বাঘ নয়, তবু তারে কেন এতো ভয়!
আমাদের এলাকায়, অর্থাৎ নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় এদের খুব একটা দেখা যেত না। তবে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর ওপারের ভাওয়াল গড় অঞ্চলে ওরা বেশ ভালো অবস্থায় টিকে ছিল। কৈশোর আর যৌবনে গাজীপুরের কালিগঞ্জ এবং কাপাসিয়া থানার বহু স্থানে এদের দেখা পেয়েছি। লোকজনের হাতে নিয়মিত মারা পড়তো ওরা। সকলের কাছে সে 'বাঘ' নামে পরিচিত ছিল। কোথাও তার অস্তিত্ব চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের পিটিয়ে হত্যা করত।
এছাড়াও ফাঁদ পেতে, গুলি করে কিংবা জঙ্গল 'বিট' করে এদের মারা হতো। তবে সুখের বিষয় এসব অঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে এখনো ওরা টিকে আছে। আর ইদানিং সরকারিভাবে এদের সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি পদক্ষেপ।
আজকে ভাবলে বড় আশ্চর্য হতে হয়, কোথাও কোথাও এদের শিকার করা রীতিমতো ঐতিহ্য এবং সম্মানের বিষয় ছিল। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে আমি কাপাসিয়া থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কামড়া মাসুক গ্রামের একটি বাড়িতে যাই। এই বাড়িটি সকলের কাছে 'বাঘ মারা' বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। গৃহকর্তার নাম ছিল আলাউদ্দিন শেখ, তিনি ছিলেন একজন দক্ষ শিকারি। তার পিতা আলিমুদ্দিন শেখও ওই বিশেষ প্রাণী শিকারে পারদর্শী ছিলেন।
শিকারের কাঁজে তারা এক অন্যরকম বল্লম ব্যবহার করত, যার ডগা বড়শির মত কাটাযুক্ত, কোন প্রাণীর গায়ে তা বিদ্ধ হলে খুলে না গিয়ে আটকে থাকতো। ছিল বিশাল লম্বা জাল, জঙ্গলের এক মাথায় পেতে রেখে, অন্য দিক দিয়ে ধাওয়া করে প্রাণীটিকে জালবন্দী করা হতো। সে তাদের কাছে 'মেছি বাঘ' নামে পরিচিত ছিল। আসলে তা ছিল অতি সাধারণ এক মেছো বিড়াল।
প্রকৃতিতে স্বাভাবিক খাদ্যের অভাব দেখা দিলে মাঝেমধ্যেই গ্রামের লোকজনের পোষা হাঁস-মুরগি কিংবা ছাগল আক্রমণ করে বসতো। তখন রীতিমতো উৎসবের আমেজে দলবেঁধে তাকে হত্যা করত সবাই। আর এসব শিকারের নেতৃত্বে থাকতো আলাউদ্দিন শেখের পরিবারের লোকজন। তবে পরবর্তীতে বন বিভাগ এবং কিছু প্রাণী প্রেমীর প্রচেষ্টায় এখানে মেছো বিড়াল হত্যা বন্ধ করা হয়। আলাউদ্দিন শেখ নিজেও হয়ে ওঠেন একজন বন্যপ্রাণী সংরক্ষক। তিনি বিপদগ্রস্ত মেছো বিড়ালের বাচ্চাদের সংগ্রহ করে, কখনো প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিতেন, কখনো হস্তান্তর করতেন বন বিভাগের কাছে। অসুস্থ বাচ্চাদের নিজেই পরিচর্যা করে সুস্থ করে তুলতেন।
ওদের নিয়ে শৈশবের আরও একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। কালীগঞ্জের ধনপুর গ্রামের রশিদ মিয়ার ছিল মাছ ধরার খুব নেশা। ভারদুন বিলে 'কোপা বড়শি' পেতে প্রায়ই বড় বড় শোল, গজার,বোয়াল ইত্যাদি রাক্ষুসী মাস শিকার করতেন। এভাবে মাছ শিকারে কই, শিং কিংবা টাকি মাছের পিঠে বড়শি গেথে বাঁশের ছিপের গোড়া শক্তভাবে পুঁতে রাখা হতো কাদার গভীরে। ছিপের ডগার সুতোয় বাধা বড়শিবিদ্ধ জিওল মাছ জলের উপর ঘুরতে থাকতো নির্দিষ্ট সীমা জুড়ে। ওদের নাড়াচাড়া চোখে পড়লেই রাক্ষসী মাছ ছুটে এসে আক্রমণ করত, আর তখনই বড়শি গেথে যেত মাছের চোয়ালে।
এসব বড়শি পেতে রাখা হতো বিকেলে। পরদিন সকালে বড়শেল এসে খোঁজ করতো কোথায় কোনটায় মাছ আটকা পড়েছে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও খুব ভরে রশিদ নিয়ে এসে হাজির হয় ভারদুন বিলের পারে। সারাটা রাত কেটে গেছে নিশ্চয়ই কোন না কোন কোপায় বড় মাছ আটকা পড়ে আছে? কাদার গভীরে পুতে রাখা ছিপগুলো অত্যন্ত মজবুত, ডগায় নাইলনের মোটা সুতো, তাতে ইস্পাতের বড়শি; যদি এক মণ ওজনের মাছও আটকা পড়ে, ছুটে যাওয়া অসম্ভব।
বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে রশিদ মিয়া আচমকা উত্তর-পূর্ব কোণের কোপা বড়শির নিচের পানিতে বিশেষ একটা কিছু দেখতে পান। প্রথমে দূর থেকে তিনি মনে করেছিলেন বিরাট কোন মাছ। কিন্তু দৌড়ে কাছাকাছি যাওয়ার পর তার চক্ষু চড়ক গাছ; মাছ নয় ভিন্ন এক প্রাণী আটকা পড়েছে বড়শিতে। এই অদ্ভুত ঘটনায় রশিদ মিয়া রীতিমতো ভয় পেয়ে যান। আর তারস্বরে চেচাতে শুরু করেন। এক এক করে লোকজন ছুটে আসতে থাকে বিলের পারে। প্রবীরেরা বলে ওঠেন, 'এইটা হইল মেচ্ছা বাঘ, মাছ খাইতে আইসা কোপায় আটকা পড়ছে।' পরক্ষণেই অতি উৎসাহী লোকজন ট্যাটা আর বল্লম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বড়শিবিদ্ধ প্রাণীটার ওপর।
পরদিন ঘটনাটা আমার কানে আসে। সেই অপরিণত বয়সে, মনে প্রশ্ন জাগে, এটা আবার কেমন বাঘ, যে মাছ খেতে এসে মারা পরল।
এই বিশেষ প্রাণীটির প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। একবার আমার একটি মেছো বিড়ালের বাচ্চা পোষার শখ জাগে। তখন ভাওয়াল গড়ের বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যে মানুষের হাতে মেছো বিড়ালের বাচ্চা ধরা পড়ত। সেই সময় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের এত কড়াকড়ি ছিল না। জঙ্গল এলাকার অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী পুষে বড় করে তুলতো।
কিছুদিন অপেক্ষা করার পর একটি মেছো বিড়ালের ছানা আমার হাতে এলো। তখনো তার চোখ ফোটেনী। গজারি বনের গভীরে এক মহিলা তাকে খুজে পেয়েছিল। আমি তাকে পরম আদরে লালন পালন করে বড় করে তুলতে থাকি। আসলে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে আমার তখন সম্যক জ্ঞ্যান ছিল না, জানতামনা বন্য জন্তুকে বসতবাড়িতে পোষা নির্যাতনের শামিল।
তবে মাস দুয়েক অতিবাহিত হওয়ার পর একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল, সে আসলে মেছো বিড়াল নয়, বন বিড়ালের বাচ্চা। তার শরীরের ডোরা দাগ গুলো আস্তে আস্তে ধূসর-বাদামী রঙে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছিল। আসলে ছোট অবস্থায় বন বিড়াল এবং মেছো বিড়ালের বাচ্চা দেখতে প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। অভিজ্ঞ লোক ছাড়া পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন কাজ। যাই হোক, সে আমার কাছে পাঁচ মাস পর্যন্ত ছিল। তখন সে পরিপূর্ণ এক মাদি বন বিড়াল। আদর করে নাম রেখেছিলাম 'এলসা'। সে শুধু আমার দিনের সঙ্গী ছিল না রাতেও আমরা ঘুমাতাম একই বিছানায়। তবে মাঝেমধ্যেই তার বুনো উন্মাদনা জেগে উঠত। তাই ঠিক করেছিলাম বনের প্রাণীকে বনেই নিয়ে ছেড়ে দেব। অবশেষে এক রাতে তাকে নিয়ে ছেড়ে দিলাম তার জন্মভূমি গজারি বনে। কি যে কষ্ট হয়েছিল সেই রাতে! তবে আজও তার কথা মনে হলে আমার কান্না পায়।
আসলে মূল কথা বলার আগে অনেক কিছুই বলে ফেললাম। কথা হচ্ছিল মেছো বিড়াল নিয়ে। বাংলাদেশ নদীর দেশ, বাংলাদেশ জলাভূমির দেশ। আর যেখানেই ছিল প্রাকৃতিক জলাশয় সেখানেই তার অস্তিত্ব ছিল। প্রকৃতির এক সাজানো বাগানের অংশ ছিল সে, জলাভূমির অতন্ত্র প্রহরী। অথচ যুগের পর যুগ মানুষ নির্বিচারা তাদের হত্যা করে গেছে। তবে চরম দুঃখের বিষয় এখনো ওরা প্রায়শই মানুষের হাতে মারা পড়ছে। কিন্তু কেন?এর প্রধান কারণ হচ্ছে বন্যপ্রাণীর প্রতি মানুষের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি কুসংস্কার এবং অমূলক ভয়।
ইংরেজিতে এদেরকে বলা হয় Fishing cat আর বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus Viverrinus. এরা দেশব্যাপী পরিচিত মেছো বাঘ,মেইচ্ছা বাঘ,বাঘেলা,বাঘড়োল ইত্যাদি নামে। একটি মেছো বিড়াল লম্বায় প্রায় তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ওজন ১৮ থেকে ২০ কেজি। সে আকারে বন বিড়ালের চাইতে বড়। মেছো বিড়ালের প্রতি যুগ যুগ ধরে মানুষের আক্রমণের প্রধান কারণ হচ্ছে লোকজনের বাঘভীতি । ওরা যখন কাজলা রংয়ের শরীরের উপর সারি সারি কালো ফোটা দাগ নিয়ে সবুজ জঙ্গলের পাশে এসে দাঁড়ায়, তখন তাকে দেখে অনেকের মনেই ছোটখাটো চিতা বাঘের ছবি ভেসে ওঠে। আর বাঘ বলে ডেক উঠার সঙ্গে সঙ্গেই সারা গ্রামের মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। অথচ অতি নিরীহ এক প্রাণী সে। মাছ খেকো এক সাধারণ বন্য বিড়াল। মানুষ দেখলে আক্রমণ করা তো দূরের কথা, পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। ভ্রান্ত ধারণার কি নির্মম বলিদান!
মেছো বিড়ালের প্রধান খাদ্য মূলত মাছ এবং কাকড়া। তবে শামুকও ওদের প্রিয় খাদ্য। এছাড়াও জলাভূমির পাখি, বুনো খরগোশ, কোলা ব্যাঙ,সাপ ইত্যাদি ভক্ষণ করে থাকে। প্রকৃতিতে খাদ্যাভাব দেখা দিলে এরা মানুষের পোষা হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায়। কখনো কখনো ছাগল-ভেড়া ধরতে উদ্যত হয়। এজন্য গ্রাম কিংবা জঙ্গল এলাকার মানুষ এদের শত্রু মনে করে থাকে। আসলে এরা কিন্তু মোটেও মানুষের শত্রু নয় বরং পরম বন্ধু। এদের অতি প্রিয় এবং নিয়মিত খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। আর ওরা সবচেয়ে বেশি শিকার করে থাকে মেঠো ইঁদুর, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক এক প্রাণী। প্রতিবছর দেশে মেঠো ইঁদুরের কারণে লক্ষ লক্ষ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। আরেকটি মেছো বিড়াল তার সমগ্র জীবনে মেঠো ইদুর ভক্ষণ করে ৫০ লক্ষের অধিক মূল্যের ফসল রক্ষা করে থাকে। কৃষকের এমন পরম বন্ধুকে কি করে শত্রু ভাবা যায়? আসল সত্যটি তুলে ধরতে হবে জনসম্মুখে। তবেই সবাই হত্যার বদলে তার যত্নে সোচ্চার হয়ে উঠবে।
অতীতে আমি সিলেটের এক বন্ধুকে দেখেছি খামারের মাছ ধরার অপরাধে মেছো বিড়ালদের গুলি করে মারতে। তখন আমিও জানতাম না ওরা মাছের খামারের শত্রু নয় বরং অতি বড় এক আশীর্বাদ। একটি রোগাক্রান্ত মাছ মহামারী ছড়িয়ে খামারে বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। আর মেছো বিড়াল শিকারে বেরিয়ে প্রথমেই রোগাক্রান্ত এবং দুর্বল মাছটিকে ধরে খায়। মৃত মাছও এদের প্রিয় খাদ্য।
অনেকের ধারণা না মেছো বিড়াল শুধু পাড়ে দাঁড়িয়ে থাবা দিয়ে মাছ শিকার করে, কখনো পানিতে নামে না। এই ধারণা সত্য নয়। এরা পানিতে নেমে মাছ শিকারে যেরকম দক্ষ, ডুব সাঁতারেও তেমনি পটু। এদের মাছ শিকার নিয়ে বিশেষ একটি কৌশলের কথা ছড়িয়ে আছে গ্রাম বাংলায়। অনেকের ধারণা, এই দুর্দান্ত শিকারী প্রাণীটি জলাভূমির পাশে বসে লেজের ডগা দিয়ে পানিতে আস্তে আস্তে আঘাত করতে থাকে। এর ফলে পানিতে এক ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। তখন আশপাশে থাকা মাছ মনে করে পানিতে কোন পোকা পড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। বেচারা তখন পোকা ধরার জন্য ছুটে এসে হাজির হয় লেজের ডগার ঠিক নিচে। আর ঠিক তখনই দ্রুত থাবা চালিয়ে মেছো বিড়াল মাছটিকে ধরে ফেলে।
জল আর ডাঙ্গা, দুই জায়গাতেই দক্ষ শিকারি মেছো বিড়াল, গাছে চড়াও বিশেষ পারদর্শী। এরা নিশাচর শিকারি, দিনের বেলায় জলাভূমির আশপাশের ঝোপ ঝার,মাটির গর্ত কিংবা গাছের ডালের ফাক-ফো করে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শিকারের উদ্দেশ্যে বের হয়। কখনো কখনো ওদের দেখা যায় 'এম্বুস হান্টার'এর ভূমিকা; জলাভূমির পারে কিংবা কচুরিপানার দামের উপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থির হয়ে বসে থাকে শিকারের অপেক্ষায়। রাতের বেলায় চলতে চলতে কখনো মউপ-মউপ শব্দে ডেকে উঠে। মদ্দা বন বিড়াল আকারে মাদির চাইতে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। নিশাচর প্রাণী হলেও মাঝেমধ্যে ভোরের আলোয় ওদেরকে শিকারে সন্ধানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
মেসো বিড়াল শীতকালে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) বাচ্চা প্রসব করে থাকে। গর্ভধারণ কাল ৫০ থেকে ৭০ দিন। বাচ্চারা অন্ধ হয়ে পৃথিবীতে আসে, কিছুকাল পর তাদের চোখ ফুটে। এক থেকে চারটি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাচ্চারা একটু বড় হলে মা তাদের শিকার ধরার বিভিন্ন ট্রেনিং দিয়ে বড় করে তুলতে থাকে। এ সময় মা মাঝে মধ্যে ছোট ছোট প্রাণী ধরে এনে তাদের সামনে ছেড়ে দেয়। বাচ্চারা খেলার ছলে সেই প্রাণীটিকে আস্তে আস্তে হত্যা করে, এটাই বাচ্চাদের শিকারের প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রতিবছর শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষের হাতে মেছো বিড়ালের বাচ্চা ধরা পরে। প্রাণীপ্রেমীদের সহায়তায় এদের কেউ আবার ফিরে যায় মায়ের কোলে, কারো আশ্রয় মিলে বন বিভাগের সেল্টারে আবার কারো ভাগ্যে ঘটে নির্মম মৃত্যু। এক সময় মেছো বিড়ালের বাচ্চাদের বেশ চাহিদা ছিল সার্কাস কোম্পানিগুলোর কাছে। তারা বাচ্চাদের বড় করে তুলে খাঁচায় রেখে মানুষের কাছে বাঘ পরিচয় দিয়ে পয়সা কামিয়ে নিত। তবে আমি তাদেরকে মেছো বিড়াল দিয়ে কখনো খেলা দেখাতে দেখিনি। বহুদিন আগে কমলা সার্কাসের এক মেছো বিড়ালের সঙ্গে আমার রীতিমতো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল।
এখন বলতে গেলে এটা খুবই অবাকর একটা বিষয় হবে, ১৯৮২ সালে কিছু আগে খোদ রাজধানী ঢাকার আশপাশে, কামরাঙ্গীর চর এবং ডেমরায় এদের বিচরণ ছিল। অথচ আজ দেশের অনেক বন জঙ্গল এমনকি গ্রামাঞ্চলেও আর এদের দেখতে পাওয়া যায় না। মেছো বিড়াল কেন আজ বিপন্ন বন্যপ্রাণী? শুধু মানুষের হাতে নিহত হওয়ার কারণেই কি এমনটা ঘটেছে? আসলে ঠিক তা নয়। খাদ্য আবাসস্থল এবং আশ্রয়স্থল সংকটে দিন দিন কমেছে ওদের সংখ্যা। যুগের পর যুগ ধরে মানুষ তাদের প্রয়োজনে গ্রামীণ জঙ্গল পরিষ্কার করে গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি কিংবা আবাদী জমি। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো পরিষ্কার করে চাষ করা হয়েছে উন্নত জাতের মাছ। ওরা থাকতো গ্রামীণ বনে, সন্ধ্যায় বেরিয়ে এসে আহার করত প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে; দুটোই বিনষ্ট, তাই ওরাও বিপন্ন আজ।
