কান-এ প্রশংসিত জাফর পানাহির নতুন সিনেমার উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের স্বত্ব কিনল নিওন

চলতি সপ্তাহে কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হওয়া ইরানি নির্মাতা জাফর পানাহির নতুন সিনেমা 'ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট'–এর উত্তর আমেরিকার স্বত্ব কিনে নিয়েছে পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান নিওন।
সিনেমাটির সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে: 'একটি ছোটখাটো দুর্ঘটনা ক্রমেই এমন এক শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিণতির সূত্রপাত করে, যার ফল মারাত্মক।' উৎসবে এটি অন্যতম প্রশংসিত সিনেমা হয়ে উঠেছে।
এতে দেখা যায়, অতীতে ভুলভাবে কারাবন্দি হওয়া কিছু শ্রমজীবী মানুষ সেই কারারক্ষীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায়, যে একসময় তাদের নির্যাতন ও অপমান করেছিল।
ডেডলাইনের চলচ্চিত্র সমালোচক পিট হ্যামন্ড চলচ্চিত্রটিকে 'মানবতার জন্য এক শক্তিশালী বার্তা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, 'এটি মনে করিয়ে দেয়—পিছন থেকে আঘাত আসতে পারে যেকোনো সময়।'
বুধবার (২১ মে) বিকেলে উৎসবে সিনেমাটির প্রদর্শনী শেষে ১০ মিনিট দীর্ঘ করতালিতে মুখরিত হয় উৎসব প্রেক্ষাগৃহ। ঘটনাটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে কারণ দুই দশকেরও বেশি সময় পর নিজেই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন জাফর পানাহি।
'দ্য হোয়াইট বেলুন', 'দ্য সার্কেল' ও 'ট্যাক্সি' সিনেমার জন্য পরিচিত পানাহি তার পুরো ক্যারিয়ারে ইরানের কর্তৃত্ববাদী ইসলামী প্রজাতন্ত্রের চোখ রাঙানির মধ্যে থেকেছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, কারাদণ্ড, গৃহবন্দিত্ব এবং সিনেমা নির্মাণ ও ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ কারাবাস থেকে মুক্তি পান তিনি। 'ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট'–এর প্রোডাকশন নোটে পানাহি লিখেছেন, 'আমার ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণ, লেখা, সাক্ষাৎকার দেওয়া ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করার যে রায় ছিল, তা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমি এখনো সীমায় অবস্থান করছি… আমি বাধ্য হয়েই ব্যবস্থার বাইরে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।'
সিনেমাটি নির্মাণে তিনি গোপন কৌশল অবলম্বন করেন। শুটিং শেষ হওয়ার আগেই কিছু সাদা পোশাকধারী কর্মকর্তা এসে ফুটেজ হস্তান্তরের দাবি জানান।
পানাহি জানান, 'আমি তাদের দাবিতে সাড়া দিইনি। এরপর তারা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে, ক্রুদের গ্রেপ্তার ও প্রযোজনা বন্ধ করার হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটে। আমরা শুটিং কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখি, পরে আবার শুরু করি। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি।'
পানাহির প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা 'দ্য হোয়াইট বেলুন' (১৯৯৫) কান উৎসবের 'ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট' বিভাগে নির্বাচিত হয় এবং ক্যামেরা দ'ওর জয় করে। ২০০৩ সালে ক্রিমসন গোল্ড–নিয়েও তিনি কানে ফেরেন, যা 'আঁ সের্ত্যাঁ রেগার' বিভাগে প্রদর্শিত হয় এবং জুরি পুরস্কার জিতে।
সিনেমাটি প্রথমে অস্কারের জন্য ইরানের প্রতিনিধিত্ব করার কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ পরে তা নিষিদ্ধ করে। যার ফলে এটি ইরানি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো যায়নি।
'ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট'–এর প্রযোজক ছিলেন জাফর পানাহি ও ফিলিপ মার্টিন, সহপ্রযোজক হিসেবে আছেন সানদ্রিন ড্যুমা ও ক্রিস্টেল হেনোঁ। সহযোগী প্রযোজক হিসেবে যুক্ত আছেন দাভিদ তিয়োঁ ও লিলিনা একে।
সিনেমাটি ইরান, ফ্রান্স ও লুক্সেমবার্গের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত 'লে ফিল্ম পেলেয়াস' এবং 'জাফর পানাহি প্রোডাকশন'–এর ব্যানারে তৈরি। আন্তর্জাতিক পরিবেশনার স্বত্ব বিক্রি করছে এমকে২ ফিল্মস।
নিওনের সারাহ কোলভিন ও জেফ ডয়েচম্যানের সঙ্গে ছবিটির স্বত্ব নিয়ে আলোচনা করেন এমকে২ ফিল্মসের ফিওনোলা জেমিসন, যিনি নির্মাতাদের পক্ষ থেকে সমঝোতা করেন।