প্রোপাগান্ডার অভিযোগে কারাদণ্ড: অস্কার মৌসুম শেষে সাজাভোগ করতে ইরানেই ফিরবেন জাফর পানাহি
চলতি বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণ পামজয়ী ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির বিচার কাজ শুরু হচ্ছে আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি (২০২৬)। তেহরানের রেভল্যুশনারি কোর্টের ২৬ নম্বর শাখায় এই বিচার অনুষ্ঠিত হবে।
সাংবাদিক মনসুর জাহানির প্রতিবেদনের বরাতে আইনজীবী মোস্তফা নিলি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) জানিয়েছেন, পানাহির বিরুদ্ধে 'শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর' অভিযোগ আনা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার আলোচিত সিনেমা 'ইট ওয়াজ জাস্ট এন এক্সিডেন্ট'-এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণেই এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে গত ডিসেম্বরে তেহরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি কোর্ট পানাহিকে তার অনুপস্থিতিতে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে দেশত্যাগে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা এবং কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক দল বা গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তখনও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছিল।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে সিনেমার প্রচারণা চালাচ্ছেন খ্যাতিমান এই নির্মাতা। সম্প্রতি তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন না। অস্কার মৌসুম শেষ হওয়ার পর তিনি তেহরানে ফিরে গিয়ে কারাদণ্ড ভোগ করার পরিকল্পনা করেছেন। অন্য কেউ হলে হয়তো এমন পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা এড়িয়ে চলতেন, কিন্তু পানাহি নিজ দেশেই নিজের ভাগ্য বরণ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পানাহির 'ইট ওয়াজ জাস্ট এন এক্সিডেন্ট' আগামী বছর সেরা ছবি ও সেরা পরিচালকের ক্যাটাগরিসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে এই ছবির পুরস্কার জয়েরও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি অকল্পনীয় হলেও সত্য হতে চলেছে—পানাহি হয়তো অস্কার জিতবেন, কিন্তু দেশে ফেরার পর বীরের সংবর্ধনার বদলে তাকে যেতে হবে কারাগারে। ঠিক এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত বছর ইরানে কোনো সরকারি অনুমতি ছাড়াই গোপনে 'ইট ওয়াজ জাস্ট এন এক্সিডেন্ট' সিনেমাটির শুটিং করা হয়। নির্মাণের সময় বেশ কয়েকজন কলাকুশলীকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। জানা গেছে, শুটিংয়ের মাত্র এক দিন পরই দলের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমন বৈরী পরিস্থিতিতে সিনেমাটি নির্মাণ করা ছিল নিঃসন্দেহে এক সাহসী পদক্ষেপ, যার জন্য এখন চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে নির্মাতাকে।
