জন, হলদে খঞ্জনের লেজ নাড়ানি মুগ্ধ করে দর্শককে।
এই শহরে আসে পরিযায়ী পাখিরাও। এখনো বছরে ৪০ প্রজাতির বেশি অতিথি পাখি আসে এই ঢাকা শহরে, যার মধ্যে আছে মাছমুরাল, নানা প্রজাতির খঞ্জন, জিরিয়া, বাটান, চ্যাগা, ছোট কান প্যাঁচা, আঁশটে দামা, ব্লু থ্রোট, রুবিথ্রোট, লাল গির্দিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুটকি ও চুটকি-জাতীয় পাখিরা। আমুর ফ্যালকন, কয়েক প্রজাতির ঈগল, বাজার্ড, চিল, প্যাঁচাসহ দেখা মেলে বিভিন্ন শিকারি পাখির। কিন্তু এদের সংখ্যা প্রতিবছর ক্রমেই কমছে। কারণ এরা হারাচ্ছে আবাসস্থল, ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে এদের প্রকৃতিক পরিবেশ।
নগরায়নের ফলে কিছু প্রজাতির পাখি, যেমন ময়না, শালিক, চিলসহ আবর্জনাভূক কিছু পাখি জীবন ধারণের সুযোগ-সুবিধা, খাদ্যের উৎসের প্রাচুর্য, কিংবা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে, যার ফলে তাদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে যায়। তুলনামূলক অবস্থান বা Relative abundance খেয়াল করলে ঢাকা শহরে পাখির প্রজাতির মধ্যে অসম বিন্যাস পরিলক্ষিত হয়—মানে কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির পাখির সংখ্যা এখানে খুবই বেশি আর বেশিরভাগ আবাসস্থল ও খাদ্যনির্ভর পাখির সংখ্যা অনেক কম।
এবার বলি ভবিষ্যতের কথা।
শহুরে মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, ঢাকা শহরে পাখি নেই। তারা পাখি দেখে না, কিংবা আর পাখির ডাক শোনে না। আমার প্রশ্ন হলো তারা কি কখনো পাখি দেখার বা তাদের ডাক শোনার চেষ্টা করেছে? পাখিরা কীভাবে থাকবে এই শহরে, ভেবেছে? ভাবলে জলাভূমিগুলো ভরাট করে কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করত না, কিংবা ঘাসবন বা প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করত না। আর হর্ন বাজিয়ে শহরের শব্দদূষণ করত না, কারণ হর্নের শব্দে পাখিদের এই শহরে বেঁচে থাকার আকুতি শহরের মানুষের কাছে পৌঁছায় না।
এবার বলি কী হতে পারে, যদি এভাবে দখল-দূষণ চলতেই থাকে।
এককথায়, আগামী কয়েকবছর, সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে এই শহর থেকে আবাসস্থল-বিশেষায়িত পাখিরা, যেমন জলাভূমি বা ঘাসবনকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা পাখিরা একেবারে হারিয়ে যাবে। বিশেষ করে দূষণ এই শহরের পাখিদের অনেক বেশি বিপন্ন করে দিচ্ছে। আর তার ফলে অন্যত্র স্থানান্তরিত হচ্ছে এই শহুরে পাখিরা।
এমনটা চলতে থাকলে অচিরেই পাখিবৈচিত্র্য যা টিকে আছে, তার অনেকটাই হারাবে এই ঢাকা শহর।
এখন আমরা যে পাখি সংরক্ষণ করবো, এটা কি শুধুই পাখির জন্য? ঢাকা শহরের পাখিদের সংরক্ষণ করতে হবে শুধু পাখিদের স্বার্থে নয়, মানুষের স্বার্থে। নগর পরিকল্পনায় তাদের জন্যও স্থান রাখতে হবে। ইট-কাঠের নগরীতে তাদের বেঁচে থাকার জন্য তারাও যেন পায় একটু প্রাকৃতিক আবাসস্থল।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের মতো করে শহরে প্রয়োজন কিছু পার্ক, যেখানে থাকবে প্রাকৃতিক পরিবেশ, থাকবে দেশি বুনো গাছপালার সমাহার, যেখানে বন্যপ্রাণীরা থাকবে নিরাপদে, হবে পাখির কলকাকলীতে মুখরিত। শুধু গাছপালা নয়, দেশি লতাগুল্মসমৃদ্ধ ঝোপঝাড়ের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। কারণ শুধু শহর নয়, গ্রামেও জঙ্গল সাফের নামে এই গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল কে ক্রমান্বয়ে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। যার পুরো প্রভাব গিয়ে পড়ছে খাদ্যশৃঙ্খলে, আর আমরা হারাচ্ছি আমাদের পাখিদের।
এছাড়া আবাসিক এলাকা, অফিস চত্বর পাখি সংরক্ষণে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো পরিপূর্ণ করতে হবে প্রকৃতিক সবুজ আচ্ছাদনে। প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন সুস্থ ভাবে বজায় থাকে, সেদিকে দিতে হবে নজর। জলাভূমি, ঘাসবন, বাদাবন রক্ষায় বিশেষ নজর দিতে হবে। দূষণের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে এবং কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইটকাঠের নগরীগুলোকে হয়তো আর তাদের পূর্বের পরিপূর্ণ সবুজ রূপ ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। তবে এখন আমাদের যতটুকু প্রাকৃতিক পরিবেশ অবশিষ্ট আছে, পাখিদের জন্য সর্বোপরি আমাদের নিজেদের জন্য হলেও সেটুকু রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য শহরের অবস্থা যেন ঢাকার মতো না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে নগরের পাখিদের। সব প্রাণীই এই ধরিত্রী মায়ের সন্তান, আর সবার অধিকার আছে তার মায়ের কোলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার।
- ছবি: আশিকুর রহমান সমী
