‘শোলে’র অদ্ভুতুড়ে জেলার থেকে সেরা কৌতুকাভিনেতা; অভিনয়ে প্রয়াত আসরানি হাসিয়েছিলেন দর্শককেই

ভারতীয় চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা গোবর্ধন আসরানি গোবর্ধন আসরানি ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। এই সপ্তাহে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘ অসুস্থতার পর গেল সোমবার তিনি মারা যান বলে জানান তার ম্যানেজার।
৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা অভিনয় জীবনে আসরানি ৩০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার বেশিরভাগ চরিত্রই ছিল হাস্যরসাত্মক। তবে ১৯৭৫ সালের ব্লকবাস্টার ছবি 'শোলে'-তে এক অদ্ভুতুড়ে জেলার-এর চরিত্রে তার অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা। দর্শকরা আজও তার এই চরিত্রটিকে মনে রেখেছে।
আসমানি নামে পরিচিত এই অভিনেতার পরিবার এক বিবৃতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, 'যিনি সবার মুখে হাসি ফোটাতেন, সেই আসরানি জি আর আমাদের মাঝে নেই। তার চলে যাওয়া হিন্দি সিনেমা এবং আমাদের হৃদয়ের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসরানিকে 'প্রতিভাবান বিনোদনদাতা' এবং 'বহুমুখী শিল্পী' হিসেবে আখ্যায়িত করে এক্স (সাবেক টুইটার) এ লেখেন, 'তার অবিস্মরণীয় অভিনয়গুলির মাধ্যমে তিনি অগণিত মানুষের জীবনে আনন্দ ও হাসি যোগ করেছেন। ভারতীয় সিনেমায় তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'
গোবর্ধন আসরানি ১৯৪১ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ সালে হিন্দি ছবিতে তার আত্মপ্রকাশ। তবে 'শোলে' ছবিতে তার আনাড়ি জেলার চরিত্রটি, যা অ্যাডলফ হিটলারের একটি প্যারোডি হিসেবে তৈরি হয়েছিল, তাকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।

আশির ও নব্বইয়ের দশকে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম দূরদর্শন-এর টিভি শো-গুলিতেও আসরানি ছিলেন এক পরিচিত মুখ। ৮০-র দশকের জনপ্রিয় শো 'নটখট নারদ'-এ তিনি হিন্দু সাধু নারদ মুনির ভূমিকায় অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি কয়েকটি হিন্দি ও গুজরাটি চলচ্চিত্রও পরিচালনা করেছেন।
কর্মজীবনের দীর্ঘ ৫০ বছরে আসরানি প্রতিটি প্রজন্মের বড় বড় অভিনেতা ও পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তার কিছু আইকনিক ছবির মধ্যে রয়েছে 'চুপকে চুপকে' (১৯৭৫), 'পতি পত্নী অউর ওহ' (১৯৭৮) এবং 'বালিকা বধূ' (১৯৭৬)। 'বালিকা বধূ' ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা কৌতুক অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সহকর্মীরা শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সঙ্গে কাজ করার স্মৃতিচারণ করেন। বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার আসরানির সঙ্গে নিজের একটি ছবি শেয়ার করে তার কৌতুক অভিনয়ের সময়ের প্রশংসা করে এক্স (সাবেক টুইটার) এ লেখেন, 'আমার সব কাল্ট ছবি 'হেরা ফেরি' থেকে 'ভাগম ভাগ' থেকে 'দে দানা দান', 'ওয়েলকাম' এবং এখন আমাদের অপ্রকাশিত 'ভুত বাংলা' ও 'হায়ওয়ান'… আমি তার কাছ থেকে অনেক কাজ শিখেছি এবং জেনেছি। আমাদের শিল্পের জন্য এটি এক অপূরণীয় ক্ষতি।'
সোমবার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের উপস্থিতিতে গোবর্ধন আসরানির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।