আমিরকে ‘লগান’ বানাতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু প্রথম কাট দেখেই হতবাক হয়েছিলাম: জাভেদ আখতার

প্রবীণ গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার জানিয়েছেন, তিনি আমির খানকে 'লগান' সিনেমা না বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ছবির প্রথম কাট দেখার পরই তিনি একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
বলিউড সুপারস্টার আমির খানের জন্মদিন উপলক্ষে তার ভক্ত-অনুরাগীদের জন্য আসছে বিশেষ চমক। আগামী ১৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত মিস্টার পারফেকশনিস্টখ্যাত এই অভিনেতা অভিনীত বিভিন্ন ধরনের সিনেমা দেখানো হবে ভারতের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে।
এই বিশেষ উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে 'আমির খান: সিনেমার জাদুকর'। রোববার (১০মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দিয়েছেন জাভেদ আখতার।
এই অনুষ্ঠানে জাভেদ জানিয়েছেন, আসন্ন ৬০তম জন্মদিনকে ঘিরে দর্শকদের জন্য রয়েছে বিশেষ চমক। দেশের বিভিন্ন মাল্টিপ্লেক্সে আমির খানের বাছাই করা হিট ছবিগুলো দেখানো হবে।
এসময় আমির খান সম্পর্কে বলতে গিয়ে জাভেদ আখতার বলেন, 'আমির খান: সিনেমার জাদুকর'!
এসময়ই স্মৃতিচারণ করে জাভেদ আখতার বলেন, 'জানি আমি বড় ঝুঁকি নিচ্ছি। তবে আমি আগেও বড় ঝুঁকি নিয়েছি এবং সঠিক প্রমাণিত হয়েছি। আমিই বলেছিলাম আমির সুপারস্টার হবে, অমিতাভ একের পর এক ফ্লপ দেওয়ার পরও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম যে তিনি সুপারস্টার হবেন। আজ আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, আমির যে ছবিগুলো নির্মাণ করবে, সেগুলো সব ধরনের দর্শকের সঙ্গে একটি গভীর কানেকশন তৈরি করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মনমোহন, সালিম জাভেদ, যশ চোপড়া সবাই একটার পর এক হিট দিয়েছেন। কিন্তু তারা সবাই এক ধরনের সিনেমা বানিয়েছেন। তারা কখনো ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সিনেমায় হিট দেননি। নাসির হলেন সবচেয়ে আন্ডাররেটেডদের একজন। নাসিরের কারণে দেব আনন্দ ও শাম্মী কাপুর দেব আনন্দ ও শাম্মী কাপুর হয়ে ওঠেন। চার্মিং হিরো, হাস্যরস, ফ্লার্ট- এসব বৈশিষ্ট্য প্রথমবার নাসিরই দেখিয়েছিল।'
'লগান'-এর বিরোধিতা প্রসঙ্গে জাভেদ বলেন, ''আমিরের জাদু হলো সে অপ্রথাগত সিনেমায় বিনিয়োগ করে। আমি ওকে 'লগান' বানাতে বারণ করেছিলাম। তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কী কী ভুল ছিল তার একটি তালিকা বানিয়েছিলাম আমি। সেও একটি তালিকা তৈরি করে এবং ভুলগুলো শুধরে নিয়ে সেই অনুযায়ী স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলল।''
তিনি বলেন, ''আমার হিসেবে ভুলগুলো ছিল-গ্রামের নায়ক, ধুতি পরা নায়ক, ক্রিকেট নিয়ে সিনেমা, গানের মধ্যে শুধু বৃষ্টি হবে কি হবে না তা নিয়ে কথা ইত্যাদি। তারপর হাল ছেড়ে দিলাম। আমি ভাবলাম, 'সিনেমা তো আমিরকেই চালাতে হবে'। কিন্তু যখন আমি প্রথম দৃশ্য দেখি, আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।''
জাভেদ সিনেমার প্রতি আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে বলেন, ''মানুষ সাধারণত 'তারে জামিন পার' বানায় না; 'দঙ্গল'-এ মানুষ কাজ করে না; 'রং দে বাসন্তী'-তে আমির এক কোণে বসে থেকে অন্য অভিনেতাদেরকে মূল কেন্দ্রে অভিনয়ের সুযোগ দিচ্ছিলেন।''
তিনি আমিরের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং অনন্য চরিত্র ও গল্পগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখার ক্ষমতার কথাও তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ''শুধু আমিরই এই চরিত্র এবং গল্পগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখতে পারতেন। আমির আশুতোষের সঙ্গে এই ছবি করেছিলেন, যার সঙ্গে তার আগের ছবি ফ্লপ হয়েছিল। নতুন পরিচালক ফারহান এসে তিন নায়কের ছবির প্রস্তাব দিলেন, তিনি তাতেই অভিনয় করলেন। কে দঙ্গলে অভিনয় করত? এমন এক বৃদ্ধের চরিত্র, যে তার মেয়ের কাছে কুস্তিতে হারছে। সব অভিনেতাই হিট পরিচালকদের ছবিতে কাজ করেন। ব্যতিক্রমী শুধু আমিরই। তিনি একমাত্র ঝুঁকি নিয়ে সব কাজ করতে পারেন।"
আমিরের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করে জাভেদ বলেন, ''আমিরের জন্ম ১৯৬৫ সালে, আমি বলিউডে যাত্রা শুরু করি ১৯৬৫ সালে।''
তিনি জানান, নাসির হুসেনের জন্য পাঁচগনিতে 'ফারিয়াজ' ছবি লিখছিলেন তিনি। সেসময় তিনি আমিরকে দেখেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই নাসিরকে বলেন, ও একজন তারকা, একটি রোমান্টিক ছবি দিয়ে ওর ক্যারিয়ার শুরু করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, 'আমিরের প্রযোজিত প্রথম ছবি আমার লেখা। আমার ছেলের প্রথম ছবি ছিল আমিরের সঙ্গেই।'