Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
July 06, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JULY 06, 2025
‘গ্রামীণ জীবন’ যেভাবে হয়ে উঠল এক সফল উদ্যোক্তার গল্প

ফিচার

অনুস্কা ব্যানার্জী
30 June, 2025, 03:05 pm
Last modified: 30 June, 2025, 03:07 pm

Related News

  • উলন দাস পাড়া: ঢাকার শেষ আদি জেলেপল্লী? 
  • ইন্টারনেটের দামে ফ্লোর প্রাইস, দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষাসহ আইএসপিএবির ৭ দাবি
  • আজকের মধ্যে এনবিআর অচলাবস্থার অবসান দাবি ব্যবসায়ীদের; দৈনিক ‘২,৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য ব্যাহত’ হচ্ছে
  • নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমঝোতা ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি
  • ঈদে কক্সবাজারে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা: চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

‘গ্রামীণ জীবন’ যেভাবে হয়ে উঠল এক সফল উদ্যোক্তার গল্প

'গ্রামীণ জীবন' বর্তমানে নারকেল তেলের জন্য সুপরিচিত হলেও, এর শুরুটা হয়েছিল আমের মাধ্যমে।
অনুস্কা ব্যানার্জী
30 June, 2025, 03:05 pm
Last modified: 30 June, 2025, 03:07 pm

সাড়ে চার বছর আগে চাকরিটা ছেড়ে দেন শেখ মাসুদ পারভেজ। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন জাহাজে। ঘুরেছেন দেশ-বিদেশ, আর উপার্জনও একেবারে কম ছিল না।

তবু জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি আসছিল না কিছুতেই। ভালো লাগছিল না ভেসে ভেসে বেড়ানো পদ্মপাতার জীবন। দেশের জন্য কিছু করার তাগিদে অনেক দিন ধরেই ডাঙায় থিতু হতে চাইতেন তিনি। কিন্তু তার জন্য তো একটা উপলক্ষ্যের দরকার ছিল।

শেষ পর্যন্ত ধরাবাঁধা জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে নিজের জীবনকে আরও অর্থবহ করে তুলতে চাকরি ছেড়ে ফিরে এলেন নিজ এলাকায়।

তার ছেলেবেলা থেকে বেড়ে ওঠা সবটাই সাতক্ষীরা জেলায়। সাতক্ষীরার প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে এসে মাসুদ যেন ফিরে পেলেন সেই নিশ্চিন্ত ছেলেবেলা—চারপাশে গাছপালা, ফুল-ফল... ধানভরা গোলা, পুকুরভরা মাছ, গ্রামীণ জীবনের সেই চিরায়ত রূপ।

অনেক দেশ ঘোরা সত্ত্বেও নিজের দেশ দেখা তার ফুরোয় না। মাটির সোঁদা গন্ধমাখা ফল কিংবা সুন্দরবনের মধুর মতো প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানোর চিন্তা আসে তার মাথায়।

তারপর আর থেমে থাকা নয়। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করলেন স্বপ্নের উদ্যোগ—'গ্রামীণ জীবন'-এর পথচলা।

শুরুটা যেভাবে

মেরিন ইঞ্জিনিয়ার থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পখানা আসলে গল্প হলেও সত্যি। শেখ মাসুদ পারভেজের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস শুরু হয় গ্রামীণ জীবনকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের হাতে সুলভ মূল্যে, ভেজালমুক্ত ও প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে।

'গ্রামীণ জীবন' উদ্যোগে গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করা সেইসব পণ্য এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে।

'গ্রামীণ জীবন' বর্তমানে নারকেল তেলের জন্য সুপরিচিত হলেও, এর শুরুটা হয়েছিল আমের মাধ্যমে। বছর ছয়েক আগে জাহাজে চাকরিরত অবস্থাতেই গ্রামীণ জীবন শুরু করার পরিকল্পনাটি মাথায় আসে মাসুদের। সাতক্ষীরার আমের খ্যাতি তখন কেবল ছড়াতে শুরু করেছে। অথচ আড়তে বিক্রি হওয়া অনেক আমেই ফরমালিন মেশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই ফরমালিনমুক্ত আম নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তিনি।

ক্ষতিকর রাসায়নিক রুখতে হলে শুরুটা করতে হবে বাগান থেকেই—এই ভাবনায় কিনে নেন একটি আমের বাগান। নিজ হাতে পরিচর্যা করেন সেই বাগান। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সেই বাগানের ফরমালিনমুক্ত হিমসাগর আম জাহাজের বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে বিক্রি করা শুরু করেন মাসুদ। প্রথম পণ্য হিসেবে সাড়া মেলে ভালোই। মাসখানেক চলল আমের কেনাবেচা।

দেখতে দেখতে চলে এলো শীতকাল। সেবছর সাতক্ষীরায় খেজুরের রসের উৎপাদন ছিল সীমিত। পাটালি যেহেতু খেজুরের রস ছাড়া তৈরি সম্ভব নয়, তাই একপর্যায়ে প্রায় হাল ছেড়ে দেন মাসুদ। ঠিক তখনই পরিচিত এক বন্ধুর কাছ থেকে রাজশাহীর পুঠিয়া অঞ্চলের সন্ধান পেলেন। ঐ অঞ্চলে সেবার খেজুর রসের যোগান ছিল ভালো।

বন্ধুর সহায়তায় পুঠিয়ার ৫০০টি গাছ লিজ নেন মাসুদ। সেখানকার খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি করেন পাটালি। পুরো শীতকাল জুড়ে বিক্রি করেন খেজুরের পাটালি। তবে তখনও বিক্রির ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ ছিল জাহাজের কর্মী ও পরিচিতদের মধ্যেই।

প্রতিটি পণ্যে ভালো সাড়া পেতে শুরু করলে এটিকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে নেন তিনি। বহু দেশ ভ্রমণের সুবাদে বিভিন্ন দেশের খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল তার। এরই মাঝে এক ক্রেতা ফোন করে ধন্যবাদ জানান, বলেন—'আপনার পাঠানো খেজুরের পাটালির স্বাদে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেছে।'

এই ফোনটাই মাসুদের কাছে হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। নতুন করে ভাবতে শুরু করেন তিনি।

মাসুদের পরিবারে আছেন তার মা, স্ত্রী এবং দুই সন্তান। চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পারিবারিকভাবে কোনো চাপের মুখে পড়তে হয়নি। বরং স্ত্রী ও মা তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে রেখেছেন ভরসা। চাকরি ছেড়ে আসার পর থেকে অন্তত সন্তানদের মুখটা দেখা যায়, তাদের ছোঁয়া যায়—এই আনন্দই সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়। মা ও স্ত্রীও তাঁকে পাশে পেয়ে খুশি।

প্রথমদিকে জমানো টাকা থেকেই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন মাসুদ। বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে জমানো সেই টাকা খরচ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ভয়ও পেয়েছেন—"যদি ব্যর্থ হই?"

কিন্তু মাঠে নামার পর আর পিছু ফেরার সুযোগ থাকে না। বিনিয়োগ তো শুধু অর্থের নয়, সময় এবং ভালোবাসারও। সবটুকু উজাড় করে দিয়ে তিনি নেমেছেন এবং বিশ্বাস নিয়েই নেমেছেন—তিনি সফল হবেন।

প্রথমদিকে ব্যাংক ঋণের শরণাপন্ন হননি, কারণ মনে সংশয় ছিল। তবে ব্যবসা একটু জমে উঠলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনেন। ধীরে ধীরে সেই ঋণও পরিশোধ করেন তিনি।

বাড়তে থাকে পণ্যের সংখ্যা

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সয়াবিন তেলের চাহিদা বেশি, অথচ উৎপাদন নেই। এদিকে সয়াবিন তেল শরীরের ক্ষতি করে। এর চেয়ে পাম তেল কিছুটা ভালো হলেও তা কোলেস্টেরল রোগীদের জন্য ক্ষতিকর—বাড়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি।

বাংলাদেশে এর বিকল্প হিসেবে আছে সুপার তেল। তবে সরিষার তেল অতটা জনপ্রিয় নয়। মুড়ি মাখা কিংবা নানা রকম ভর্তায় সরিষার তেলের একটা সীমিত ব্যবহার রয়েছে। এর কারণ হলো, অতিরিক্ত দাম, অভ্যাসের অভাব এবং অনেকখানি অজ্ঞতা। স্বাস্থ্যের উপকারিতার বিষয়টি অনেকেই জানেন না।

সরিষার তেল মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে অবসাদ কাটাতে, স্মৃতিশক্তি ও মনঃসংযোগ বাড়াতে এ তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে আচার বানালে তা অনেকদিন ভালো থাকে। এছাড়া পায়ের তলায় মালিশ করলে ঠান্ডাজনিত সমস্যাও কমে।

এসব দেশীয় টোটকা অনেক সময় ওষুধের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। বাজারে যেসব সরিষার তেল পাওয়া যায়, সেই একই দামে যদি খাঁটি তেল ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে সবাই না হোক, কেউ কেউ কিনবেই। এই ভাবনা থেকেই 'গ্রামীণ জীবন'-এ যুক্ত হল সরিষার তেল।

"তেল মাড়াই থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণে তাপমাত্রা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটা তেল দ্বিতীয়বার হিট হলে এর মধ্যে ক্যানসারের জীবাণু তৈরি হয়। তাই সমস্ত দিক ঠিক রেখে তেল তৈরি করা একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। প্রথমদিকে গরুর ঘানি দিয়ে সরিষা মাড়াই করতাম। কিন্তু এতে প্রোডাকশন এতই কম ছিল যে সাপ্লাই দিয়ে পেরে ওঠা যাচ্ছিল না। তাই চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নিম কাঠের ঘানিতে, নিম্ন তাপমাত্রায় তেল মাড়াই শুরু করি," — এভাবেই নিজ হাতে তৈরি পণ্য সম্পর্কে বলছিলেন এই উদ্যোক্তা।

আরও জানান, "১ টন থেকে শুরু করে ৫ টন পর্যন্ত মাড়াই করা হয় অর্ডারের ভিত্তিতে। 'গ্রামীণ জীবন'-এর সরিষার তেলের ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে এলেই ক্রেতা বুঝতে পারেন, তা কতটা খাঁটি।" 

বাংলাদেশজুড়ে মধুর চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু কোনটা যে আসল মধু, তা বোঝা কঠিন। বাংলাদেশের মধুর মূল সমস্যাটি হলো—ভালোভাবে সংগ্রহ করা যায় না। চাকের মধুর তুলনায় বাক্সে চাষ করা মধুর গুণগত মান কিছুটা ভালো।

মধুর আবার নানা প্রকারভেদও আছে—সরিষা ফুলের মধু, লিচু ফুলের মধু, খলিসা ফুলের মধু, গরান ও বাইন গাছের মধু। সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করা হয় গহিন বন থেকে, তাই এর দামও বেশি।

মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় ও চীনা মধুর বিশাল বাজার রয়েছে, কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের মধু নেই। বাংলাদেশের মধু নিয়ে যদি কাজ করা যায়, তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করা সম্ভব। তবে তার আগে প্রয়োজন গুণগত মান নিশ্চিত করা।

এই চিন্তা থেকেই মাসুদ শুরু করেন মধুর বাজারজাতকরণ। বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কফ সিরাপ তৈরিতে খাঁটি মধু ব্যবহার করে। তাই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের কাছেও মধুর চাহিদা কম নয়।

সম্প্রতি একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক মধুর অর্ডার পেয়েছেন মাসুদ। এভাবেই এই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের ছোট্ট উদ্যোগ ডালপালা মেলতে শুরু করে। নিজ হাতে সব সামলানোর দিন ফুরায়। এখন মাসুদের অধীনে কাজ করেন ৯ জন কর্মচারী।

মাসুদের যা আয়, তাতে হাসিখুশি ভাবেই চলে পরিবারের খাওয়া-পরা। কিছুটা সঞ্চয়ও হয়।

কিন্তু থেমে থাকার মানুষ নন মাসুদ। অবিরাম বয়ে চলার মাঝেই তার আনন্দ। আর তাই তিনি থামলেনও না।

মধুর পাশাপাশি শুরু করলেন ঘি উৎপাদন। এরপর যুক্ত করলেন প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলা। তারপর এলো নারকেল তেল। এসব পণ্যের বিএসটিআই অনুমোদনের কাজও ধাপে ধাপে সেরে ফেলেন তিনি।

গ্রামীণ জীবনের নারকেল তেল

নারকেল তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, বিশেষ করে লরিক অ্যাসিড, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই তেল হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক—এটি ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়াও এটি হজমশক্তি বাড়ায় ও পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

ত্বকের যত্নে নারকেল তেল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে ও ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। এই তেলে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলি ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। একই সঙ্গে এটি ত্বকের বয়সের ছাপ কমায় এবং ত্বককে করে তোলে নরম ও মসৃণ।

ছোটখাটো কাটাছেঁড়া কিংবা পোড়া ক্ষতস্থানেও নারকেল তেল প্রয়োগ করলে দ্রুত সেরে ওঠে। এছাড়াও এটি চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ করে এবং চুল পড়া রোধ করে। খুশকি ও মাথার ত্বকের চুলকানি দূর করতেও নারকেল তেল বেশ উপকারী।

মাসুদ জাহাজে চাকরিরত অবস্থায় একাধিকবার শ্রীলঙ্কা যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সেসময় লক্ষ্য করেন—শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ মানুষ রান্নায় নারকেল তেল ব্যবহার করে থাকেন। এরপরই নারকেল তেলের গুণাগুণ সম্পর্কে ঘাটাঘাটি শুরু করেন তিনি।

যখন নারকেল তেল উৎপাদনের কথা ভাবলেন, তখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো নারকেলের অতিরিক্ত দাম। এত দামে নারকেল কিনে তেল উৎপাদন করলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবু তিনি হাল ছাড়েননি।

নারকেলের বিকল্প বাজার খুঁজতে শুরু করেন। অনেক খোঁজখবরের পর জানতে পারেন ভারতে নারকেলের দাম তুলনামূলক কম। সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা, পাশে বেনাপোল ও ভোমরা। ভারত থেকে আমদানি করা গেলে—সব খরচ মিলিয়ে প্রতি নারকেলে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হয়।

বাংলাদেশে নারকেলের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। তাই কাঁচামাল হিসেবে কম দামে আমদানি করে নারকেল তেল উৎপাদন সম্ভব হলে এটি রপ্তানির বাজারেও হয়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় একটি পণ্য। অনেকটা 'মাছের তেলে মাছ ভাজা'র মতো অবস্থা, কিন্তু অসম্ভব নয়।
আমাদের মা-বোনেরা ছেলেবেলা থেকে চুলের যত্নে ব্যবহার করে আসছেন নারকেল তেল। এই তেলের ঘ্রাণে মিশে থাকে মায়ের চুলের গন্ধে মোড়া শৈশব। নানা ব্র্যান্ডের চুলের তেল এলেও নারকেল তেল তার আবেদন হারায়নি। সেই নারকেল তেলকে আবার ঘরে ঘরে ফিরিয়ে আনার ভাবনা থেকেই শুরু হয় উদ্যোগ।

২০২৩ সালে প্রথম ভারত থেকে নারকেল আমদানি করে মাসুদ শুরু করেন নারকেল তেল উৎপাদনের কাজ।

তিনি তার পাটকেলঘাটার মিলে কর্মীদের সঙ্গে হাত লাগিয়ে শুরু করেন নারকেলের খোসা ছাড়িয়ে কাটিংয়ের কাজ। এরপর মিলের চাতালে ভালোভাবে শুকানো হয় সেই নারকেল। পরবর্তী ধাপে স্পেলার মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে বের করা হয় নারকেল তেল।

পুরোনো ঘ্রাণে হাসি ফুটে ওঠে কর্মীদের মুখে। খানিকটা ঘরোয়া পরিবেশে গল্পগুজবের মধ্যেই তৈরি হতে থাকে নারকেল তেলের একেকটি বোতল। যত্ন করে 'গ্রামীণ জীবন'-এর লেবেল লাগানো হয় প্রতিটি বোতলে।

তখনও একটা অনিশ্চয়তার ছায়া ছিল—"যদি বাজারে না চলে?" তবে বাস্তবে ঘটল তার উল্টোটা। নারকেল তেলই হয়ে উঠল 'গ্রামীণ জীবন'-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য।

আম কিংবা পাটালি মৌসুমি পণ্য, কিন্তু নারকেল তেল নয়। সারাবছরই নারকেল পাওয়া যায়। উৎপাদনেও ঘাটতি নেই।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারের করিম শেখ অনেকটা কৌতূহল থেকেই 'গ্রামীণ জীবন'-এর নারকেল তেল কিনেছিলেন। তখন অতটা ভরসা ছিল না, তার ওপর দামও কম নয়। স্ত্রীর চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিনেছিলেন তেলটি।

ব্যবহারের কিছুদিন পর থেকেই স্ত্রীর চুল পড়া অনেকটা কমে যায়। তখন থেকেই নিয়মিত ক্রেতা হয়ে ওঠেন করিম শেখ। কিনেছেন গুঁড়া মসলাও। এখন পর্যন্ত 'গ্রামীণ জীবন'-এর যত পণ্য ব্যবহার করেছেন—সবই পেয়েছেন নির্ভেজাল।

কোল্ডপ্রেস–হটপ্রেস: যেভাবে খাব

সাধারণত সরাসরি নারকেল তেল খাওয়া কিংবা রান্নায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোল্ডপ্রেস তেল বেশি ব্যবহৃত হয়। কোল্ডপ্রেস নারকেল তেল তৈরির জন্য প্রথমে নারকেলের সাদা অংশ, যাকে শাঁস বলা হয়ে থাকে, সেটিকে ছোট ছোট টুকরো করে কাটা হয়। এই শাঁসগুলো খুব ভালো করে রোদে শুকানো হয় যাতে ভেতরে আদ্রতা না থাকে।

কয়েক ধাপে শুকানোর পর কোল্ডপ্রেস যন্ত্রের সাহায্যে তা মাড়াই করা হয়। এই পদ্ধতিতে কোনো রাসায়নিক, উচ্চ তাপমাত্রা বা কৃত্রিম গন্ধ-রঙের ব্যবহার করা হয় না।

কোল্ডপ্রেস মিলে সাধারণত কাঠের ঘানিতে ৩৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কম আরপিএমে নারকেলের শাঁস ভাঙানো হয়। যে তেলটি বের হয়, সেটি থাকে অপরিশোধিত। তাই পরিষ্কার কাপড় বা ছাকনির সাহায্যে কয়েক ধাপে করা হয় পরিশোধন।

এই পদ্ধতিতে তৈরি তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং এতে থাকে প্রাকৃতিক ঘ্রাণ। এজন্য এর চাহিদাও বেশি। একে সাধারণত এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল বলা হয়ে থাকে।

অন্যদিকে, হটপ্রেস তেল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় ৭০–৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং উচ্চ প্রযুক্তির দামি যন্ত্রপাতি। নারকেল শুকিয়ে, এর শাঁস গ্রেটার যন্ত্রের সাহায্যে খুব সূক্ষ্মভাবে কাটা হয়। যত বেশি সূক্ষ্মভাবে কোরানো যাবে, তেলের পরিমাণ তত বাড়বে।

এই কোরানো নারকেল উচ্চ তাপ ও চাপে তেলে পরিণত হয় এবং তা একটি পাত্রে জমা হয়। এই পদ্ধতিতে কম সময়ে বেশি তেল পাওয়া যায়। তবে উচ্চ তাপে গুণগত মান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চুলের যত্ন বা ত্বকের সুরক্ষায় এই তেল কার্যকর হলেও রান্নার জন্য কোল্ডপ্রেসের তুলনায় কম মানের। এজন্য দামও কিছুটা কম।

এইভাবে মাসুদ জানাচ্ছিলেন নারকেল তেলের খুঁটিনাটি। মাসুদ মূলত কোল্ডপ্রেস তেলের প্রোডাকশন করেন। এই তেল রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি চুল ও ত্বকেও ব্যবহার উপযোগী। এমনকি গর্ভবতী নারীরাও পেট ম্যাসাজের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন।

'গ্রামীণ জীবন'-কে দেশের আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিতে মাসুদ ব্যবহার করছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ এবং দারাজের মাধ্যমে তিনি পণ্য বাজারজাত করেন।

ইতোমধ্যে দেশের ২৯টি জেলায় 'গ্রামীণ জীবন'-এর ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য জেলাগুলোতে কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি নিজ উদ্যোগে।

শুধু ব্যবসায়িক লাভ নয়, দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকেই মাসুদের এই উদ্যোগের সূচনা। যার মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অনুন্নত জেলার স্থানীয় পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে কিছু দরিদ্র মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।

এখন মাসুদের স্বপ্ন—প্রোডাকশন বাড়ানো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের নিজস্ব পণ্যকে পৌঁছে দেওয়া।

হয়তো একদিন মাসুদের এই স্বপ্ন সত্যি হবে। দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে 'গ্রামীণ জীবন'-এর হাত ধরে বাংলাদেশি পণ্য বিদেশে রপ্তানি হবে, অর্জন হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

তবে স্বপ্ন সত্যি হোক আর না হোক—আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রথাগত শিক্ষা ও উচ্চ বেতনের চাকরির স্ট্যান্ডার্ড সরিয়ে রেখে নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখা ও সেই পথে হাঁটা নিঃসন্দেহে এক দুঃসাহস।


ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী

Related Topics

গ্রামীণ জীবন / উদ্যোক্তা / মেরিন ইঞ্জিনিয়ার / ব্যবসা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জিন্সের প্যান্টের কোমরে ছোট পকেটটি কেন থাকে?
  • সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়াকে হারতে দেয়া যাবে না: ইইউকে চীনের বার্তা
  • ইলিশ উৎপাদনের সরকারি হিসাব কি আসলেই বাস্তবসম্মত?
  • যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অচলাবস্থা কাটাতে নতুন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডাক, নেতৃত্বে ইইউ ও জার্মানি
  • প্রতিবার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভাবতাম আর ফিরতে পারব না: সিনথিয়া

Related News

  • উলন দাস পাড়া: ঢাকার শেষ আদি জেলেপল্লী? 
  • ইন্টারনেটের দামে ফ্লোর প্রাইস, দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষাসহ আইএসপিএবির ৭ দাবি
  • আজকের মধ্যে এনবিআর অচলাবস্থার অবসান দাবি ব্যবসায়ীদের; দৈনিক ‘২,৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য ব্যাহত’ হচ্ছে
  • নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমঝোতা ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে: ঢাকা চেম্বারের সভাপতি
  • ঈদে কক্সবাজারে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা: চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

জিন্সের প্যান্টের কোমরে ছোট পকেটটি কেন থাকে?

2
বাংলাদেশ

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: অর্থ উপদেষ্টা

3
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়াকে হারতে দেয়া যাবে না: ইইউকে চীনের বার্তা

4
বাংলাদেশ

ইলিশ উৎপাদনের সরকারি হিসাব কি আসলেই বাস্তবসম্মত?

5
আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অচলাবস্থা কাটাতে নতুন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডাক, নেতৃত্বে ইইউ ও জার্মানি

6
বাংলাদেশ

প্রতিবার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ভাবতাম আর ফিরতে পারব না: সিনথিয়া

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net