৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ: পিকে হালদারসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক তানজির আহমেদ সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, দিয়া শিপিং লিমিটেড নামে দেখানো প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবে ভুয়া এবং বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। দিয়া শিপিং লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবপ্রসাদ ব্যানার্জি ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বলে এফএএস (এফএএস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে ছয় বছর মেয়াদি ৪৪ কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণের আবেদন করেন।
ওই ঋণের বিপরীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের খালিশাজানি মৌজায় ৩৩২ শতক জমি জামানত হিসেবে দেখানো হয়। ঋণ অনুমোদনের আগে বি.ডি.এস অ্যাডজাস্টার্স নামের একটি সার্ভে প্রতিষ্ঠান জমিটির বাজারমূল্য ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ফোর্সড ভ্যালু ১০ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে।
তবে পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ একই জমির মূল্য মৃধা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড মাত্র ৮০ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ফোর্সড ভ্যালু ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে। এতে জামানতের মূল্য নির্ধারণে গুরুতর অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, কোনো ধরনের যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই কেবল গ্রাহকের দেওয়া কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঋণ প্রস্তাব তৈরি করেন এফএএস ফাইন্যান্সের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল শাহরিয়ার।
পরে ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের ১৬৩তম সভায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা উপস্থিত থেকে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
তদন্তে দেখা যায়, অনুমোদিত ঋণের মধ্যে ৪২ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি চেকের মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বনশ্রী শাখায় রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে বিভিন্ন হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়।
অবশিষ্ট ২ কোটি টাকা সাউথইস্ট ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের মাধ্যমে দিয়া অয়েল লিমিটেড, ইটা অ্যান্ড টাইলস লিমিটেড এবং এমএসটি মেরিন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেডার্স লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, ঋণের নামে উত্তোলিত এই অর্থ পিকে হালদার গোষ্ঠী ধাপে ধাপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে এবং অর্থের উৎস ও অবস্থান গোপন করে পাচার করে।
এই ঘটনায় দিয়া শিপিং লিমিটেডের মালিকপক্ষ, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পরিচালক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক ও একটি সার্ভে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
