জাফর পানাহি: যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাওয়ার্ড নিতে যাওয়ার পথে ইরানি পরিচালকের কারাদণ্ডের আদেশ
বিখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহির বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিপক্ষে প্রচারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে তাকে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যেদিন এই দুঃসংবাদ এল, ঠিক সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রে তার নতুন সিনেমা একের পর এক পুরস্কার জিতছিল।
সোমবার তার আইনজীবী জানান, পানাহিকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তার ওপর বিদেশ ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
অথচ তিনি তখন নিউইয়র্কে। সেখানে গথাম অ্যাওয়ার্ডস-এ তিনি তিনটি পুরস্কার গ্রহণ করছিলেন। এর মধ্যে ছিল সেরা পরিচালকের পুরস্কারও। তার নতুন সিনেমা 'ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান এক্সসিডেন্ট'-এর জন্য তিনি এই সম্মান পান। উল্লেখ্য, তিনি এই ছবিটি ইরানে লুকিয়ে বা অবৈধভাবে বানিয়েছিলেন।
৬৫ বছর বয়সী পানাহি এর আগেও দুইবার নিজের দেশে জেল খেটেছেন। নতুন সাজার খবর পাওয়ার ঠিক আগেই এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তিনি দেশেই ফিরে যেতে চান।
পানাহি ইরানের অন্যতম সেরা পরিচালক। কিন্তু তাকে সব সময়ই সরকারের কড়া নজরদারিতে থাকতে হয়। দেশে তার সিনেমা বানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। জেল আর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও তার পুরনো সঙ্গী।
গথাম অ্যাওয়ার্ডসে পুরস্কার নেওয়ার সময় তিনি তার এই নতুন শাস্তির কথা উল্লেখ করেননি। বরং তিনি সেই সব নির্মাতাদের প্রশংসা করেছেন যারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, "তারা কোনো সাহায্য ছাড়াই সব কিছু বাজি রেখে কাজ করছেন। তাদের সম্বল শুধু সত্য ও মানবতার প্রতি বিশ্বাস।"
তিনি আরও বলেন, "আমি আশা করি এই ত্যাগ সেই সব নির্মাতাদের প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে গণ্য হবে, যাদের দেখার ও দেখানোর অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তবু তারা সৃষ্টি করে চলেছেন, টিকে থাকার লড়াই করছেন।"
'ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান এক্সসিডেন্ট' ছবিটি সেরা চিত্রনাট্য এবং সেরা আন্তর্জাতিক সিনেমার পুরস্কারও জিতেছে। বসন্তে হতে যাওয়া অস্কারেও এটি লড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
পানাহি ছবিটি খুব গোপনে শুট করেছেন। গল্পটি পাঁচজন সাধারণ ইরানি ব্যাক্তিকে নিয়ে। তারা এমন এক ব্যক্তির মুখোমুখি হয়, যে তাদের কয়েকজনকে জেলে নির্যাতন করেছিল বলে তারা বিশ্বাস করে।
তিনি বলেছেন, তার শেষবারের জেলজীবন থেকে এই গল্পের অনুপ্রেরণা এসেছে। অন্য বন্দিরা তাকে ইরান সরকারের সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার গল্প শুনিয়েছিল।
মে মাসে ফ্রান্সে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি সেরা পুরস্কার জিতেছিল। তখন পুরস্কার নেওয়ার সময় তিনি সরকারের বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন।
২০২২ সালে পানাহি জেলে গিয়েছিলেন। তার দুই সহকর্মী নির্মাতাকে আটকের প্রতিবাদ করায় তাকে ধরা হয়েছিল। তখন তাকে ছয় বছরের জেল দেওয়া হয়, তবে সাত মাস পর তিনি ছাড়া পান।
এর আগে ২০১০ সালেও তাকে ছয় বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ ছিল সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন ও অপপ্রচার। সেবার দুই মাস পর তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিন পান।
সাজার রায় আসার ঠিক আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি এক বয়স্ক ইরানি নারীর সঙ্গে তার কথোপকথনের কথা জানান। ওই নারী নির্বাসনে আছেন।
পানাহি বলেন, "ওই নারী আমাকে অনুরোধ করেছিলেন যেন আমি দেশে ফিরে না যাই। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, ইরান ছাড়া আমি বাঁচব না। অন্য কোথাও আমি মানিয়ে নিতে পারব না।"
তিনি আরও বলেন, "আমি তাকে বলেছি চিন্তার কিছু নেই। কর্মকর্তারা আর নতুন কী করবেন যা তারা আগে করেননি?"
