Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

নরম-গরম-ধরম

একদিন গ্রাম থেকে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের দেশব্যাপী নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ডে জয়ী হয়ে বম্বেতে এলো সে। নাম তার ধর্মেন্দ্র। ফিল্মে কাজ খুঁজতে লাগলো। খেতিখোলা করা শরীর, লোকে সেই দশাসই শরীর দেখে তাকে বলে, 'কুস্তিগীর'; বলে, 'হকি খেলো গে যাও!' (ক্যারিয়ারের পুরো সময়েই জবরদস্ত স্বাস্থ্যের জন্য তাঁর সুনাম ছিল। হৃষিকেশ মুখার্জির মুভি ‘অনুপমা’তে দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধু দেবেন বর্মার সঙ্গে দেখা হতেই দেবেন ধর্মেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- “কবিতা লেখা ছেড়ে দিলি নিশ্চয়ই তবে? এই পালোয়ানের স্বাস্থ্য নিয়ে কবিতা!”)
নরম-গরম-ধরম

ইজেল

সাগুফতা শারমীন তানিয়া
26 November, 2025, 02:20 pm
Last modified: 26 November, 2025, 02:24 pm

Related News

  • শাহরুখ-অমিতাভের চেয়েও বেশি হিট, বলিউডের সবচেয়ে সফল অভিনেতা, তবু কেন ‘সুপারস্টার’ হলেন না ধর্মেন্দ্র
  • বলিউডের আইকনিক 'হি-ম্যান' ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন
  • মোগ্যাম্বো, গব্বর থেকে খিলজি: বলিউডের যে ৮ খলনায়ক ভয়কে পরিণত করেছিলেন তারকাখ্যাতিতে
  • ২৫০০-এর বেশি প্রধান চরিত্রে অভিনয়, জন্ম পাকিস্তানে, এখন বলিউড মাতাচ্ছে তারই চার প্রজন্ম
  • ‘শোলে’র অদ্ভুতুড়ে জেলার থেকে সেরা কৌতুকাভিনেতা; অভিনয়ে প্রয়াত আসরানি হাসিয়েছিলেন দর্শককেই

নরম-গরম-ধরম

একদিন গ্রাম থেকে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের দেশব্যাপী নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ডে জয়ী হয়ে বম্বেতে এলো সে। নাম তার ধর্মেন্দ্র। ফিল্মে কাজ খুঁজতে লাগলো। খেতিখোলা করা শরীর, লোকে সেই দশাসই শরীর দেখে তাকে বলে, 'কুস্তিগীর'; বলে, 'হকি খেলো গে যাও!' (ক্যারিয়ারের পুরো সময়েই জবরদস্ত স্বাস্থ্যের জন্য তাঁর সুনাম ছিল। হৃষিকেশ মুখার্জির মুভি ‘অনুপমা’তে দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধু দেবেন বর্মার সঙ্গে দেখা হতেই দেবেন ধর্মেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- “কবিতা লেখা ছেড়ে দিলি নিশ্চয়ই তবে? এই পালোয়ানের স্বাস্থ্য নিয়ে কবিতা!”)
সাগুফতা শারমীন তানিয়া
26 November, 2025, 02:20 pm
Last modified: 26 November, 2025, 02:24 pm

ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে আমার প্রথম প্রাঞ্জল শৈশবস্মৃতিটির সঙ্গে সত্যজিত রায় জড়িয়ে আছেন। সত্যজিত রায়ের তারিণীখুড়ো গল্প করতে করতে বলেছিলেন- অল্পবয়সে তিনি দেখতে চমৎকার ছিলেন। খুড়োর বালকশ্রোতার দল জিজ্ঞেস করেছিল- "ধর্মেন্দ্রর মতো?" তারিণীখুড়ো তাচ্ছিল্যের গলায় বলেছিলেন- ওরকম "নাশপাতি মার্কা চেহারা" ছিল না তাঁর, মাসলম্যান ছিলেন। ওসব পড়েটড়ে আমি খুঁজে দেখতে গেলাম, ধর্মেন্দ্র আসলে কে? 

তখন তো আর আকাশসংস্কৃতির যুগ নয়, ফিল্মি ম্যাগাজিনই ভরসা- তাও বাড়িতে এলে লুকিয়ে রাখা হয়। দেখলাম- ধর্মেন্দ্রকে তো আমি অনেকবার ভিডিওতে দেখেছি, অমিতাভ বা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে দুষ্টের ধোলাই করতে, 'নৌকর বিবি কা' তে দেখেছি অনিতা রাজের সঙ্গে ধেই ধেই নাচতে। নাকের পাটা ফুলিয়ে রাগতেও পারে আবার পেট ফাটিয়ে হাসাতেও পারে। 

তারিণী চাটুজ্জে যাই বলুন, ধর্মেন্দ্র নিজেও দেহসৌষ্ঠবের জন্য সর্বজনবিদিত ছিলেন, একদিকে 'হি-ম্যান' ছিলেন, আরেকদিকে পর্দার নিদারুণ প্রেমিকপুরুষ। ছয় দশকের ক্যারিয়ারে তিনি কত শত সিনেমার নায়ক হয়েছেন, ব্যক্তিগত-রাজনৈতিক জীবনে-ইন্টারভিউয়ে-টুইটারে কত বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, সেসব নিয়ে আলাপ করার জন্য যথেষ্ট পরিসর এ নয়। আমার সামান্য দেখা থেকেই তাঁকে দেখতে চাই আজ, যখন তিনি মরজগতের উর্ধ্বে।  

লুধিয়ানার এক গ্রামের স্কুলে হেডমাস্টারের ছেলে, সে জীবনের প্রথম সিনেমা দেখলো- দিলীপকুমার কামিনী কৌশলের 'শহীদ', দেখে তাক লেগে গেল তার—কে এঁরা জাদুনগরীর রাজপুত্র-রাজকন্যা! মাইলকে মাইল হেঁটে গিয়ে প্রায় চল্লিশবার দেখে ফেলল সুরাইয়ার মুভি 'দিল্লাগি', নায়িকা সুরাইয়া তার বড় প্রিয়। 

একদিন গ্রাম থেকে ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের দেশব্যাপী নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ডে জয়ী হয়ে বম্বেতে এলো সে। নাম তার ধর্মেন্দ্র। ফিল্মে কাজ খুঁজতে লাগলো। খেতিখোলা করা শরীর, লোকে সেই দশাসই শরীর দেখে তাকে বলে, 'কুস্তিগীর'; বলে, 'হকি খেলো গে যাও!' (ক্যারিয়ারের পুরো সময়েই জবরদস্ত স্বাস্থ্যের জন্য তাঁর সুনাম ছিল। হৃষিকেশ মুখার্জির মুভি 'অনুপমা'তে দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধু দেবেন বর্মার সঙ্গে দেখা হতেই দেবেন ধর্মেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- "কবিতা লেখা ছেড়ে দিলি নিশ্চয়ই তবে? এই পালোয়ানের স্বাস্থ্য নিয়ে কবিতা!")

'দিল ভি তেরা হম ভি তেরে' র (১৯৬০) পর্দাতে অবশেষে বলিষ্ঠ অভিনেতা বলরাজ সাহনির গাঢ় ছায়ার তলায় ভেসে উঠলো ধর্মেন্দ্রর মুখ, ভারী সুন্দর চোখ, উজ্জ্বল হাসিভরা চেহারা, একমাথা চুল, মজবুত স্বাস্থ্য—রণপায়ে চেপে এক আনায় দুটো করে ক্যাভেন্ডার সিগ্রেট বেচছেন, লম্বা লম্বা ডায়লগ চমৎকার উগরে দিচ্ছেন। 

জাহাজডুবিতে প্রেমিকার মৃত্যুসংবাদে বিহ্বল ধর্মেন্দ্র হাহা রবে কাঁদছেন, বলরাজ সাহনি প্রায় ধমকে উঠে সান্ত্বনা দিচ্ছেন- "মর্দলোগ ঘম পী যায়া করতে হ্যাঁয়, রোয়া নেহি করতে!" শাদাকালোর তীক্ষ্ণ-ক্রুর-নিরীক্ষক দৃষ্টিতেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কি সাংঘাতিক সুপুরুষ এই নবাগত যুবক। মুকেশের কন্ঠে লিপ মিলিয়ে গাইছেন মনভাঙানিয়া- "মুঝকো ইস রাত কি তানহায়ি মে আবাজ না দো!" সিনেমাটিতে খানিকটা ডেভিড লীন, খানিকটা ইলিয়া কাজান মিশে আছেন; তবু চেনা যায় একান্তই ভারতীয় সিনেমা সৃষ্টির প্রয়াসকে। 

ভালো অভিনয় সত্ত্বেও বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে পারলো না ধর্মেন্দ্রর প্রথম সিনেমা, এক বছর পর এলো 'শোলা অওর শবনম' (১৯৬১), এবার বক্স অফিসে আলোড়ন তুললেন তিনি। ক্যায়ফি আজমীর কলম, খৈয়ামের সুর, মুহম্মদ রফির মাখন-মোলায়েম গলা আর তাঁর উদাস-মধুর সৌন্দর্য সিনেমায় অমর করে দিল সেই সিনেমার গান- "জানে কেয়া ঢুঁঢতে রহতে হ্যাঁয় ইয়ে আখেঁ মুঝমে।" 

মীনাকুমারীর সঙ্গে 'কাজল', 'পুর্নিমা', 'ম্যায় ভি লাড়কি হুঁ' একে একে ছয়টি সিনেমা করলেন, ছড়িয়ে গেল তাঁদের প্রেমকাহিনীর গুজব (মীনাকুমারীর মৃত্যুর পর নার্গিস একটি মর্মস্পর্শী চিঠি লিখেছিলেন- তাতে জানা যায়, এ নিছক গুজব ছিল না, সত্যিই মীনাকুমারী ধর্মেন্দ্রকে ভালোবেসেছিলেন। এই পরিণতিহীন প্রেমের অভিঘাতে মীনাকুমারী খুব ভেঙে পড়েছিলেন)। 

মীনাকুমারীর ভূমিকা তাঁর জীবনে খানিকটা ক্যারি গ্রান্টের জীবনে মী ওয়েস্টের মতন, মীনাকুমারীর সঙ্গে তাঁর 'ফুল অওর পাত্থর' ধরেই নায়ক হিসেবে প্রথম ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড নমিনেশন এসেছিল। মালা সিনহার সঙ্গে 'আনপড়' করলেন ধর্মেন্দ্র, মধুবালার সঙ্গে 'বয়ফ্রেন্ড', সায়রা বানুর সঙ্গে 'শাদী', সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে 'বেগানা' এবং 'আপকে পরছাইয়াঁ'। 

নুতনের সঙ্গে এলেন স্বাধীনতাপূর্ব ভারতবর্ষের একটি জেলখানার ডাক্তার হিসেবে- জরাসন্ধের 'তামসী' উপন্যাস অবলম্বনে বিমল রায়ের 'বন্দিনী' সিনেমায়। ওয়ার্কশেডে জেনানা কয়েদী সুখিয়া আর জুবেদারা জেলখানায় কঁকিয়ে কঁকিয়ে যব ভাঙে আর নাইওরের গীত গায়- "আবকে বরষ ভেজো ভইয়া কো বাবুল!" জেলের প্রকাণ্ড প্রাকারের ওপর থেকে দাঁড়িয়ে পাহারাওয়ালা সান্ত্রী হাঁকে- "সব ঠিক হ্যাঁয়!" শুধু খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তা এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠবাসিনী বন্দিনী জানে- সব ঠিক নহি হ্যাঁয়। সে অক্লেশে অন্য কয়েদীর রক্তবমি সাফ করে, কারো কুকথায় কান দেয় না, উন্নতমানের খোরাকি কিংবা মনোযোগ বরাদ্দ হলে সে বিচলিত হয়, অদ্ভুত এক যাবজ্জীবন সাজা সে নিজের শরীর-মনকে দিয়ে রেখেছে। 

এই যোগিনীর স্বভাবে মুগ্ধ হলেন ডাক্তার, এক অসম অসম্ভব প্রেমের গল্পের সূচনা হতে চললো। বক্স অফিসে 'বন্দিনী' কুসুমকুসুম হিট হলেও সৌম্যদর্শন, আধুনিক, পরিণতবুদ্ধি অথচ সহানুভূতিশীল এই ডাক্তার চরিত্রটিকে ধর্মেন্দ্র অমর করে দিলেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই জানিয়ে রাখলেন- তিনি বর্ণিল ও জটিল চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম। 

তিন বছর পর জরাসন্ধের উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা সিনেমা 'পাড়ি'তেও অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র, চরিত্রের নাম ঘনশ্যাম ঢালী। সলিল চৌধুরীর সুর দেয়া গানে লিপ দিয়েছিলেন- "বন্ধু রে, কেমন করে মনের কথা কই তারে।" সেখানেও তিনি মহিলা কয়েদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন, এবার আন্দামানের সেলুলার জেলে। 

পরে আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস অবলম্বনে 'চৈতালী' নামের একটি মুভিতেও ধর্মেন্দ্র অভিনয় করেছিলেন। আলেকজান্ডার দ্যুমা, হ্যাডলি চেজ এবং টমাস হার্ডির উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা হয়েছে, সেসবে অভিনয় করেছেন তিনি। নেগেটিভ রোল করেছিলেন 'আয়ি মিলন কি বেলা'তে। যদিও ছবি সুপারহিট, তবু এরপর থেকে নেগেটিভ রোল নেওয়া থেকে বিরত থেকেছিলেন—ডাকু হলেও এমন ডাকু হতেন যার হৃদয় হীরের। 

'হক্বিকত'-এ ইন্দোচীন যুদ্ধের পটভূমিতে যোদ্ধার ভূমিকায় অভিনয় করলেন। একসময় উপন্যাসভিত্তিক জটিল-মনস্তাত্ত্বিক গল্প থেকে যেন কিছুটা সরে গেলেন, অ্যাকশন হিরো হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। কামিজ-পিরান-শার্ট খুলে ফেললেন। ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা চরিত্রেই স্থায়ী হয়ে গেলেন। 

কমেডিতে তিনি চিরদিন দুর্দান্ত, তাঁর কমেডির প্রতিভাকে প্রথম ব্যবহার করেছিলেন হৃষিকেশ মুখার্জি। 'শোলে'র বীরুকে কে ভুলতে পারে, অত ডার্ক চিত্রনাট্যে যে একটি সোনালি কিনারা? কিংবা 'সীতা অওর গীতা'তে ভাটিখানায় যাবার পথে তোতলানো বন্ধুকে বগলতলে সাপটে নিয়ে নিচুগলায় বলা সেই- "ডিম পারবি নাকি রে?" 'গুড্ডি'র কিশোরী জয়া ভাদুড়ি কি আর এমনিতেই দিনরাত ভাবতো সে ধর্মেন্দ্রকে জীবনসঙ্গী করবে! 

'ছোটিসি বাত'-এ অমল পালেকর সিনেমার পর্দায় নায়ক-নায়িকার দৃশ্যে নিজের প্রেমিকাকে ভেবে নিতেই প্রেমিকার পাশে ধর্মেন্দ্রকে দেখে চমকে উঠেছিল! অসংখ্য ক্যামিও রোলে উপস্থিত হয়েছেন তিনি, সামান্য সময় তাঁকে দেখে উল্লসিত হয়েছে দর্শক। অশোককুমার-রাজেন্দ্রকুমার-দিলীপকুমার-মনোজকুমার-সঞ্জীবকুমার…কার সঙ্গে না তিনি সহ-অভিনেতা বা নায়ক ছিলেন! নায়ক হয়েছেন মীনাকুমারী- নুতন- কুমকুমের, এরপর সায়রা বানু- বৈজয়ন্তীমালা- নন্দা- সাধনা- আশা পারেখ- মালা সিনহা- ওয়াহিদার। এরপর রাখি- হেমা মালিনী- মুমতাজ- রেখা- রীনা রয়- শাবানা আজমী- জিনাত আমান- পারভিন ববি- অনিতা রাজ…কে নয়! 

বাংলার সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, জয়া ভাদুড়ি, তনুজা, মৌসুমী চ্যাটার্জির বিপরীতেও নায়ক হয়েছিলেন। দক্ষিণের জয়ললিতার নায়িকা হিসেবে একমাত্র বলিউড ফিল্মের নায়ক ছিলেন ধর্মেন্দ্র। তাঁর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সিনেমার নায়িকা তাঁর জীবননায়িকা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী হেমা মালিনী। 

শোলে সিনেমার দৃশ্য।

থামের মতো স্বাস্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে এমনিতে ধর্মেন্দ্রর গলার আওয়াজ ছিল খানিকটা ঠান্ডা লাগা, মোটা। সেই গলাকে তিনি কমেডিতে চমৎকার চিরে নিতেন, প্রেমের দৃশ্যে উদাস বা খোশামুদে করে নিতেন, ডাক্তার-বটানির প্রফেসর-কবি-দাগী আসামি-ড্রাইভার-বক্সার-সার্কাসের বাজিকর সবই হতেন। গলার মড্যুলেশন এমন ছিল যে, হিন্দি সিনেমার খাজা সংলাপগুলোও তাঁর গলায় দিব্যি মানিয়ে যেত। চেহারা আর স্ক্রিন প্রেজেন্সও হয়তো এর জন্য দায়ী। 

'দ্য সিলভার চ্যালিস' দেখতে গিয়ে তরুণ পল নিউম্যানকে রেখে রাবিশ সংলাপের দিকে কে ভ্রুক্ষেপ করেছিল বলুন! শশীকলা একটি ঠাট্টার সংলাপে ধর্মেন্দ্রকে বলেছিলেন- "মুখহাত ধুয়ে খেতে আসুন। অবশ্য আপনি মুখ ধোবেন কি, আপনাকে দেখবার পর আমারই মুখ ধুয়ে আসতে ইচ্ছে করছে!" ('অনুপমা') 

ধর্মেন্দ্রর লিপে কত শত শত প্রিয় গান আমাদের! রফির গলায়- "আজ মওসম বড়া বেঈমান হ্যাঁয়" কিংবা "ঝিলমিল সিতারোঁকা আঙ্গন হোগা"। কিশোরকুমারের- "হাম বেওয়াফা হরগিজ না থে"। মহেন্দ্র কাপুরের গলায়- "বদল যায়ে আগার মালি, চমন হোতা নহি খালি"। এবং হেমন্তর গলায়- "তুম পুকার লো তুমহারা ইন্তেজার হ্যাঁয়"। 

পর্দার লোকটিকে দেখলেই মনে হতো এসব যেন তাঁর হৃদয়, মন, দিলখোলা হাসি, সিধে স্বভাব থেকেই উৎসারিত গান। চরিত্রের সঙ্গে যথেষ্ট মিলেগুলে না গেলে কি আর অমন হয়? 

কিছুদিন আগে ধর্মেন্দ্রর 'সত্যকাম' দেখছিলাম; নারায়ণ সান্যালের উপন্যাস অবলম্বনে হৃষিকেশ মুখার্জির সিনেমা। নায়ক সত্যপ্রিয়, নিজের নামকে সার্থক করেছে সে, সত্যভাষণ তার জীবনের শর্ত। সে মিথ্যে বলতে তো জানেই না, এমনকি সত্যকে লুকোতেও জানে না—যে সত্য গিলতে গিয়ে তাকে নীলকন্ঠ হতে হয় সেই সত্যকেও নয়। 

সত্যপ্রিয় ঘটনাচক্রে বিয়ে করে 'বেশ্যা'র ধর্ষিত কন্যাকে। ধর্ষণের ফসল হিসেবে একটি টুকটুকে ছেলে জন্মায়। সত্যপ্রিয় তাকে পিতার পরিচয় দেয়, কিন্তু জন্মপরিচয় কোথাও লুকোয় না—না প্রিয় বন্ধুর কাছে, না তার একমাত্র জ্ঞাতি দাদাজির কাছে। ধর্মান্ধ সত্যান্ধ একটি বংশে জন্ম সত্যপ্রিয়র, দাদাজি এ বিয়ে এবং এই সন্তানকে মেনে নেননি। সত্য বলতে গিয়ে আর সৎ পথে চলতে গিয়ে সত্যপ্রিয় পদে পদে ঠোকর খায়, তবু স্বভাব যায় না। এ জীবন মানুষকে টেনে নিয়ে যায় নিঃস্বতার পথে। সেও তাই, কপর্দকশূন্য। 

সরকারি হাসপাতালের বেডে মৃত্যুপথযাত্রী সত্যপ্রিয়র তখন জবান বন্ধ হয়ে গেছে, সমস্ত জীবনের কঠোর সত্যসাধনের শেষমুহূর্তে নিঃস্ব স্ত্রী তাকে অনুরোধ করে একটি অসাধু প্রকল্পে স্বাক্ষর করার জন্য। সত্যপ্রিয়র সঞ্চয় নেই, বাড়িঘর নেই, তার মৃত্যুতে অসহায়া স্ত্রী পুত্রের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ওই সিগনেচারটুকু করলে হাজার পঁচিশেক টাকা পাওয়া যাবে, তা দিয়ে সত্যপ্রিয়র অবর্তমানে সামান্য ব্যবসা শুরু করতে পারবে তার স্ত্রী। হতভম্ব সত্যপ্রিয় সেই কাগজ হাতে নেয়। পরে যখন সে খবর দিয়ে আনায় স্ত্রীকে, হাসপাতালের কক্ষে একান্তে সে সাক্ষরিত কাগজটি দেয়, স্ত্রী অবিশ্বাসের চোখে দেখে—স্পষ্ট অক্ষরে সত্যপ্রিয় তার সাক্ষর দিয়ে গেছে, সাদা কাগজে জ্বলজ্বল করছে স্বামীর জীবনের অন্তিম পরাজয়। 

স্ত্রী সইতে না পেরে সেই পর্চা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে, দেখে দুই সজল বিপুল চোখ ভরা প্রেম নিয়ে, জয় নিয়ে সত্যপ্রিয় তার দিকে চেয়ে আছে। তারা যে অসবর্ণ ছিল না, মেয়েটি যে আজীবন তার সাধনসঙ্গিনী ছিল, ওইটুকুই তো তার প্রমাণ। 

স্ত্রী জিজ্ঞেস করে- "তুমি জানতে আমি কাগজটা ছিঁড়ে ফেলবো? বলো, জানতে না?" সত্যপ্রিয় তখন অসুস্থতার কারণে বাকরুদ্ধ, সে শুধু আকুল হাত বাড়িয়ে স্ত্রীকে কাছে ডাকে। সিনেমার মৃত্যুদৃশ্যে এমন বিপুল সজল চাউনি আর এমন পরিপূর্ণ আলিঙ্গন কম দেখেছি। এই দৃশ্যে ধর্মেন্দ্রর অভিনয় মর্মঘাতী, নিঃসন্দেহে তাঁর অভিনয়জীবনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। 

তবু কেন যেন ঠিক রাজেশ খান্না বা অমিতাভ বচ্চনের উচ্চতায় তাঁকে একমেব হিসেবে ধরা হলো না। ধর্মেন্দ্র এ নিয়ে খুব মাথা ঘামিয়েছিলেন কি? সিনেমায় তাঁকে দেখলে মনে হতো, আপন কমনীয়তায়, কর্মে, প্রতিভায়, উদ্দীপনায় তিনি আপনি উল্লসিত। তিনি নিজেই এমন নায়ক—যিনি শ্বশুরবাড়ির ড্রাইভার সেজে শুদ্ধতম হিন্দিতে কথা বলতে পারেন, স্নিগ্ধ প্রেমিকের ভূমিকায় মানুষকে উন্মাতাল করে রাখতে পারেন, মাতালের ভূমিকায় চেরা গলায় কথা বলে গোমড়ামুখোকেও হাসিয়ে দিতে পারেন, আবার দুর্জনের দুষ্কর্মের বদলা নিতে জ্বলতে জ্বলতে গলতে গলতে এগিয়ে আসতে পারেন। 

যেমন অনায়াসে জরিদার ধুতি পরতেন, তেমনি অবলীলায় পরে ফেলতেন একফেরতা চাদর–পাঞ্জাবী, হাবশি ক্রীতদাসের নেংটি, ট্রাপিজ আর্টিস্টের কস্টিউম বা রোমান গ্ল্যাডিয়েটরের টিউনিক। 

বলিউড তারুণ্যের জয়গান গেয়ে এসেছে চিরদিন। ক্যারিয়ারের শেষপর্যায়ে বয়স্ক পোড়-খাওয়া অভিনেতা-নেত্রীরা যে অসামান্য সুন্দর অভিনয় উপহার দিয়ে যেতে পারেন, তার দিকে বলিউড দৃকপাত করলে হয়তো ধর্মেন্দ্রর অভিনয়ের আরো দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারতো। সিনেমায় চিরদিন কুরুসভার ভীমের মতো ব্যবহৃত হলেন তিনি—বলশালী, মদমত্ত, প্রতিহিংসাপরায়ণ, লাউড (সিনেমার নামগুলো দেখুন- 'ভুখা শের', 'হিম্মতওয়ার', 'জুলম-সিতম', 'পাপ কি আঁধি')! অথচ প্রথম সিনেমা থেকেই তিনি দেখিয়ে এসেছেন তিনি কৃষ্ণস্বরূপ—তাঁর ভূমিকায়, চাউনিতে, লীলায়, ডেলিভারিতে অসংখ্য পরত রয়েছে। 

ধর্মেন্দ্র কতখানি বিস্তৃত আর কতটুকু স্বতন্ত্র তার সাক্ষী একটি দুপুরের কথা আজ আমার মনে পড়লো। তখন আমি বিলাইতি জেলখানায় গৃহায়নপ্রকল্পে কাজ করি। জেলখানার একের পর এক তালাবদ্ধ দরজা খুলতে খুলতে ঢুকছি, ফরেন ন্যাশনাল প্রিজনের একটি ওয়ার্ড থেকে কেউ চেঁচিয়ে উঠলো- "কুত্তে! ম্যায় তেরা খুন পী যাউঙ্গা!" প্রত্যুত্তরে কে যেন অবিকল ধর্মেন্দ্রর গলায় ঠা-ঠা করে হেসে উঠলো। কত মানুষ ওইসব জেলখানায় ধুঁকছে আশায়-নিরাশায়! যুদ্ধপীড়িত দেশে ফেরত যেতে বাধ্য হবে নাকি মিশে যেতে পারবে বিলেতের মানুষের ভিড়ে? অকথ্য অনিশ্চয়তার পটভূমিতে ধর্মেন্দ্রর সেই চিৎকৃত বুলি! যেন মৌসুমী বাতাসের চেনা ঘ্রাণ। 

পরবাসে কেউ নিয়ে আসে নিজভূমের ধুলিমাটি, তেমনি করে কেউ বয়ে এনেছে প্রিয় সংলাপ-স্মৃতি, সব বৈরিতার বিপরীতে বি-গ্রেডের রমরমা সিনেমায় যে নায়ক অসম্ভবের গান গায় আর এককভাবে জিতে যায় সেই জয়ের আবাহন হয়তো। 


ছবি: সংগৃহীত
 

Related Topics

টপ নিউজ

ধর্মেন্দ্র / বলিউড / অভিনেতা / কিংবদন্তি অভিনেতা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমোদন পেল বাংলালিংক
    ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমোদন পেল বাংলালিংক
  • ছবি: স্ক্রিনগ্র্যাব
    ২০% সচিবালয় ভাতার দাবিতে অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
  • বগুড়া-৬ আসনে এনসিপির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ওয়াকি। ছবি: টিবিএস
    বগুড়ায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এনসিপির প্রার্থী কে এই ওয়াকি?
  • ছবি: চিফ অ্যাডভাইজর জিওবি
    উপদেষ্টা পরিষদে কাজ করা আমার জীবনের এক গৌরবময় অভিজ্ঞতা: পদত্যাগপত্রে আসিফ মাহমুদ
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়াল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার
    বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়াল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
    ‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও

Related News

  • শাহরুখ-অমিতাভের চেয়েও বেশি হিট, বলিউডের সবচেয়ে সফল অভিনেতা, তবু কেন ‘সুপারস্টার’ হলেন না ধর্মেন্দ্র
  • বলিউডের আইকনিক 'হি-ম্যান' ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন
  • মোগ্যাম্বো, গব্বর থেকে খিলজি: বলিউডের যে ৮ খলনায়ক ভয়কে পরিণত করেছিলেন তারকাখ্যাতিতে
  • ২৫০০-এর বেশি প্রধান চরিত্রে অভিনয়, জন্ম পাকিস্তানে, এখন বলিউড মাতাচ্ছে তারই চার প্রজন্ম
  • ‘শোলে’র অদ্ভুতুড়ে জেলার থেকে সেরা কৌতুকাভিনেতা; অভিনয়ে প্রয়াত আসরানি হাসিয়েছিলেন দর্শককেই

Most Read

1
ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমোদন পেল বাংলালিংক
অর্থনীতি

ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালুর অনুমোদন পেল বাংলালিংক

2
ছবি: স্ক্রিনগ্র্যাব
বাংলাদেশ

২০% সচিবালয় ভাতার দাবিতে অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

3
বগুড়া-৬ আসনে এনসিপির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ওয়াকি। ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

বগুড়ায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এনসিপির প্রার্থী কে এই ওয়াকি?

4
ছবি: চিফ অ্যাডভাইজর জিওবি
বাংলাদেশ

উপদেষ্টা পরিষদে কাজ করা আমার জীবনের এক গৌরবময় অভিজ্ঞতা: পদত্যাগপত্রে আসিফ মাহমুদ

5
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়াল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার
অর্থনীতি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়াল ২৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার

6
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

‘অপচয়মূলক’ ক্যালিব্রি বাদ দিয়ে কূটনীতিকদের টাইমস নিউ রোমান ফন্টে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন রুবিও

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab