কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের আগের রাতজুড়ে বোমা বানান পরিচালক আল আমিন: পুলিশ
কেরানীগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় গত শুক্রবারের (২৬ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বিস্ফোরণের আগে সারা রাত জেগে হাতে তৈরি শক্তিশালী বোমা (আইইডি) তৈরি করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শেখ আল আমিন। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি আদালতকে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকার উম্মুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় গতকাল রিমান্ড শুনানিকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, বিস্ফোরণের আগের রাতে আল আমিন নিজেই ওই মাদ্রাসায় বোমাগুলো তৈরি করেছিলেন। বিস্ফোরণের পর থেকে আল আমিন পলাতক থাকলেও এই মামলায় অন্য ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আদালত এই ছয় আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শুনানিকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের 'জঙ্গি' হিসেবে উল্লেখ করেন।
মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় করা এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো এবং জানমালের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি করা হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে।
পুলিশের দাবি, আল আমিন এর আগেও উগ্রবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ফতুল্লা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় নব্য জেএমবি-র সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তিনি কারাবাসও করেছিলেন।
সম্প্রতি আল আমিন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তবে সেখানে তিনি নিজের আগের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য গোপন করেন বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার সকাল ১০টার পর ওই মাদ্রাসায় এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পর আল আমিন তার আহত স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে যান। তবে তাদের সেখানে রেখে তিনি পালিয়ে যান।
ঘটনাস্থল ও পরবর্তী অভিযানে পুলিশ বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—২টি হাতে তৈরি বোমা (আইইডি), ৫টি বৈদ্যুতিক বোমাসদৃশ যন্ত্র, ৩৯৪ লিটার তরল রাসায়নিক, ২৭ কেজি পাউডারজাতীয় পদার্থ, লোহার বল, তারযুক্ত পেরেক এবং দুটি শটগানের কার্তুজ। এ ছাড়া একটি টাকা গণনার মেশিন, হ্যান্ডকাফ, কম্পিউটার, মোটরসাইকেল এবং কিছু ধর্মীয় ও 'জিহাদি' বই জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) পুলিশ আল আমিনের স্ত্রী আসিয়া বেগম (২৮), তার ননদ ইয়াসমিন আক্তার (৩০) এবং আসমানী খাতুন ওরফে আসমাকে (৩৪) গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা ও বাগেরহাট থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন—শাহীন ওরফে আবু বকর ওরফে মুসা ওরফে দিবা সুলতান (৩২), আমিনুর ওরফে দর্জি আমিন (৫০) এবং শফিয়ার রহমান ফকির (৩৬)।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার হওয়া এই তিন ব্যক্তি নিয়মিত কেরানীগঞ্জের ওই মাদ্রাসায় যাতায়াত করতেন। তিনি বলেন, 'শাহীনের কাছ থেকে কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে এবং আমিনুর ও শফিয়ারের মোবাইল ফোনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।'
তবে গ্রেপ্তারকৃতরা কোনো নির্দিষ্ট জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কি না, সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। আল আমিন 'জঙ্গি' কি না—এমন সরাসরি প্রশ্নের উত্তরে এসপি বলেন, তিনি অতীতে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং জেল খেটেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার সাত আসামির মধ্যে ছয়জন বর্তমানে হেফাজতে রয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত শেখ আল আমিনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
