কিংবদন্তি ‘রেগে’ শিল্পী জিমি ক্লিফ মারা গেছেন
বিশ্বজুড়ে রেগে সংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলা কিংবদন্তি শিল্পী জিমি ক্লিফ আর নেই। খ্যাতিমান এই জ্যামাইকান গায়ক সোমবার ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় তার স্ত্রী লতিফা চেম্বার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বার্তায় লতিফা লেখেন, 'গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমার স্বামী জিমি ক্লিফ আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। খিঁচুনি এবং পরবর্তীকালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি তার পরিবার, বন্ধু, সহশিল্পী ও সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ; যারা তার এই দীর্ঘ যাত্রায় পাশে ছিলেন। বিশ্বজুড়ে তার ভক্তদের বলতে চাই—আপনাদের সমর্থনই ছিল তার পুরো ক্যারিয়ারের মূল শক্তি। তিনি প্রতিটি ভক্তের ভালোবাসা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতেন।'
'ইউ ক্যান গেট ইট ইফ ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট', 'দ্য হার্ডার দে কাম' এবং 'ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড, বিউটিফুল পিপল'-এর মতো বহু কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন জিমি ক্লিফ। ২০১০ সালে তিনি 'রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেম'-এ অন্তর্ভুক্ত হন। আরেক কিংবদন্তি বব মার্লের পর দ্বিতীয় জ্যামাইকান শিল্পী হিসেবে এই বিরল সম্মান অর্জন করেন তিনি।
সংগীতের পাশাপাশি অভিনয়েও ছিল তার সাফল্য। ১৯৭২ সালের বিখ্যাত সিনেমা 'দ্য হার্ডার দে কাম'-এ তিনি 'আইভান মার্টিন' চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। জ্যামাইকার কিংস্টনে স্বপ্ন নিয়ে আসা এক তরুণের গানের মাধ্যমে দুনিয়ায় নাম করার লড়াই এবং শেষ পর্যন্ত অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ার গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা ও এর সাউন্ডট্র্যাক যুক্তরাষ্ট্রে রেগে সংগীতকে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ চলচ্চিত্রই জিমি ক্লিফকে বৈশ্বিক তারকাখ্যাতি এনে দেয়।
জিমি ক্লিফের জীবনের সঙ্গে তার অভিনীত সেই চরিত্রেরও মিল পাওয়া যায়। ১৯৪৪ সালে জ্যামাইকার পশ্চিমাঞ্চলের সেন্ট জেমস প্যারিশে এক ঘূর্ণিঝড়ের সময় তার জন্ম হয়—যে ঝড়ে তাদের পারিবারিক বাড়িও ধ্বংস হয়েছিল। জন্মের সময় তার নাম ছিল জেমস চেম্বার্স। আট ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় কনিষ্ঠ ক্লিফ দারিদ্র্যের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলায় চার্চে গান গাইতেন এবং পরবর্তীতে 'জিমি ক্লিফ' নাম গ্রহণ করেন।
১৯৬১ সালে জিমি ক্লিফ জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টনে চলে আসেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তার গাওয়া 'হারিকেন হ্যাটি' গানটি জ্যামাইকার মিউজিক চার্টের শীর্ষে উঠে আসে। এরপর সংগীত ক্যারিয়ারকে আরও এগিয়ে নিতে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান।
লন্ডনে থাকাকালীন তিনি নিজের প্রথম অ্যালবাম রেকর্ড করেন, যেখানে আর অ্যান্ড বি ঘরানার প্রভাব স্পষ্ট ছিল। পরবর্তীতে তিনি জ্যামাইকায় ফিরে আসেন এবং তার গান দ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
১৯৭০ সালের মধ্যেই যুক্তরাজ্যের চার্টে জায়গা করে নেয় তার তিনটি গান—'ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড, বিউটিফুল পিপল', 'ভিয়েতনাম' এবং ক্যাট স্টিভেন্সের গাওয়া 'ওয়াইল্ড ওয়ার্ল্ড'-এর কাভার সংস্করণ। বব ডিলান ক্লিফের গাওয়া 'ভিয়েতনাম' গানটিকে 'এযাবৎকালের সেরা প্রতিবাদী গান' বলে আখ্যা দেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি রোলিং স্টোনস, এলভিস কস্টেলো, অ্যানি লেনক্স এবং পল সাইমনের মতো বিশ্বের বহু খ্যাতনামা শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৯৩ সালে 'কুল রানিংস' সিনেমার জন্য তিনি 'আই ক্যান সি ক্লিয়ারলি নাও' গানটি রেকর্ড করেন—যা মুক্তির পরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
জিমি ক্লিফের প্রভাব ও অবদান এতটাই গভীর ছিল যে, তার মৃত্যুর পর জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি ক্লিফকে 'সত্যিকারের সাংস্কৃতিক মহীরুহ' হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, 'তার সংগীত আমাদের জাতির হৃদয়কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছে।'
